চীনকে টেক্কা দিয়ে রাশিয়ার জ্বালানির প্রধান খেলোয়াড় এখন ভারত
রাশিয়ার তেলের বাজারে একসময়ের আধিপত্য বিস্তারকারী চীনকে টেক্কা দিয়ে মস্কো থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে ভারত।
ইউক্রেন আগ্রাসনের ফলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বদলে গেছে বৈশ্বিক তেলের বাণিজ্য প্রবাহ। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই কম দামে তেল কিনছে ভারত।
রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে একসময় চীনের আধিপত্য ছিল সেই ইএসপিও ক্রুড তেলের রেকর্ড সংখ্যক চালান আমদানি করছে দিল্লি।
ইএসপিও নামে পরিচিত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী ছয়টি জাহাজ আগস্টে ভারতের শোধনাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাশিয়ার তেলের দাম কমার পর এ মাসেই ভারতে সর্বোচ্চ সংখ্যক কার্গো যাচ্ছে, যা মাসিক চালানের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।
বৈশ্বিক কার্গো প্রবাহের পরিসংখ্যানকারী প্রতিষ্ঠান ভর্টেক্সা লিমিটেডের বিশ্লেষক এমা লি বলেন, 'ইএসপিও ক্রুড এখন ভারতে নিয়মিত রপ্তানি করা হচ্ছে। অথচ ভারত কিন্তু সবসময় এটা নিতে আগ্রহী ছিল না। যাত্রাপথ দীর্ঘ হলেও যতদিন দাম আকর্ষণীয় থাকবে এবং সত্যিকারের বাণিজ্য অবরোধ আরোপিত না হবে, ততদিন ভারতে এই তেলের প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।'
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর ভারত রাশিয়ার জ্বালানির প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছে। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাতিল করা তেলের চুক্তির কারণে বাড়তি তেলগুলো তারা স্বল্পখরচে কিনছে। অপরিশোধিত তেলের লক্ষ লক্ষ ব্যারেল তেল ভারতে যাচ্ছে।
তেলের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশটি প্রথমে উরাল ক্রুডের আমদানি বাড়ায় যা রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসে। কিন্তু এখন ভারত ইএসপিও তেলের জন্যও চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। ইএসপিও আসে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে। চীন প্রধানত এখান থেকেই তেল নিয়ে থাকে।
ভারত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কিনে থাকলেও ইএসপিও-র দাম মধ্যপ্রাচ্যের তেলের তুলনায় সস্তা। সম্ভবত সৌদি আরব ও আবু ধাবি থেকে ভারত আগে যে তেল কিনত তার অনেকটাই এখন রাশিয়ার থেকে নিবে ভারত।
এছাড়া চীনের সিনোপেক সম্প্রতি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কিছুটা কমানোয় ভারতীয় ক্রেতারা সেই সুযোগও লুফে নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইএসপিওর আগস্টের চালান জুলাইয়ের থেকে তাড়াতাড়ি যাচ্ছে। এর আগে পাঁচটি কার্গো ভাদিনার, সিক্কা, পারাদীপ ও মুন্দ্রা বন্দরে গিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনসহ বেসরকারি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং নায়ারা এনার্জি লিমিটেড এই টার্মিনালগুলোর কাছাকাছি পরিশোধন প্ল্যান্ট পরিচালনা করে।
চলতি বছরের আগ অবধি ভারত রাশিয়ার তেল নিয়ে তেমন একটা আগ্রহী ছিল না। ইএসপিও তেলগুলো কোজমিনো থেকে চালান দেওয়া হয়। ফলে এক দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ভারতে আসে তারা। কিন্তু কার্গোগুলোর আকার মাত্র এক লাখ টন হওয়ার ভারত মোটা পরিবহন খরচ দিয়ে ছোট আকারের কার্গো আনতে চাইছিল না। উত্তর এশিয়ার দেশ চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান প্রতিমাসে এখানকার ৩০-৩৫টি চালানের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ