মন্দার আশঙ্কায় ফেব্রুয়ারির পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় দরপতন

আন্তর্জাতিক

টিবিএস রিপোর্ট
06 August, 2022, 07:00 pm
Last modified: 06 August, 2022, 07:15 pm
এর আগে তেল উৎপাদক ২৩ দেশের জোট ওপেক প্লাস সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক মাত্র ১ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮২ সালের পর থেকে ওপেক এত স্বল্প উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত খুব কমই নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির খবরে শুক্রবার কিছুটা বেড়েছিল জ্বালানি তেলের মূল্য। আন্তর্জাতিক বাজারে অবশ্য জ্বালানি তেলের শেষটা ভালো হয়নি; সপ্তাহ শেষ করেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের পর সবচেয়ে কম দরে। নেপথ্যে ছিল- বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসা মন্দার ভয়।

লাইট ক্রুডের অন্যতম সূচক ব্রেন্ট এর মূল্য শনিবার নেমেছে ৯৪.৯২ ডলার প্রতিব্যারেলে, শুক্রবারের চেয়ে যা ১১ শতাংশ কমেছে। আমেরিকান মিশ্র ক্রুড- ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট সূচক শনিবার নাগাদ ৮ শতাংশ দর হারিয়েছে।

আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এই মুহূর্তে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশা করেননি কেউই– কিন্তু গত জুলাইয়ের তথ্য সবাইকে অবাক করেছে। এসময়ে কৃষি ছাড়া অন্যান্য খাতে চাকুরি জুটেছে ৫ লাখ ২৮ হাজার জনের। ফ্রেব্রুয়ারির পর মার্কিন শ্রম বিভাগের জানানো এটাই সবচেয়ে বেশি চাকুরি হওয়ার তথ্য।

এই সংবাদ (শনিবার পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কার্যদিবসের হিসাবে)  তেলের বাজারে যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তার সম্পর্কে মিজুহো ব্যাংকের এনার্জি ফিউচার্স - এর পরিচালক বব ইউগার বলেন, 'আমেরিকার খবরটি মূল্যবৃদ্ধিকে সমর্থন করেছে'।  

যদিও এ সপ্তাহে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কাজনক আভাস ও তার প্রেক্ষিতে চাহিদা কমে আসা নিয়েই ভয়ে ছিলেন তেলের স্টক ট্রেডাররা। কিন্তু, বড় রপ্তানিকারক দেশগুলি সরবরাহ বৃদ্ধি না করায়– চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য ছিল টান টান অবস্থাতেই। তাই 'ফ্লোর প্রাইস' আরও কমেনি।

জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রধান সূচক অয়েল রিগ- এর সংখ্যা। সপ্তাহান্তে সচল রিগ ৭টি কমে এটি নেমেছে ৫৯৮- এ। ১০ সপ্তাহের মধ্যে যা প্রথমবারের মতো কমেছে বলে জানাচ্ছে জ্বালানি খাতের পরিষেবা সংস্থা- বেকার হিউজেস।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ১৯৯৫ সালের পর সবচেয়ে উচ্চহারে নীতিনির্ধারণী সুদ বাড়ায়। অর্থনীতি স্তিমিত হয়ে পড়ার শঙ্কাও জানিয়েছে একইসঙ্গে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের শীর্ষ স্থানীয় সংস্থা- ওনাডার লন্ডন শাখার বিশ্লেষক ক্রেইগ এরলাম বলেন, 'সবাই মন্দার ঝুঁকিকেই অনেক বেশি গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। জ্বালানি বাজারে সরবরাহ ও যোগান তার মধ্যেই টান টান অবস্থানে রাখা হয়েছে। (তেল) উৎপাদকদের এটি আর বাড়ানোর সক্ষমতাও নেই'।

এর আগে তেল উৎপাদক ২৩ দেশের জোট ওপেক প্লাস সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক মাত্র ১ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮২ সালের পর থেকে ওপেক এত স্বল্প উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত খুব কমই নিয়েছে।

এদিকে রাশিয়ান ক্রুড ও পরিশোধিত অনান্য জ্বালানি কিনতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তাদের নিজেদেরই ক্ষতি করছে। এরমধ্যেই ইউরোপে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সংকট। আগামী শীতে যা চরম রূপ নেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইইউ নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হওয়ার কথা ডিসেম্বরে। শীতকালে এটি কার্যকর হলে ইউরোপের তাতে দুর্দশাই বাড়বে।

আরবিসি'র বিশ্লেষক মাইকেল ট্যান বলেন, 'সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করতে চাইছে ইইউ। এই ঘাটতি মেটাতে হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে বাড়তি সরবরাহ দরকার হবে। তারা যদি অন্য অঞ্চলের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ না পাঠিয়ে ইউরোপ পাঠায়–তবেই তা সম্ভব। কিন্তু, ইউরোপের ঘাটতি পূরণে মধ্যপ্রাচ্য এ কাজ করবে কিনা– সেটাই মৌলিক প্রশ্ন'।

তিনি বলেন, 'রাশিয়ার ওপর দেয়া তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা চলতি বছরের বাকি সময়ে (তেল বাজারে) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়েই থাকবে'। 


  • সূত্র: রয়টার্স 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.