জনবিচ্ছিন্ন নেতারা আত্মগোপনে, শ্রীলঙ্কানদের ভাগ্যে এর পর কী? 

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 July, 2022, 10:30 pm
Last modified: 12 July, 2022, 04:04 am
রাষ্ট্রক্ষমতায় এর পর কে আসবেন- তাই দেখার অপেক্ষায় সাধারণ শ্রীলঙ্কানরা। কিন্তু, তাঁদের বিপ্লব থেমে নেই, গত রোববার তাদের অনেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারীদের বিলাসবহুল বাসভবনে...

মাত্র একদিনের চরম নাটকীয়তায় বদলে গেছে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কেন্দ্রীয় দৃশ্য। রোববার (১০ জুলাই) ছিল সেদিন; এই একদিনেই প্রধানমন্ত্রীর সুসজ্জিত বাগান থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্টের শয়নকক্ষ–বিক্ষোভকারীদের অবাধ বিচরণস্থল হয়ে উঠেছে ক্ষমতাধরদের পছন্দের নিবাসগুলি।

লঙ্কান জনতা নিত্যপণ্য ও সেবা না পাওয়ার দুর্ভোগে নাজেহাল। গণ-আস্থা হারিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে, তা থেকে বাদ পড়েননি কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া রনিল বিক্রমাসিংহে-ও।

উভয়েই এখন অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। মিত্রদের মাধ্যমে ইঙ্গিতও দিচ্ছেন অচিরেই পদত্যাগের। এই অবস্থায় দেশের শাসনভার কার হাতে তা নিয়ে ভাবার সময় ছিল না লঙ্কানদের। থাকবেই বা কীভাবে!- গত কয়েক মাস ধরেই যে তাঁদের গাড়ির জ্বালানি বা রান্নার গ্যাস অথবা জীবনদায়ী ওষুধ–সবকিছুর জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবুও বেশিরভাগকেই ফিরতে হয়েছে রিক্ত হাতে। সহজ কথায়, দুঃসহতা চরমে পৌঁছে সবার আগে লঙ্কাবাসী গণ-বিপ্লবকে প্রাধান্য দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের আসল অভিসন্ধি অনুমানে বিরোধী দলগুলির নেতারাও যথেচ্ছ গোলমাল পাকাচ্ছেন। একেক মুনীর একেক মত- এমনই তাদের দশা। এই অধিক সন্যাসীর ভিড়ে কার বাণী সঠিক- জনতা তা নিয়ে ভাবছে না। তারা শুধু চায়- রাজাপাকসে অভিজাততন্ত্র থেকে মুক্তি।

আগামী বুধবার পদত্যাগের কথা সেনাপ্রধানের মাধ্যমে জানিয়েছেন গোতাবায়া। তিনি কী সত্যিই এদিন পদত্যাগ করবেন? নাকি আবারও ক্ষমতা আঁকরে ধরে থেকে গণমানুষের বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাবেন? দেখবেন এভাবে আরও কতদিন টিকে থাকেন?

অতি-গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রশ্নের উত্তর না মিললেও–গোতাবায়ার উত্তরসূরি কে হবেন তা নির্ধারণের আলোচনা শুরু হয়েছে অন্যদিকে। পার্লামেন্টের স্পিকার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিরোধীদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছেন।

এসব সমীকরণ যখন একদিকে চলছে– তখন একটা বিষয় কিন্তু স্পষ্ট। লঙ্কার ক্ষমতায় এবার যিনি-ই যান না কেন- রাবণ তাকে হতেই হবে। উপায়ও তো নেই–নয়া রাষ্ট্রপ্রধানকে যে নিতেই হবে পূর্বসূরির রেখে যাওয়া বিধ্বস্ত অর্থনীতির বোঝা। এক পর্যায়ে খলনায়ক তিনিও হবেন জনগণের কাছে, তাদের নিত্য চাহিদাগুলি পূরণে ব্যর্থতার কারণে। তার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ মানুষের মনোভাব–লঙ্কানরা আজ ক্লান্ত, রিক্ত এবং পরিশেষে অসীম, অক্ষম ক্ষোভে ফুঁসছে।

রোববার অবশ্য বাস্তবতার উদ্বেগগুলির ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি ক্ষমতাসীনদের প্রাসাদ দখল করে উল্লাসে বিভোর জনতার ভিড়ে। তারা সেদিন করেছেন- শক্তিশালী এক পরিবারতন্ত্রকে উৎখাতের উল্লাস– যারা গত দুই দশকের অধিকাংশ সময় দেশটি শাসন করেছে।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সুইমিং পুলে সাঁতারও কেটেছেন কিছু বিক্ষোভকারী। ছবি: দিনুকা লিয়ানাওয়াত্তে/ রয়টার্স

দিনটি ছিল লঙ্কার ইতিহাসে স্মরণীয়। উপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার সরকারি বাসভবন এদিন জনতার 'ফ্রি মিউজিয়ামে' পরিণত হয়। দর্শণার্থীরাই তো বিপ্লবী- তারা এসেছিলেন দলে দলে; ফলে প্রাসাদসম আবাসনের অলিন্দ ও সিঁড়ি বেয়ে ঠেলাঠেলি করে জনতাকে উঠে আসতে দেখা গেছে। ভিড় এত বেশি ছিল যে, এক সময় বাধ্য হয়েই বিক্ষোভের মূল আয়োজনে যুক্ত নেতাকর্মীরা মানুষকে সেখানে আসতে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী রনিলের বাসভবনেও।

বিশ্ব যে মুহূর্তে অস্থিতিশীল, শ্রীলঙ্কার অবনতিশীল সংকট সেই প্রেক্ষাপটে মঞ্চস্থ হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে, মস্কোর ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা দুনিয়া। এতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে–দেশে দেশে দেখা দিয়েছে চড়া মূল্যস্ফীতি। খাদ্য সংকট কমবেশি পৃথিবীর সব দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশে দেখা দিচ্ছে। তার ওপর আগে থেকেই মহামারির কারণে বৈশ্বিক সরবরাহে চক্রের বিচ্ছিন্নতা তো আছেই।

শ্রীলঙ্কা আজ নিখুঁত সংকটের উদাহরণ। অথচ একদা এই দ্বীপরাষ্ট্র ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সাফল্য অর্জনে এগিয়ে থাকা প্রেরণার দৃষ্টান্ত।এই সম্ভাবনা বুঝেই ভারত ও চীনের মতো আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলি ২ কোটি ২০ লাখ জনতার দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা করেছে।

কিন্তু, বিগত অনেক কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কায় সচল অর্থনীতির নাম-গন্ধ নেই। উবে গেছে সুদিনের সব চিহ্ন। চারিদিকে শুধু না থাকার বেদনা। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। সরকারি দেনা আরও বহুগুণে নাজুক রূপ নেয় বিশাল সব অবকাঠামো নির্মাণে বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া বিপুল ঋণের ভারে।

এসব প্রকল্পের প্রত্যাশিত সুফল নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। বাস্তবায়নের পর দেখা গেছে সেগুলি শ্বেতহস্তী মাত্র। তাদের একমাত্র অবদান শ্রীলঙ্কাকে ঋণ খেলাপি করে তোলা। অর্থের ঘাটতি পূরণ করাও সহজ নয় শ্রীলঙ্কার সামনে। এর আগে করোনা মহামারির সময়েই দেশটির প্রধান খাত- পর্যটনে ধস নামে। এসময় বন্ধ হয়ে গেছে বহু হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। আর যে দেশে এখন জ্বালানি ও বিদ্যুতেরই সংকট–চলছে রাজনৈতিক গোলযোগ– সেখানে পর্যটকরা কেনই বা আর আসতে চাইবেন?

ফলে শ্রীলঙ্কার গল্প আজ অন্য উন্নয়নকামী দেশের জন্য সতর্কবার্তায় রূপ নিয়েছে।

এতকিছুর মধ্যে রোববার হাজির হয়েছিল ভিন্নতার ছোঁয়া নিয়ে। যে সেনাবাহিনী ও বিক্ষোভকারী রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল এতদিন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সে বিরোধ সংঘাতে রূপ নেয়নি। জনতা যখন উল্লাসে মত্ত তখন নীরবে প্রাসাদে টহল দিতে দিতে তাদের দেখেছে সেনা প্রহরীরা।

জনতার অনেকেই বিমুগ্ধ দর্শকের মতো প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রাখা বহুমূল্য তৈলচিত্র, ঝাড়বাতি, সিলিঙ্গে আঁকা মনোমুগ্ধকর চিত্রগুলি দেখেছে। অন্যরা দল বেঁধে ঢুকে পড়েন প্রেসিডেন্টের শয্যাকক্ষে। সেখানে গা এলিয়েও দেন কেউ কেউ। রান্নাঘরে ঢুকে বড় এক পাত্রে ভাত রাখতেও দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে।

প্রাসাদের কোনো ক্ষতিসাধন করেনি জনতা, কিছু হয়ে থাকলেও তা খুবই ন্যূনতম। যেমন দেওয়ালের সুন্দর রঙ নষ্ট করে আঁকা কিছু গ্রাফিতি, যাতে প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়; এখানে সেখানে মানুষের ফেলা প্লাস্টিক বোতলের ছড়াছড়ি; কিছু পর্দা টানাটানিতে ঝুলে যাওয়া আর কিছু পেইন্টিং নিজের স্থান থেকে সামান্য ডানে বা বাঁয়ে হেলে পড়ার মতো বিপত্তি।

কিন্তু, আগেই বলা হয়েছে দিনটি সাধারণ ছিল না। বিক্ষোভকারী এই জনতাই পরে আবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে ময়লা কুঁড়িয়ে নিয়েছে, ঝাঁরপোঁছ করেছে মেঝে, পানি দিয়ে গেছে ফুলের গাছে। এমনকী তারা প্রাসাদে পাওয়া ১৭ মিলিয়ন রুপিও পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে।

রোববার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অলিন্দজুড়ে ছিল শুধু আপামর জনতার ভিড়। ছবি: অরুন শঙ্কর/ এএফপি/ গেটি ইমেজেস

উৎসব উৎসব এক ভাব ছিল দিনটিতে। আর তাতে যোগ দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন দীপা রানাওয়ারা। তারা রাজনৈতিক বা অন্য কোনো অধিকার কর্মী নন, শুধুই চারজনের এক সাদামাটা পরিবার। জ্বালানি সংকটে গণ-পরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়ি থেকে ১৫ মাইল হেঁটে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দেখতে আসে পরিবারটি। এতোটা হেঁটে পায়ে ভীষণ ব্যথা করছিল দীপার।

তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদককে বলেন, 'আমার মতো শ্রীলঙ্কার সব মানুষ অশেষ দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি- আমাদের প্রিয় শ্রীলঙ্কার এই দশা হবে'।

দীপা ও তার স্বামী দুই বছর আগে ব্যাংক ঋণ নিয়ে চাল, ডাল, চিনি ইত্যাদি নিত্যপণ্যের মুদি দোকান দিয়েছিলেন। দীপার স্বামীর নিয়মিত আয়ের পাশাপাশি এ ব্যবসার আয় নিয়ে অনেক আশা করেছিলেন তারা। মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় দরকারি টিউশন ফি মেটানোর লক্ষ্য নিয়েছিলেন এ দম্পতি। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ায় তাঁদের মুদি ব্যবসাতেও ধস নেমেছে; এখন ব্যাংকের ঋণ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

দীপা বলেন, 'এখন আমরা দিনে দু-বেলা খাই। মাছ বা মাংস খাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না'।

মোহাম্মদ ইমরান নামের এক ব্যক্তির সাথেও কথা বলেন টাইমসের প্রতিবেদক। মোহাম্মদ ইমরান নামের এই ব্যক্তির দুই সন্তান- তারা গত দু'বছর ধরে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না। প্রথমে বাধা ছিল মহামারির বিধিনিষেধ, আর এখন অর্থনৈতিক সংকট। বৈদেশিক মুদ্রা তলানিতে নামায় জ্বালানি কেনার পয়সা নেই সরকারের। জ্বালানি চরম আরাধ্য পণ্যে রূপ নেওয়ায় খাদ্য থেকে পরিবহন সবকিছুর মূল্য গগনচুম্বী হয়েছে।

আগে পরিবারের সকলকে নিয়ে সপ্তাহে একদিন রাতে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে যেতেন ইমরান। খরচ কমাতে এখন সেই চর্চা বন্ধ করেছেন। তবে তিনি শিশু সন্তানদের নিয়ে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা পালন করতে চান। তাইতো ঈদের দিন ধার করে জ্বালানি ভরেন নিজের মোটরসাইকেলে। তারপর নিজের দুই শিশুপুত্র ১১ বছরের বেরেরাহ ও পাঁচ বছরের থামিমকে নিয়ে চলে এসেছেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দেখতে।

চাকচিক্যে ভরা প্রাসাদের প্রাঙ্গণ দেখে তিনি বলেন, 'প্রসিডেন্ট আমাদের বিপদের দিনে কেমন আরামদায়ক জীবনযাপন করতেন, আমার সন্তানেরা দেখে রাখুক। এটা ওদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে'।

বিক্ষোভকারী ও দর্শনার্থী– জনতার প্রায় সকলেই তাদের সীমাহীন দুর্গতির জন্য দায়ী করছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে-সহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের– যারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে ছিলেন দীর্ঘকাল ধরে।

গত বছরেই দেখা দিতে থাকে শ্রীলঙ্কায় সংকটের নানান লক্ষণ। কিন্তু, মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপাকসে অর্থনীতি ধসে যাচ্ছে তা কখনোই স্বীকার করতে চাননি। এরপর গত বসন্তে প্রথম রাজপথে নামে বিক্ষোভকারীরা; তখন নামকাওয়াস্তে সমঝোতার আশ্বাস দেন প্রেসিডেন্ট। চাপ বাড়তে থাকলে নিজ পরিবারের সদস্যদের সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। গত মে'তে বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হলেও– গোতাবায়া নিজে পদত্যাগে করতে অস্বীকার করতে থাকেন।

দৃশ্যপট বদলাচ্ছিল শনিবার দিনের শেষদিক থেকেই। এসময় প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও লঙ্কান পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবিওয়ার্দেনা জানান যে, প্রেসিডেন্ট তাকে বলেছেন তিনি বুধবারে পদত্যাগ করবেন। তবে একথা গোতাবায়া নিজে বা তার আশেপাশের কোনো সহযোগী সরাসরি বলেননি।

এবিষয়ে মুখে কুলূপ এঁটে রয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদেরাও। প্রেসিডেন্ট কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন তার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। অন্যরা এ প্রশ্নের জবাবই দিচ্ছেন না। লোকমুখে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্টকে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নৌবাহিনীর জাহাজে তড়িঘড়ি করে লাগেজ ওঠানো; সরকারি গাড়ি দ্রুত গতিতে বিমানবন্দরে আসার দৃশ্য সম্বলিত কিছু ভিডিওচিত্র গত রোববার ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন রূপ নিতে কাল্পনিক সব অনুমানে। মানুষ বলতে থাকে, প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রীই হবেন তার উত্তরসূরি। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গত শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। জনতা তার ওপর এতই রুষ্ট ছিল যে, তার ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।

প্রধানমন্ত্রী না থাকার কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ৭৬ বছরের পার্লামেন্ট স্পিকার ইয়াপা আবিওয়ার্দেনা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়দেব ইউয়ানগোড়া বলেন, 'সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করার সময় যদি কোনো প্রধানমন্ত্রী না থাকে- তাহলে অন্তত এক মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবেন পার্লামেন্টের স্পিকার।

অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতিকে ওই এক মাস মেয়াদে পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ নির্বাচনে বিজয়ী গোতাবায়া রাজাপাকসের বর্তমান মেয়াদের যে দুই বছর বাকি আছে সে সময়টা প্রেসিডেন্ট থাকবেন।

ইউয়ানগোড়া জানান, নতুন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উভয়কেই পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে থেকে বেঁছে নেওয়া হবে। তবে যারাই ক্ষমতায় আসুন- তাঁদের সংকটের ঘূর্ণাবর্তে পড়তেই হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিক্ষোভকারী জনতা রাজাপাকসে পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে অসন্তুষ্ট এবং দেশের শাসনকাজে তাঁদের আধিপত্যের অবসান দাবি করলেও, সার্বিকভাবে তারা সকল দলের রাজনীতিবিদদের অন্তর্কোলহ নিয়েও হতাশ। তারা এখন নতুন শাসকদের নির্বাহী ক্ষমতার হ্রাস দাবি করছেন, চাইছেন আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

ইউয়ানগোড়া মনে করেন, চরম অর্থনৈতিক সংকট চলমান থাকায় নতুন শাসকেরাও জনতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে হিমশিম খাবে।

তিনি বলেন, 'পুরো রাজনীতিক শ্রেণি জনতার আস্থা হারিয়েছে। এখন রাজনীতিক সম্প্রদায়ের সাথে রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষের বৈসাদৃশ্য প্রকট। এই পার্থক্য দূর না হলে, আমরা সামনে আরও অস্থিতিশীলতাই দেখব।'
 


  • সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.