ভাষাহীন প্রাণীগুলো কীভাবে পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে?

মতামত

01 April, 2024, 01:50 pm
Last modified: 01 April, 2024, 01:55 pm
পবিত্র কোরআন শরীফের কোথাও দেখিনি কুকুরের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা সবার ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে। সেখানে কুকুরের কথা আলাদাভাবে বলা না হলেও বারবার অসৎ, মুনাফিক, ঘুষখোর, চরিত্রহীন, অত্যাচারি মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। 

সিটি কর্পোরেশন একসময় কুকুরদের মেরে রাজধানী থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কিছু মানুষ। ব্যানারে লেখা ছিল 'জনগণের টাকায় তৈরি রাস্তা কি বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে থাকবে?'; 'কুকুর কেন রাস্তায় চলাচল করবে?'— সেদিন বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, সত্যিইতো কুকুর কেন চলাচল করবে? এই পথে চলাচল করবে দুর্নীতিবাজ, সুযোগসন্ধানী, প্রতারক, ঠগ, দখলদার, অসভ্য, ধর্ষক ও নারী নিপীড়নকারী? 

বলতে চাইছি মানুষের লোভ, অসভ্য আচরণ ও দুর্নীতির কারণে শুধু কুকুর নয়, সব প্রাণীদের বসবাসের জায়গা কমে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। পথের কুকুরগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিউটার করিয়ে দিলে কুকুর ও বিড়ালের সংখ্যা কমে আসবে। এদেরকে পিটিয়ে বের করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। দেশে কুকুরসহ পশুপাখির সংখ্যা না কমিয়ে মন্দ মানুষের সংখ্যা কমানো উচিৎ।

আজ থেকে ২০ বছর আগে আমরা যখন নতুন বাসায় এসে উঠলাম, আমাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে ছোট্ট একটি কুকুরছানাও এলো। এরপর একদিন ফ্ল্যাটের মাসিক সভায় আমাদের রীতিমত শোকজ করা হলো, কেন আমরা কুকুর রেখেছি বাসায়? এর আগেও ওনারা বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছিলেন

সেইবারের মিটিংয়ে ওনারা বললেন,"আপনাদের বাসায়তো ফেরেশতা আসবেনা কুত্তা পালন করলে।" 

আমি বলেছিলাম, "আমরা তা মনে করিনা। আমরা বিশ্বাস করিনা যে ধর্মের সাথে এর কোনো যোগ আছে।" 

ওনারা বললেন, "জানেন একটি বাড়িতে কুত্তা থাকলে শুধু আপনাদের বাড়িতেই নয়, পুরো বিল্ডিং এ ফেরেশতা আসবেনা। তাছাড়া কুকুর নিশ্চয়ই সিঁড়ি বা লিফট দিয়ে ওঠানামা করে, তাহলেতো সেখান দিয়েও ফেরেশতা আসবেনা।" 

প্রতিবেশীদের কারো কারো মুখে এইসব অদ্ভূত কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। জানতে চাইলাম, "আচ্ছা ফেরেশতারা কি লিফট বা সিঁড়ি ব্যবহার করেন?"

আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেগুনি রংয়ের সিল্কের শার্ট ও প্রচুর সোনার গহনা পরা একজন ভদ্রলোক বললেন, "আপনারা কুত্তা পালতে পারবেন না। এটা গোনাহ, বরং কবুতর রাখুন। নবীজী কবুতর পালতেন, তাই আমিও কবুতর পালি।" 

কোনো বিতর্কে না জড়িয়ে আমি শুধু বললাম, "ওকে আমরা ছাড়তে পারবোনা কারণ ও আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। ও আমার মেয়ের বন্ধু।''

পাপ্পির অবস্থা কী হতো, আমি জানিনা। তবে যা ঘটলো তা বেশ ইন্টারেস্টিং। আমি মনে করি এটা আল্লাহর বিচার ছিল। হঠাৎ একদিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখি আমাদের পুরো বিল্ডিংটি পুলিশ ঘিরে আছে। এই বিল্ডিংয়ের ৭ তলায় একজন অভিযুক্ত খুনি বসবাস করেন। তাকে গ্রেপ্তার করতেই পুলিশ এসেছে। গ্রেপ্তারকৃত সেই খুনিটি আর কেউ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আমাকে কবুতর পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। অগত্যা পাপ্পির কপাল খুলে গেল। এরপর ফ্ল্যাটবাসীরা কুকুর নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্চ্য করলেন না। হয়তো তারা বুঝতে পেরেছিলেন একটি ফ্ল্যাটে কুকুর থাকলে যদি পুরো বিল্ডিং এ ফেরেশতা না আসে, তাহলে তো একটি ফ্ল্যাটে খুনি থাকলে পুরো বিল্ডিং এর অবস্থা আরো শোচনীয় হবে। পরবর্তীতে জেলে থেকেই মারা গেলেন সেই বেগুনি শার্ট পরা লোকটি।

আমি ধর্ম নিয়ে যতোটুকু পড়াশোনা করেছি, তাতে পবিত্র কোরআন শরীফের কোথাও দেখিনি কুকুরের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা সবার ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে। সেখানে কুকুরের কথা আলাদাভাবে বলা না হলেও বারবার অসৎ, মুনাফিক, ঘুষখোর, চরিত্রহীন, অত্যাচারি মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। 

বাংলাদেশের মানুষ মন্দ কাজ, অপরাধ, খারাপ ব্যবহারকে যতোটা না গোনাহ বলে মনে করেন, এরচেয়ে অনেক বেশি অপরাধী মনে করেন অত্যন্ত প্রভু ভক্ত, সাহসী, বুদ্ধিমান, মানুষের খেলার সাথী ও সাহায্যকারী বন্ধু কুকুরকে। আমি জানিনা কুকুরের প্রকৃত অপরাধ কী? কেন তাদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে অপরাধী করে রাখা হয়? সবসময়ই দেখে এসেছি পাড়ায়, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে, বিভিন্ন দোকান ও এমনকি মসজিদের সামনেও কুকুর বসে আছে। তাহলে কী এসব জায়গায় কোনো ফেরেশতা আসছেন না? এই জায়গাগুলো সব 'নাপাক' হয়ে যায়? 

প্রতিটি ধর্মেই পশুপাখির সাথে ভালো আচরণের কথা বলা হয়েছে। অনেকেই বলেন যে ইসলামে কুকুরকে শত্রু হিসেবে দেখা হয়েছে এবং এই যুক্তিতেই কুকুরের ওপর নির্যাতন করা হয়। কিন্তু পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফের কোথাও কুকুর বা অন্য কোনো জীব হত্যার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। 

পবিত্র হাদীসে আছে, আল্লাহর রাসুল (স:) বলেন, 'এক ব্যক্তি একটি কুয়ার নিকটবর্তী হয়ে তাতে অবতরণ করে পানি পান করলেন। অতঃপর উঠে দেখলেন, কুয়ার পাশে একটি কুকুর (পিপাসায়) জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। তার প্রতি লোকটির দয়া হল। সে তার পায়ের একটি (চর্মনির্মিত) মোজা খুলে (কুয়াতে নেমে তাতে পানি ভরে এনে) কুকুরটিকে পান করালেন। ফলে আল্লাহ তার এই কাজের প্রতিদান স্বরূপ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।'

পরিবারের সদস্য পাপ্পি মারা যাওয়ার পর আমাদের বাসায় ছোট একটি কুকুরছানা এল ২০১১ সালে। তিব্বতী লাসা, ওর নাম ছিল মংক। মংকের চেহারা ও আচরণ এত মিষ্টি ছিল যে ওকে সবাই ভালবাসতো। মংক আমাদের নয়নের মণি ছিল। কুকুর হলেও ও আমাদের কথা বুঝতো, আমরা ওর কথা বুঝতাম। ৩০ মার্চ মংক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। ওর চলে যাওয়া আমাদের জীবনে আবার একটি ভয়াবহ কষ্টের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলো। মংক ছিল আমাদের পাহারাদার, মানসিক শান্তি ও আনন্দের উৎস। পরিবার থেকে পাপ্পি, জুডো ও মংক একে একে বিদায় নিয়েছে। 

পরিবার বলতে আমরা বুঝি বাবা-মা, ভাইবোন নিয়ে একসাথে থাকা। যৌথ পরিবার বলতে জানি দাদা-দাদি, নানা-নানি, খালা-চাচা, মামাসহ বসবাস করা। কিন্তু কখনো দেখেছেন একটি কুকুর, বিড়াল, পাখি, গরু, মহিষ, ছাগলও হতে পারে পরিবারের সদস্য। যতদিন পর্যন্ত একটি প্রাণী সংসারে পোষা হিসেবে থাকতে শুরু না করে, ততোদিন পর্যন্ত বোঝা যায় না কীভাবে সেও হয়ে যায় পরিবারের সদস্য। এই অনুভূতি তারা কোনোদিনও বুঝতে পারবে না, যারা কখনো পোষা প্রাণী রাখেন নাই।

সেদিন আমাদের বাসার লেটেস্ট পোষা কুকুর স্যাফো হারিয়ে গিয়েছিল। মনে হলো যেন, পরিবারের একজন সদস্য হারিয়ে গেছে। স্যাফোকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছিল প্রায় ৯/১০ মাস আগে। সে এতটাই কুচকুচে কালো আর মিষ্টি চেহারার যে ওর প্রতি বাসার সবার খুব মায়া তৈরি হয়ে গেল। সে বাড়িঘর তছনছ করে, দুষ্টুমি করে। আমাদের মেজাজ খারাপ হলেও ওর প্রতি মায়া আর ভালবাসা বাড়তে থাকে। বাইরে গিয়ে রাস্তার কুকুরের তাড়া খেয়ে হঠাৎ স্যাফো ছুট দিয়ে কই যে চলে গেল, কে জানে।

দুইদিন পর ও ফিরে এল পথ চিনে। কিন্তু যে দুইদিন ও ছিল না আমরা এলাকার ও আশেপাশের সব রাস্তায় খুঁজেছি পাগলের মতো। লোক লাগিয়েছি, পোস্টার ছাপিয়েছি, পুরস্কার দিতে চেয়েছি। স্যাফোকে শুধু কুকুর মনে করলে হয়তো এমনটা করতে পারতাম না। ভালবাসার ধন বলে মনে করেছি বলেই ওকে হারিয়ে ব্যাপক কষ্ট হয়েছে সবার। প্রতিবেশি, বন্ধু, পেট লাভার্স মানুষ সবাই খুবই সহমর্মিতা দেখিয়েছেন স্যাফোকে ফিরে পাওয়ার জন্য। অনেকের মনে হতে পারে কুকুরের হারানো নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। হয়তো বাড়াবাড়ি হয়েছে। কিন্তু রাস্তা থেকে তুলে আনা একটি বাচ্চা কুকুরকে আমরা পরিবারের সদস্যের মতোই ভালবেসে ফেলেছি। তাই হয়তো ওকে ফিরে পাওয়ার আর্জিটা অনেক বেশি ছিল। 

যাক শেষপর্যন্ত স্যাফো নিজেই রাস্তা চিনে ফিরে এসেছিল বাসার কাছাকাছি। পোস্টারে দেওয়া ছবি দেখে ওকে চিনতে পেরে ক্লাস ফাইভের একটি ছেলে আমাদের স্যাফোর কথা জানিয়েছিল। অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে শিশুটি এবং ওর পরিবার কোনোভাবেই পুরস্কারের টাকাটি নিতে রাজি হলো না। ছোট ছেলেটি বলল, "আপনাদের কুকুরটির যে খোঁজ দিতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি।" আর ওর বাবা বলল, "বাচ্চার হাতে টাকা দিয়েন না। আমি চাইনা বাচ্চা টাকা চিনুক।" 

শুধু কুকুর, বিড়াল বা মুরগি নয়, যারা পশুপাখির প্রতি অত্যাচার করেন এবং তাদের প্রতি অত্যাচার মেনে নেন, সেই অমানুষগুলো দেখতে অবিকল মানুষের মত হলেও, আসলে এরা মানুষ নয়। একদল লোক হাতির বাচ্চাকে ২-৩ মাসব্যাপী 'প্রশিক্ষণ' এর নামে নানান কলা-কৌশল শেখাতে গিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। এ সময় হাতি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোর চেষ্টা চালায়, শুড় উঁচিয়ে কাতরায়। কখনও নির্যাতনে হাতি শাবক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, তবুও নির্যাতন থামে না। পশুর প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ এবং কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা যেমন অমানবিক, তেমনি বেআইনি।

পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা একধরনের মানসিক বিকৃতি বা অসুস্থতা। ছোটবেলায় একটা বইয়ে পড়েছিলাম, মানুষই এ জীবজগতে সবচেয়ে বেশি নৃশংস। কারণ একমাত্র মানুষই পারে অপ্রয়োজনে বা তুচ্ছ কারণে ভয়ংকরভাবে অন্যকে হত্যা করতে। এদেশে মানুষও হত্যা করা হয় পেশাদার খুনি দিয়ে, বাঘ ও হাতিকেও তাই। কী ভয়ংকর মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা। 

এক সকালে ঘুম ভাঙলো সাংঘাতিক খারাপ খবর দিয়ে, আমাদের বিড়াল মাস্কাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। একমাস বয়সী মাস্কাকে প্রায় মৃৎবত অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর গত ৩/৪ বছরে ধরে এই বাসায় সে দিব্যি নিজের জায়গা করে নিয়েছে। খুব একটা মিশুক স্বভাবের না হলেও সবাই তাকে ভালবাসে। ওকে আমরা একা ছাড়িনা কোথাও। সেই মাস্কা যখন নাই হয়ে গেল, মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কাজকর্ম বাদ দিয়ে সবাই মাস্কাকেই খুঁজতে শুরু করলো। কারণ মাস্কাও আমাদের পরিবারের একজন সদস্য।

ঠিক সেরকম একটি বিপর্যস্ত অবস্থায় যখন দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে 'বাৎসরিক বিড়াল মারা উৎসব' শুরু হয়েছে। হোমফিড খুলতেই চোখে এলো সেই হলের জানালার কার্নিশে মেরে রাখা মৃত বিড়ালদের ছবি। রাগে, শোকে, দু:খে প্রচণ্ড রকম হতাশ হয়ে পড়লাম। একদিকে আমার পরিবারের বিড়ালটি হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে বিড়ালগুলো মেরে ফেলে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা। যাক আমাদের বিড়ালটি দুপুর নাগাদ ফিরে এলো। পরেরদিন ক্যাম্পাসে একটি হলের পাশে ঘুরে বেড়ানো সদ্য জন্মানো চারটি বিড়ালছানার গলাকাটা ছবি আবার ফেইসবুকে দেখে মনে হল আমার সন্তানদের কেউ যেন হত্যা করে ফেলে রেখেছে। ঐ একই দিনে খবরে দেখলাম, একটি মৃত নবজাতককে কেউ বুয়েটের ডাস্টবিনে ফেলে রেখে গিয়েছে। দুটো ঘটনাই ঘটেছে ক্যাম্পাসে এবং দুটিতেই সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। 

ছাত্ররাই জানিয়েছে সন্ধ্যায় বিড়াল ছানাগুলো মনের আনন্দে ক্যাম্পাসে ঘুরছিল, আর রাতেই তাদের গলায় ছুরি চালানো হলো। তারা লিখেছেন, 'সকালে আমরা গিয়ে দেখতে পাই, কাক এগুলোকে টেনে-হিঁচড়ে খাচ্ছে আর মা বিড়ালটা অস্থির হয়ে চারপাশে ঘুরছে।' নগরে বা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় যদি কুকুর বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন উপায় আছে। জবাই দেওয়ার মত মারাত্মক অপরাধ করতে হবে কেন? এখানে যারা মানুষের বাচ্চা হত্যা করেছে এবং যারা বিড়াল ছানা হত্যা করেছে, তারা সবাই হত্যাকারী। 

২০২২ সালে যখন নীল মাছরাঙা পাখির দ্বিখণ্ডিত দেহ ও তার ডিমগুলোর ছবি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছিল, তখনো নিজেকেই অপরাধী মনে হয়েছিল। কারণ আমারই মতো একজন মানুষের জন্য ছোট্ট মা পাখিটি বহু চেষ্টা করেও তার অনাগত সন্তানদের বাঁচাতে পারেনি। 

অধিকাংশ মানুষই মনে করেন কুকুরদের পিটিয়ে মারার কাজটি ভাল। অনেকে বলেন যেমন কর্ম, তেমন ফল। কুকুর কামড়ালে কি কুকুরকে আদর করতে হবে? যারা পিটিয়ে পশুপাখি হত্যার পক্ষে, তাদের মনে রাখা উচিৎ মানুষ একসময় জিঘাংসার বশে পশুর চাইতেও অনেক বেশি হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। দেশ ও সমাজের জন্য জবাই করে হত্যা করা ও পিটিয়ে মারার ট্রেন্ডটা খুব খারাপ। 

প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন কোনো কারণ ছাড়াই পশুপাখি হত্যা করে? করে শক্তিহীনের ওপর প্রতাপ দেখানোর জন্য, দুর্বলকে নিপীড়ণ করা জন্য, বিকৃত আনন্দলাভের জন্য এবং এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা থেকে। যারা পথের কুকুরের হাত-পা ভেঙে দেয়, বিড়ালকে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়, আহত শামুকখোল পাখিদের রান্না করে খেয়ে ফেলে এবং বিষ খাইয়ে মাছ, বানর ও পাখি হত্যা করে, এরা সবাই খুনি। আজকে এরা বিনা প্রয়োজনে পশুপাখি খুন করছে, কালকে মানুষ খুন করবে। যেমনভাবে খুন করেছে আবরার, তসলিমা রেনু, বিশ্বজিৎ দাস, দীপণ, অভিজিৎ রায় ও নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেককে। 

পশুপাখি, গাছপালা মানুষের জীবনের সাথে জড়িত। আমরা অনেকেই জীব জগতকে ভালবাসতে শিখিনি। একজন মানুষের প্রতি নৃশংস আচরণ করলে, তার যে কষ্ট হয়, পশুপাখির ক্ষেত্রেও তাই হয়। শুধু তারা ভাষাহীন বলে নূন্যতম প্রতিবাদটাও করতে পারেনা।


  • যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফল। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।)

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.