চিকিৎসকের পরামর্শ: রোজায় ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা

মতামত

ডা. শাহজাদা সেলিম
27 March, 2023, 07:00 pm
Last modified: 27 March, 2023, 07:07 pm
মনে রাখতে হবে, রোজার সময়ে ওষুধ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা পুরোটাই পাল্টে যাবে এবং রমজানের পর আবার নতুন করে স্বাভাবিক সময়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ফিরে আসতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম। ছবি: সৌজন্যে

রোজাদার প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীরই কমবেশি ঝুঁকি তৈরি হয়। রোজা রাখার সময় তাদের সারাদিন খালি পেটে থাকতে হয়, একারণে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া); রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া); ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, পানিশূন্যতা ও থ্রম্বোএম্বোলিজম এর ঝুঁকি থাকে।

এসব ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকতে ডায়বেটিস রোগীদের রোজা রাখার সময় যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-

১. ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাপতে হবে। দিনের শেষভাগে অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজ দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ রাখতে হবে। রমজানের প্রথম দিকের দিনগুলোয় একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে, পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

২. প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিমান অন্যান্য সময়ের মতোই রাখার চেষ্টা করতে হবে, যদিও তা খুব সহজ নাও হতে পারে। দেহের স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। ইফতারে চর্বিযুক্ত খাদ্য এবং তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। কেননা, এসব খাবার হজম হতে সময় লাগে। কিন্তু, ডায়াবেটিক রোগীর ইফতারের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি। সেজন্য জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সেহরির সময় খেতে হবে। আর ইফতারিতে সহজপাচ্য খাবার এবং প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে।

৩. সেহরির খাবার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে (অর্থাৎ ফজরের আজানের ঠিক আগে সেহরি শেষ হলে ভালো) খেতে হবে এবং তারপর প্রচুর পানি পান করা বাঞ্ছনীয়।

৪. শারীরিক শ্রম বা ব্যায়ামসহ স্বাভাবিক শারীরিক কর্মকাণ্ড চালানো যেতে পারে। তবে খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। আর কঠোর শ্রম বিকাল বেলায় তো করা যাবেই না। তারাবি নামাজ পড়লে, তাকে শারীরিক শ্রমের বিকল্প হিসাবে ধরা যেতে পারে।

৫. প্রতিটি ডায়াবেটিক রোজাদারকে এ কথাটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোনো লক্ষণ শরীরে দেখা দেয় তারপর যতটা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্লুকোজ/চিনি/মিষ্টি জাতীয় কোনো খাদ্য, শরবত ইত্যাদি যে কোনো একটি খেয়ে নিতে হবে। যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে, তারা খুব সহজেই এর প্রাথমিক উপসর্গ চিনতে পারবেন। আর যাদের তেমন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের বুক ধড়ফড়ানি, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগা, ঘাম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা ঘোরা ইত্যাদিসহ এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের গ্লুকোজ এসময় সাধারণত প্রতি লিটারে ৩.৩ মিলিমোল) হওয়ার কথা। আবার দিন শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যদি রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মিলিমোল এর চেয়ে কমে যায়- তাহলেও কিছু খেয়ে নেওয়া জরুরি।

৬. রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।

৭. রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (সম্ভব হলে ডাবের পানি), কম মিষ্টি রসালো ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

৮. মনে রাখতে হবে, রোজার সময়ে ওষুধ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা পুরোটাই পাল্টে যাবে এবং রমজানের পর আবার নতুন করে স্বাভাবিক সময়ের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ফিরে আসতে হবে।


ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব এন্ডোক্রিনোলজি, বিএসএমএমইউ
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.