বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য: প্রেক্ষিত মেগা-প্রকল্প
একে একে করে বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের সক্ষমতার কথা জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ। মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শুরু হওয়ায় সারাদেশের মানুষ সুফল পাওয়া শুরু করেছে। উদ্বোধন হলো পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল; পাইপলাইনে আছে কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, চট্রগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনসহ উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক প্রকল্পসমূহ। সমালোচকরা উন্নয়নকে উপেক্ষা করে নানা ঝুঁকির কথা তুলে ধরে জনমনে ভুল ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে।
যেকোনো বড় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, সেটাকেই সমালোচনার প্রধান টার্গেট বানানো হয়। পদ্মা সেতুর জন্য দেশের বাইরের কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। সেতু সংশ্লিষ্ট সড়ক ও রেলসংযোগ এর জন্য কিছু ঋণ নেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা এ সময়ে এসে অন্যান্য ঋণের বিষয়টি তুলে আনছেন, মাথাপিছু ঋণের হারের কথা বলছেন। পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পের সমালোচকরা উদাহরণ হিসেবে সমসাময়িককালে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ভয় দেখান।
একটি দেশের উন্নয়ন বা দারিদ্র দৈবাৎ কোনো ঘটনা নয়। ম্যাক্রো-ইকোনোমির নানা চলক বিশ্লেষণ করে একটি দেশের অর্থনৈতিক অতীত-বর্তমান বিশ্লেষণ ও অদূর ভবিষ্যৎ অনুমান করা যেতে পারে। একটি দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে এর বিনিয়োগ-জিডিপি রেশিও, ঋণ- জিডিপি রেশিও, পপুলেশন ডিভিডেন্ট কিংবা- মুদ্রাস্ফীতি জিডিপির প্রবৃদ্ধির তুলনায় কেমন করছে তার হিসাব। দেশটি অনুন্নত হলে আসলে সে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের ভিত্তিটা কেমন তৈরি করছে, সেটার ভিত্তি যত শক্ত হবে তার ওপর তার ওপরে উঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নত দেশ হতে টানা ২৫/৩০ বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬% এর ওপর থাকা দরকার। প্রবৃদ্ধি জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। এর একটি আদর্শ মাত্রা হলো জিডিপির ২৫-৩৫%। কম হলে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে, বেশি হলে তারল্য সংকটসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক বাবল তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সাথে জিডিপির অনুপাত বর্তমানে প্রায় ৩১.৭% এবং এই প্যারামিটারে দেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্যকর অবস্থান ধরে রেখেছে।
দেশের ঋণস্বাস্থ্যের পরিমাপক হচ্ছে ডেট (ঋণ) টু জিডিপির অনুপাত। ডেট-টু-জিডিপির এই রেশিও যত বেশি, একটি দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকির পরিমাণও তত বেশি। বিশ্বব্যাংকের ২০১৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, একটি দেশের ডেট টু জিডিপির রেশিও লম্বা সময়ের জন্য ৭৭% এর বেশি হলে ওই দেশের অর্থনৈতিক গতি স্তিমিত হয়ে যেতে পারে। অর্থনীতিবিদ লেখক রুচির শর্মা ইতিহাসের নানা সময়কালে নানা দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণ করে তার 'দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য নেশনস' বইতে একটি দেশের ডেট-টু-জিডিপির রেশিও টানা ৫ বছর ৪০% হলে ওই দেশের অর্থনীতিকে সতর্ক অবস্থান গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থাৎ, দেশের মোট উৎপাদন বা অর্থনীতির আকার ১০০ টাকা আর ঋণের পরিমাণ ৪০ টাকা হলে একটু সতর্ক হতে হবে। আর ৭৭ টাকা হলে ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশের ঋণ জিডিপির রেশিও ৪২.৫% (প্রায়), শ্রীলঙ্কার ১০৭%। শ্রীলঙ্কার এ রেশিও ১০০% এর আশেপাশে ঘুরাফেরা করছে গত ৬-৭ বছর ধরেই। অর্থাৎ, তারা আগে থেকেই ঝুঁকিতে ছিল।
ডেট-টু-জিডিপি রেশিও-তে একটা কাউন্টার ইন্টুইটিভ ট্রিক রয়েছে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এ তত্ত্ব প্রযোজ্য হলেও উন্নত, শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য এটি খুব বেশি প্রযোজ্য না। যেমন জাপান, ইউএস, সিঙ্গাপুর, ইতালি দেশগুলোর ডেট টু জিডিপির রেশিও যথাক্রমে ২৬০%, ১২৮%, ১৩১%, ১৫৬%। অর্থাৎ, উন্নত স্থিতিশীল অর্থনীতি বড় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে পারে, সমস্যা হয় না। তাদের নিশ্চিন্তে থাকার ব্যাখ্যা হলো- এ ঋণের অধিকাংশ নেওয়া হয় অভ্যন্তরীন উৎস হতে। অনুন্নত দেশে এ কাজ করতে গেলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, তারল্য সংকট দেখা যায়। অন্যদিকে, আফগানিস্তান, কঙ্গো, ফিলিস্তিনের ডেট টু জিডিপির রেশিও যথাক্রমে ৮%, ১৫%, ১৬%। অর্থাৎ, অর্থনীতি অতি দুর্বল হলে আপনাকে কেউ ঋণ দেবে না বা ঋণ নিয়ে সঠিকভাবে কাজ তুলে আনা সম্ভব হবে না। কিংবা ঋণ না নিলে নিজের টাকায় খুব বেশি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যেসব অর্থনীতি তেল-গ্যাস-খনিজের ওপর নির্ভরশীল যেমন- ব্রুনেই, রাশিয়া, কুয়েত- এসব দেশের আসলে ঋণের প্রয়োজন হয় না। তাই এদের রেশিও থাকে কম- সিঙ্গেল ডিজিটের কাছাকাছি।
ঋণ ঝুঁকির মাধ্যমে অর্থনীতির স্বাস্থ্য বোঝার আরেকটি পরিমাপক হচ্ছে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ। বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ঘাটতি দেখা যায়, তখন দেশি-বিদেশি উৎস্য হতে ঋণ করতে হয়। বিদেশ থেকে নিলে সুবিধা ঋণের সুদের হার কম, ডলার হিসেবে পাওয়া যায়, রিজার্ভের ওপর তাৎক্ষণিক চাপ কম পড়ে। দেশ থেকে নিলে সুদ বেশি। দেশ থেকে সরকার আবার দুভাবে ঋণ নেয়- ব্যাংক থেকে ও ব্যাংক বহির্ভূতভাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ, টাকা প্রিন্ট বা বেসরকারি ব্যাংক হতে সরকার বেশি ঋণ নিয়ে ফেললে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ভাগ কম পড়ে যায়, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যায়, তখন উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়; মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। ব্যাংকের বাইরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার টাকা সংগ্রহ করে থাকে। তবে এগুলোর জন্য পরে অনেক চড়া সুদে টাকা ফেরত দিতে হয়। পরের বছরের বাজেটগুলোতে এ ধরনের ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতেই বাজেট থেকে প্রচুর টাকা বের হয়ে যায়। তাই উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলো সাধারণত খুব বিপদে না পড়লে নিজ টাকায় বেশি বড় প্রকল্প হাতে নেয় না, বরং কিছু বা পুরোটা বিদেশি কারেন্সিতে ধার করে। তবে পদ্মা সেতুতে ৭-৮ বছর ধরে ধাপে ধাপে ৩০ হাজার কোটি টাকা যোগান দিতে হয়েছে বলে অর্থনীতির ওপর বড় কোনো ধাক্কা আসেনি।
ঋণ করে ঘি খাওয়া অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন। তবে পরিমিত খাওয়া উপাদেয়। নিজদের যা আছে, তার বাইরে অন্যদিক থেকে কর্জ করে নিয়ে কাজ করলে সক্ষমতার বেশি কাজ করা যায়, নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ে না। দেবার পরিকল্পনা ও সক্ষমতা থাকলে পরিমিত ঘাটতি ঋণ সবাই করে, তবে এর আন্তর্জাতিক একটি মানদণ্ড আছে। উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫% থাকা স্বাস্থ্যকর। বাংলাদেশ সর্বাদাই এটা মেনে চলেছে এখনো পর্যন্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫.৫%, শ্রীলঙ্কার ১৩%, ভারতের ৯%।
কোনো দেশের স্বাস্থ্যকর অর্থনীতির লক্ষণ হচ্ছে লম্বা সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতি। প্রবৃদ্ধির হার মুল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হওয়া চাই। অন্যথায় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়- অর্থনীতির পলিসি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে কাজ করে না। অর্থনীতি আরো গর্তে পড়ে যায়। টানা পাঁচ বছর ধরে প্রবৃদ্ধির তুলনার মুদ্রাস্ফীতি অধিক থাকা একটি অশনি সংকেত। যেকোনো সময় উন্নয়নের বাবল ফেটে যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনা ঝুঁকি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ার আগে বাংলাদেশ গত এক দশক ধরেই জিডিপি গ্রোথ ৬-৭% এর ওপর এবং মুদ্রাস্ফীতি ৫-৬% এর আশেপাশে রাখতে সক্ষম হয়েছে- এ সূচকটি দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার কথা জানান দিচ্ছে।
এবার আসল কথায় আসি। পদ্মা সেতুর, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মত মত বড় প্রজেক্ট নেওয়ার আগে সরকার অর্থনৈতিক সমীক্ষা করে থাকে, এগুলোর মধ্যে প্রধান টুলগুলো হলো বেনেফিট কস্ট অ্যানালাইসিস, নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু (এনপিভি), ইন্টারনাল রেইট অফ রিটার্ন (আইআরআর) এর হিসেবগুলো। উদাহরণ হিসেবে, পদ্মা সেতুর জন্য সেতু বিভাগ ও বিশ্বব্যাংকের সমন্বয়ে একটি গবেষণা হয়েছিল প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। এজন্য বেনেফিট কস্ট অ্যানালাইসিস করে ২ ভাগে অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথমত, প্রচলিত সিস্টেমের পরিবর্তে সেতু ব্যবহার করলে সময়, জ্বালানি, কর্মঘণ্টা হিসাব করে কী পরিমাণ টাকা বেঁচে যায় বা অতিরিক্ত আয় হয়। দ্বিতীয়ত, সেতু চালু হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাবকে গোনায় ধরে আলাদা হিসাব করা হয়েছে। দুধরনের আয়কে একসাথে হিসাব করে মোট বেনেফিট পাওয়া যায়। এটিকে টোটাল কস্ট দিয়ে ভাগ করে এ ধরনের একটি প্রজেক্টের ফিন্যান্সিয়াল ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। অর্থাৎ, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা পোর্ট, রাজাপাকসে পোর্ট, স্টেডিয়াম, এয়ারপোর্ট এগুলোর কস্ট বেনেফিট অ্যানালিসিস, এনপিভি, আইআরআর ইত্যাদিকে কাল্পনিক হিসেবে ধরা হয়েছে বা নেগেটিভ ভ্যালু ইচ্ছে করে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে, এসব প্রকল্প শ্রীলঙ্কার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বড় ও ছোট প্রকল্পগুলো দেশের অর্থনীতিকে টানা ১২-১৫ বছর ধরে জিডিপি গ্রোথ রেট ৬% এর ওপর ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। রোডস ও হাইওয়ে, এলজিইডি , ত্রাণের রাস্তা-সেতুগুলো একদম প্রত্যন্ত গ্রামে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করে অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করতে সাহায্য করেছে। পদ্মা সেতু জিডিপির প্রবৃদ্ধির রেটকে ১.৩ শতাংশ বাড়িয়ে নেবে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে এটি মুদ্রাস্ফীতি রোধ করবে এবং জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ভাগ্য পরিবর্তন করবে।
একটি উন্নয়নশীল দেশ সাধারণত কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি হতে শ্রমবহুল ইন্ডাস্ট্রিতে এগিয়ে যায়, এরপরের ধাপ হল লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। উন্নয়নের সর্বশেষ ধাপ হল ভারী শিল্পকারখানা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ। একধাপ বাদ দিয়ে অন্যধাপে গেলে প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না।
সরকারের কাজ বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা, এসব শিল্পের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রাস্তা, ব্রিজ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ সরবরাহ তৈরি করে দিলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে সরকার বেশি বেশি কর, শুল্ক, ভ্যাট, চার্জ নানাভাবে অতিরিক্ত অর্থ আয় করতে পারে। এটি একটি চক্র। এ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আরো বেশি উন্নয়ন করা যায়। আবার রাস্তা , ব্রিজ, সি-পোর্ট, এয়ার-পোর্ট না করলে উন্নয়ন থমকে যায়। সরকারের হাতে রাজস্ব আসবে কম। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরসহ যেকোনো বড় প্রকল্প এই চক্রে পজিটিভলি কাজ করবে, দেশকে এগিয়ে নেবে। বিনিয়োগ জিডিপি রেশিও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না আসলে এ ধরনের বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে না; রাস্তা, ব্রিজ, সি-পোর্ট, এয়ার-পোর্ট, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, বিদ্যুৎ ইত্যাদির সামগ্রিক অবস্থা ভাল রাখা সম্ভব হবে না। ফলে, বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত গতি ধরে রাখতে পারবে না। অর্থাৎ, সরকারকে যেকোনোভাবে বাজেটে উন্নয়ন খাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকার সংস্থান রাখতে হচ্ছে; বাংলাদেশ এ কাজটি দীর্ঘদিন ভালোভাবেই করে আসছে এবং সুফল পাচ্ছে।
সারমর্ম হলো, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বড় প্রকল্পসমূহের উদ্বোধনের আনন্দকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য অর্থনীতি ধসে যাওয়ার ভয় দেখানো আজগুবি। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার বন্দর আর পদ্মা সেতুর যোগসূত্র দেখানো হচ্ছে অনেকটা রূপকথা গল্প বলে বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার মত।
তবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর একেকটি রূপকথা। উন্নয়ন অর্থনীতির এ রূপকথা অব্যাহত থাকুক।