সন্তানের অভিভাবকত্বের প্রশ্নে আরো মানবিক হোক আমাদের আইন

মতামত

01 August, 2022, 05:10 pm
Last modified: 01 August, 2022, 05:10 pm
কুলসুম বেশিদিন থাকতে পারেনি। গভীর হতাশা ওকে গ্রাস করতে শুরু করে। আমরা নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। প্রায় দুই-তিন বছর পর খবর পেলাম, কুলসুম নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

কুলসুম যখন আমাদের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে এলো, তখন ওর বয়স ছিল সম্ভবত ১৬/১৭ বছর। মেয়েটা প্রায় সারাদিন কাঁদতো কাজের ফাঁকে ফাঁকে। এইভাবে ওকে কাঁদতে দেখে জানতে চাইলাম কেন এত কাঁদো? উত্তরে যা বলল তা শুনে সাংঘাতিক মন খারাপ হয়ে গেল। 

বিয়ের পর যৌতুক দিতে পারেনি বলে বছরখানেক সংসার করার পর ওকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন সে ছিল গর্ভবতী। বাচ্চাটা হওয়ার পর, জোর করে শ্বশুরবাড়ির লোক এসে নিয়ে গেছে ওকে শাস্তি দেয়ার জন্য। কুলসুমরা দরিদ্র বলে কিছু করতে পারেনি। এখনো বুকের দুধ পড়ে; ওর কাপড় ভিজে যায়। আর সারাদিন বাচ্চার কথা মনে পড়ে।

কুলসুম বেশিদিন থাকতে পারেনি। গভীর হতাশা ওকে গ্রাস করতে শুরু করে। আমরা নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। প্রায় দুই-তিন বছর পর খবর পেলাম, কুলসুম নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

মেহরীন (ছদ্মনাম) ভালো চাকরি করে। বিয়ের ৮ বছর পর ছেলে হয়েছে। স্বামীর নানা অত্যাচার সহ্য করেও মেহরীন চুপ করে থেকে গেছে ঐ বাসাতেই। কারণ স্বামী প্রভাবশালী এবং অর্থশালী। বলেছে যেতে পার, কিন্তু বাচ্চাকে কোনোদিন নিতে পারবে না। মেহেরীন বলেছে, শুধু বাচ্চাকে হারাতে হতে পারে এই ভয়ে সবকিছু মেনে নিয়েছি এবং নিচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের ডিপার্টমেন্টের ছোট বোন নাঈমাও চলে গেল- এই সন্তান হারানোর শোক সহ্য করতে না পেরে। দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাবার পর বাচ্চার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে দিতো না ওর প্রাক্তন স্বামী। কোভিডের অজুহাত দেখিয়ে একপর্যায়ে বাচ্চার সঙ্গে মায়ের দেখা বন্ধ করে দিল। 

এবার বাচ্চার সাক্ষাৎ পেতে আদালতের দ্বারস্থ হলো নাঈমা। কিন্তু, তা-ও বাচ্চাকে নিয়ে স্বামী আদালতে আসতো না। পুলিশকে বলেও কোনো সাহায্য পায়নি। ইমিগ্রেশন পুলিশকেও জানিয়েছিল- যাতে সন্তানকে নিয়ে ওর বাবা বিদেশে চলে না পারে। তারপরও একদিন জানতে পারলো বাচ্চা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে তার প্রাক্তন স্বামী।

বাচ্চা হারানোর আঘাত সামলানো সম্ভব হয়নি নাঈমার পক্ষে। একটা কর্মজীবী উজ্জ্বল মানুষ নাই হয়ে গেল। একজন সিঙ্গেল মাদারের বিপক্ষে এই রাষ্ট্র, সমাজ, আইন এবং পরিবারও। এরকম আরো বহু ঘটনার কথা লেখা যেতে পারে। সমাজের উপর তলা থেকে নীচতলা, শিক্ষিত থেকে নিরক্ষর সব নারীর একই ভাগ্য, একই প্রাপ্তি।

বাংলাদেশে তালাকের হার বাড়ছে বিভিন্ন কারণে। ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিন ৩৯টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৭০ ভাগ নারীই তালাকের আবেদন করেছেন। নারী বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন বেশি করলেও, তাকেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বেশি। সামাজিক হেনস্থা ছাড়াও সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়া নিয়েও সমস্যা হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার মত ঘটনাও প্রচুর ঘটে। 

নারী সবচাইতে বেশি বিপদে পড়েন সন্তানকে কাছে পাওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ তখন বাবা, যিনি একজন পুরুষ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি চান বাচ্চাকে আটকে রেখে স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে। যে শাস্তির বলি হতে হয় নাঈমা, কুলসুম এবং মেহেরিনের মতো অনেক মেয়েকে।

তালাকের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা। ব্রোকেন ফ্যামিলির শিশুর মূলত কোনো আশ্রয় বা নিরাপত্তা থাকে না। অভিভাবকত্ব নিয়ে বাবা-মায়ের টানাটানি তাদেরকে মানসিক দিক থেকে খুব দুর্বল করে তোলে। তাদের বেড়ে ওঠাও হয় অস্বাভাবিক। 

এই সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রায় সবক্ষেত্রে বাবা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। এই আইনের আওতায় সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং জিম্মাদারীকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়।
  
তবে সাধারণ ক্ষেত্রে  সন্তানের দেখাশুনা, অভিভাবকত্ব এবং ভরণপোষণের বিষয়গুলো "অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ এবং পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ" অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইন অনুযায়ী, অভিভাবক বলতে যে ব্যক্তি কোনো নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তির বা শরীর ও সম্পত্তি দুইয়ের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত থাকবে- তাকে বুঝাবে।

বাাংলাদেশে আইন অনুযায়ী, তালাক হলে এবং তাদের ছেলে সন্তান সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে। এক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সবার আগে স্বীকৃত। বাবা আইনগত অভিভাবক হলেও, মা সন্তানের হেফাজতকারী। তবে মুসলিম আইনে মা সন্তানের আইনগত অভিভাবক নন, আইনগত অভিভাবক বাবা। মা শুধু জিম্মাদার বা হেফাজতকারী।

এসময় বাবা তার সন্তানের সাথে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ের পর, সন্তানদের তার বাবা চাইলে নিয়েও যেতে পারেন। তবে নির্দিষ্ট বয়সের পর সন্তানের জিম্মাদারী যদি কোনো মা রাখতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে আদালতে আবেদন করতে হবে। তবে বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো ঝামেলা না থাকলে সন্তান দুজনের কাছেই নিয়ম করে থাকতে পারে।

দেখা করার অনুমোদন থাকলেও, যদি বাবা কিংবা মাকে দেখা করতে না দেয়া না হয়, তাহলে যাকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না- সে আবার বিষয়টি নিয়ে আদালতে যেতে পারে। যেমনটা গিয়েছিল নাঈমা। কিন্তু নাঈমার ক্ষেত্রে দেখতে পেলাম, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেছে নাঈমার সন্তানের বাবা। আর এজন্য তার কোন শাস্তিও হয়নি।

সেক্ষেত্রে আইনের কোনো সহায়তা মা পায়নি। মাকে না জানিয়ে, বাবা কি তার নাবালক সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে যেতে পারেন? পারেন না। কিন্তু নাঈমার প্রাক্তন স্বামী ক্ষমতাবলে তাই করেছে। এর ফলে নাঈমা ওর একমাত্র অবলম্বন সন্তানকে কাছে না পেয়ে সিভিয়ার স্ট্রোক করে মারা গেল।

সাধারণত সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবে আদালত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আদালত সাধারণত চায় যে, সন্তানের হেফাজতের ক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেই থাকুক। তবে ধরে নেয়া হয় যে মায়ের কাছেই সন্তানরা বেশি ভাল থাকবে। কারণ একজন মা তার সন্তানকে যেভাবে যত্ন ও খেয়াল রাখতে পারবেন, একজন বাবার জন্য তা কঠিন হয়। কিন্তু এরপরেও শুধুমাত্র নিজের আধিপত্য দেখানোর জন্য এবং মাকে কষ্ট দেয়ার জন্য বাবা বা তার পরিবার এটা করে থাকে। 

তবে মা যদি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হন তাহলে সেটি মামলাকে দুর্বল করে তোলে। আদালত বাবা-মায়ের চরিত্র, কোনো অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, মাদকাসক্ত কিনা- এইসব বিবেচনায় নেয়। 

বাংলাদেশে নারীর অবস্থান সবদিক দিয়ে দুর্বল বলে সন্তানের হেফাজত পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা সবসময় পরাজিত হন। কোন বাবা যদি ইচ্ছে করে সন্তানকে মায়ের জিম্মায় ফেলে চলে যায় বা আবার বিয়ে করে, তখন মা অনায়াসেই সন্তানের দায়িত্ব পেয়ে যান। 

সাধারণত দরিদ্র ঘরে বা গ্রামীণ সমাজে এরকম বেশি দেখা যায়। এইসব পরিবারে মায়েরা বাচ্চাকে নিয়েই জীবনযুদ্ধে নেমে যান। দেখবেন কোলে বাচ্চা নিয়েই অসংখ্য শ্রমজীবী মায়েরা ঢাকায় কাজ করছেন।

এরকম দরিদ্র ঘরের মেয়ে হয়েও কুলসুম কিন্তু বাচ্চার জিম্মাদারী পায়নি। কারণ সেখানে তার স্বামী যৌতুক পাওয়ার অস্ত্র হিসেবে কুলসুমের নবজাতক সন্তানকে ব্যবহার করেছে, অভিভাবকত্ব পাওয়ার জন্য নয়। মেহেরীন যে স্বাবলম্বী নারী হয়েও স্বামীর অত্যাচার মেনে নিচ্ছে, সেওতো সেই সন্তানের জন্যই।

তাই আমরা মনে করি, নাঈমার মত যারা আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক ও অসংবেদশীল সিস্টেমের সাথে লড়ে যাচ্ছেন- তাদের জন্য কিছু করা উচিৎ। সন্তানের ওপরে বাবা-মায়ের সমান অধিকার থাকা উচিৎ। অভিভাবকত্বের অধিকার পাবার লক্ষ্যে আইনের নারী-বিদ্বেষী ধারাগুলো পরিবর্তন করা জরুরি।

অনেক আইন করার ক্ষেত্রে ও পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের আইনকে অনুসরণ করে থাকে। সেদিন ডয়েচে ভেলের খবরে দেখলাম, সন্তান প্রশ্নে মানবিক হচ্ছে ভারতীয় আইন। 

ভারতের আইনি ব্যবস্থা বেশ জটিল। জটিলতার কারণ হলো- ভারতে একটি নয়, একাধিক পার্সোনাল আইন আছে প্রতিটি ধর্মের মানুষের জন্য। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও পার্সোনাল আইন- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মভিত্তিক। আর এই পার্সোনাল আইন অনুসারে বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার সবকিছু নির্ধারিত হয়।

হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নিচে হিন্দু শিশুর অভিভাবকত্ব পাবে তার মা। বর্তমানে আদালতের রায়ে বাবা-মা দুইজনকেই আইনগত অভিভাবকত্ব দেয়া হয়, যাতে দুইজনের সঙ্গেই শিশুর যোগাযোগ থাকে। একক অভিভাবকত্বের প্রশ্নে মাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। যদি মা সম্মতি দেন বা অসমর্থ হন কিংবা শিশু যদি ১৩ বছরের বেশি হয় এবং নিজে সিদ্ধান্ত নেয়– এমন ক্ষেত্রে বাবা অভিভাবকত্ব পেতে পারেন। 

ভারতের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারে, তারা এমন রায় দিতে পারে যা নজির হয়ে থাকে। ভারতে সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ১৯৫৬ সালের আইনের বিষয়ে অনেক মামলা হওয়ার পর আদালত রায় দিয়েছেন, বাচ্চার স্বার্থ সবার উপরে। তাই বাচ্চার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে জানিয়েছেন আদালত। 

২০২২-এর জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় হলো, বাচ্চা কার অধিকারে থাকবে– সেখানে একটাই মাপদন্ড থাকবে। বাচ্চার কল্যাণ যিনি সবচেয়ে বেশি করতে পারবেন, তার কাছেই সন্তান থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের মতে, সন্তানের অধিকার সংক্রান্ত আইন এখানে অবান্তর।

কেন অবাস্তব তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারপতিরা। তারা বলেন, সন্তানের অধিকার– সে বাবা না মা– কার কাছে থাকবে; তা ঠিক করার কোনো স্ট্রেট জ্যাকেট ফর্মুলা নেই। এটা একটি জটিল মানবিক বিষয়। সেখানে একটাই কষ্টিপাথর থাকবে, তা হলো- বাচ্চার কল্যাণ কে সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারবে। 

২০২২-এর জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাচ্চা তো বাবা-মা দুজনেরই কাছে থাকতে পছন্দ করবে। যদি একান্তই বাবা ও মা একসঙ্গে থাকতে না পারেন, যদি বিচ্ছেদ করতেই হয়; তাহলে বাচ্চার অধিকার থাকবে, বাবা ও মা দুজনের কাছেই যাওয়ার এবং বাবা ও মা দুজনেরই ভালোবাসা আর স্নেহ পাওয়ার। 

এভাবেই সুপ্রিম কোর্ট এখন ভারতে এটাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন, বাবা অথবা মা, যার কাছেই সন্তান থাকুক না কেন, দুজনের স্নেহ, ভালোবাসা সে পাবে এবং দুজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবে, থাকতে পারবে। ফলে বাবা অথবা মা কেউই সন্তানকে পুরোপুরি কুক্ষিগত করতে পারবে না। আইন থেকে বেরিয়ে এসে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো বিষয়টি দেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। আর তার ফলে বাচ্চারা বেঁচে গেছে। 

শুধু ভারত নয়, পাকিস্তানও ১৮৯০ সালের আইন সংশোধন করে ২০২২ সালে নতুন 'গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ২০২০' পাস করেছে। এই আইন অনুযায়ী, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে সাত বছর বয়স পর্যন্ত শুধু মা অভিভাবকত্বের অধিকার পাবেন। আর মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো বা ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। এক্ষেত্রে মা অসমর্থ হলে যথাক্রমে নানি, দাদি, বোন, খালা, ফুপুসহ নারী আত্মীয়রা অভিভাবকত্ব পাবেন। 

'আফগানিস্তানের সিভিল ল' অনুযায়ী, ছেলে শিশু সাত বছর ও মেয়ে শিশু নয় বছর পর্যন্ত দেখাশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মায়ের। নির্দিষ্ট বয়সের পর অভিভাবকত্ব পায় বাবা অথবা বাবার দিকের কোনো পুরুষ আত্মীয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাচা বা চাচাত-ফুপাত ভাইরাও আইনত অভিভাবকত্বের অধিকার পেতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে শিশুর স্বার্থই আগে বিবেচনা করা হয়। শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসহ 'শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে' অগ্রাধিকার দেয়া হয়। 

অ্যাডভোকেট মিতি সানজানা গণমাধ্যমকে বলেছেন, হেফাজত বা জিম্মাদারী দেয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের মতামতের গুরুত্ব সবসময়ই থাকে। তবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের ভয় দেখানো বা প্রভাবিত করা হয়। আর সেকারণেই বাচ্চাদের সম্মতি নেয়া হলেও- আদালত বোঝার চেষ্টা করেন যে, সে কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা।

সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে লড়াই করছে অনেক নারী। সন্তানকে পাওয়ার লড়াইয়ে নারী কি পরাজিত হতেই থাকবে?

নারীবিরোধী এই ব্যবস্থাটাকে, কালা কানুনকে কি আমরা পাল্টাতে পারব না? আইন আদালতের ও সামাজিক বিধান প্রতিটি অনুষঙ্গ এই লড়াইয়ে মায়ের বিপক্ষে থাকে। উপরন্তু মাকে সন্তানের চোখে মন্দ হিসেবে দেখানো হয়– যাতে সন্তান মায়ের কাছে যেতে না চায়।

বাংলাদেশেও আধুনিক চিন্তা, মায়ের মনস্তাত্ত্বিক  দিক, সন্তানের ভবিষ্যত, নিরাপত্তা, বাবা-মায়ের দুজনের সমান অধিকার বিবেচনা করে যদি কোন আইনি পরিবর্তন আনা যায়, তাহলে অন্ততপক্ষে অনেক নাঈমারা বেঁচে যাবে।


  • লেখক: শাহানা হুদা রঞ্জনা, সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। 

.

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.