শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি ভবন ও বাস্তিল দুর্গের পতন

মতামত

19 July, 2022, 06:50 pm
Last modified: 19 July, 2022, 06:54 pm
শ্রীলঙ্কার জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ আমাদের আশাবাদী করলেও রাজনৈতিক বিজ্ঞানের সেই অমোঘ প্রবাদ ‘বিপ্লবের পরেই আসে প্রতি-বিপ্লব’ কিন্ত উপেক্ষনীয় নয়। ‘সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা’ উচ্চারণের অমন ফরাসী বিপ্লবের পরও আবার পারিতে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

চার্লস ডিকেন্সের অমর উপন্যাস 'আ টেল অফ দ্য টু সিটিজ'-এ ফরাসী বিপ্লবের সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে কিভাবে ক্ষুব্ধ বিপ্লবীরা নিপীড়ক শাসক ও অভিজাতদের গিলোটিনে চড়িয়েছে, তার এক অসামান্য বিবরণ আছে। 

উপন্যাসটির বাইশতম অধ্যায়ে ডিকেন্স লিখছেন :'বাস্তিল পতনের এক সপ্তাহের ভেতর বিপ্লবীরা জানতে পেল যে ফ্যুলোঁ, এক ঘৃণিত রাজকীয় কর্মচারী যাকে তারা ভেবেছিল যে মারা গেছে, আসলে এখনো বেঁচে এবং তখনি তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। 

এই ফ্যুলোঁ যে কিনা বলেছিল যে অনাহারী জনতা চাইলে ঘাস খেতে পারে, বিপ্লবের পর বিপ্লবীদের হাত থেকে বাঁচতে নিজের মৃত্যুর মিথ্যে খবর প্রচার করেছিল। কিন্ত মরার বদলে ফ্যুলেঁ আসলে হোটেল দ্যু ভিল-এ আছে জানতে পেরে মাদাম দোফার্জ ক্রুদ্ধ জনতার এক বাহিনী নিয়ে গেলেন সেই হোটেলে। দোফার্জের সহায়তায়, দ্য ভেনজিয়ন্স (মাদাম দোফার্জের সহকারী) এবং জাঁক থ্রি-এর নেতৃত্বে ক্ষুব্ধ জনতা ফ্যুলোঁকে গ্রেপ্তার করে তার মুখে ঠুসে দিল ঘাস, এবং তারপর তাকে ঝুলিয়ে দেয়া হলো একটি ল্যাম্প পোস্ট থেকে। 

ফ্যুলোঁর মৃত্যুর পর তার মস্তক কর্তন করে একটি বর্শায় গাঁথা হলো সেই মুন্ডুটি। তারপর এই বিক্ষুব্ধ জনতা পারি শহরে কড়া নিরাপত্তারক্ষীদের পাহারায় থাকা ফ্যুলোঁর জামাতাকেও গ্রেপ্তার করলো। শশুরের মত তাকেও হত্যা করে তার মস্তক ও হৃতপিন্ড বর্শায় গাঁথা হলো। ক্ষুব্ধ জনতার সেই দলে থাকা সব নর-নারী রাতে ঘরে ফিরলো তখনো ক্ষুধার্ত অবস্থায়- তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা ছিল সুখী ও আশাবাদী।'

ডিকেন্সের ''আ টেল অফ টু সিটিজ' বাংলা অনুবাদে পড়া হয়েছিল খুবই অল্প বয়সে। হয়তো সেসময় পুরো আখ্যান বোঝার মত বয়সও হয়নি এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর। গিলোটিনে রাজন্য ও অভিজাতবর্গকে হত্যার বিবরণ পড়তে পড়তে শিশু মন মাঝে মাঝে বাকরুদ্ধ হয়ে উঠলেও বড় হতে হতে ত' জেনেই গেছি মাও সে তুংয়ের সেই বহুশ্রুত বাণী যে  'বিপ্লব কোন ভোজসভা নয়, বা প্রবন্ধ রচনা বা চিত্রাঙ্কন কিংবা সূচীকর্ম নয়; এটা এত সুমার্জিত,এত ধীর-স্থির ও সুশীল , এত নম্র, দয়ালু, বিনীত, সংযত ও উদার হতে পারে না। বিপ্লব হলো বিদ্রোহ- উগ্র বলপ্রয়োগের কাজ। যার দ্বারা একশ্রেণী অপর শ্রেণীকে উৎখাত করে।' 

যাহোক, ডিকেন্সের সেই অমর আখ্যান পাঠের স্মৃতি দীর্ঘ সময়ের পরিসর পেরিয়ে অল্প অল্প যা মনে আছে সেই সামান্য স্মৃতিই প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিল যখন টেলিভিশনের পর্দায় শ্রীলঙ্কার বিক্ষুব্ধ জনতাকে আমরা দেখলাম সরাসরি রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে ঢুকে পড়ে মহামান্যের ব্যক্তিগত সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছে, তামিল-মুসলিম-সিংহলী বৌদ্ধ জনতা বা প্রকৃতিপুঞ্জের রক্ত ও ঘামের সঞ্চিত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিক্ষুব্ধ জনতা হাতে করে গুণছে। 

অ-লুটেরা ও শৃঙ্খলাপরায়ণ এই বিদ্রোহী জনতা টাকা গোণার ছবি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেছে। তারপর যেন বা এতদিনের জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে থাকা দু:শাসনকে কৌতুক করতে করতেই তারা ছুটে যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের জিমে এবং ব্যায়াম করছে। অনেকে আবার রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের উদ্যানের ঘাসে শুয়ে পড়ছে।

সোজা কথায়, গিলোটিনে না চড়ালেও সারা পৃথিবীর অবাক মানা জনতাকে শ্রীলঙ্কার জনগণ দেখালো যে কিভাবে শাসক অপশক্তিকে কৌতুকও করা যায়, কিভাবে ইতিহাসের সেই যুগসন্ধিক্ষণ আমাদের সামনে একটি মূহুর্তে উপস্থিত হয় যখন হাজারো সেনা প্রহরা বা পুলিশ প্রটোকল ভেঙ্গে একটি দেশের নারী-পুরুষ সবাই মিলে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে ঢুকে পড়তে পারে। 

এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কেবলি মনে পড়ছিল ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। স্বৈরাচারী এরশাদ যে কখনো ঘাড় থেকে নামবে, এটা ভাবতে পারিনি। কি আনন্দ আমরা সবাই পেয়েছিলাম। রাতের ঢাকার পথে শুধু পুরুষ নয়, মেয়েদেরও ঢল নেমেছিল। একেই বলে 'ডেমোস' বা 'দশের শাসন' ; সব মাৎস্যন্যায় সরিয়ে প্রকৃতিপুঞ্জ বা জনতার উত্থান। শৈশবের সেই পাঠস্মৃতির রেশ যেন না মিলায়, তাই বইয়ের দোকান পর্যন্ত দৌড়ানোরও তর সইলো না। 'প্রজেক্ট গুটেনবার্গ'-এ সার্চ দিয়ে পেয়ে গেলাম 'আ টেল অফ ট্যু সিটিজ'-এর মূল ইংরেজি সংস্করণ। ডাউনলোডও করে ফেললাম। জমিয়ে রাখলাম আমার ই-বইয়ের আর্কাইভে। 

আবেগের কথা অনেক লিখলাম। এবার একটু দৃষ্টি ফেরানো যাক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকার বিশ্লেষণের দিকে। 'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস'-এ আফগান বংশোদ্ভুত রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুজিব মাশাল তাঁর ১৩ই জুলাই তারিখে প্রকাশিত ও ১৪ই জুলাই তারিখে পরিমার্জ্জিত প্রবন্ধ 'হেয়ার ইজ হাউ শ্রীলঙ্কা রিচড দিজ মোমেন্ট অফ ক্রাইসিস'-এ 

কীভাবে দুই কোটি বাইশ লক্ষ মানুষের এই দ্বীপ-রাষ্ট্রটি অতীতে এক সময়ের অর্থনৈতিক সাফল্যের দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠা ও উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণিসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর সর্বোচ্চ গড় আয়ের রাষ্ট্র থেকে আজ নগদ টাকাহীন, প্রান্তিক অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরা এক জাতিতে পরিণত হলো, সেটা দেখিয়েছেন। দুর্বল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, মাত্রা ছাড়া ব্যয় এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় অতীতের এই সফল হতে থাকা রাষ্ট্রটির আজ এই হাল। 

বিগত প্রায় এক দশকে শ্রীলঙ্কায় এক স্ফীত রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক খাত, বিপুল সামাজিক কল্যানমূলক নানা প্রকল্প যার খরচ যোগানো রাষ্ট্রটির পক্ষ কঠিন হয়ে পড়ছিল, প্রথমে তামিল ও পরে মুসলিম জনতার বিক্ষোভকে দমাতে এক বিশাল সেনাবাহিনী পালন এবং যুদ্ধোত্তর প্রচুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়ার সাথে তাল মিলিয়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। ফলে ক্রমাগত বিদেশী দেনার প্রতি নির্ভর হতে হয়েছে এই দেশটিকে। 

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় খাবার ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে দেশে জনতার ক্রমাগত বিক্ষোভে অবশেষে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়ে রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। প্রায় রাজবংশের মত তাঁর যে পরিবারকে গোটা দেশের শাসনের নানা পদে জুড়ে দেয়া হয়েছিল, সেটাও বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের খড়ে আগুন জ্বেলেছে। 

'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস' পত্রিকায় শ্রীলঙ্কায় জনগণ বা প্রকৃতিপুঞ্জের এই বিজয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণী মুজিব মাশাল সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন: 

১. ২০২০-এর সূচনা নাগাদ শ্রীলঙ্কায় প্রচুর অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। করোনার কারণে রাষ্ট্রটিকে সমুদ্র সৌন্দর্য ভিত্তিক পর্যটন শিল্পের সব সীমান্ত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রাখতে হয়। ফলে পর্যটন শিল্প ধ্বসে পড়ে এবং দেশটির রাজস্ব উপার্জন হুমকির মুখে পড়ে। 
২. জৈব কৃষির বিকাশের আশায় রাষ্ট্রটির সরকারী কর্মকর্তারা কৃত্রিম সার বন্ধ করে দেয়ায় দেশটির চাষাবাদ বিপন্ন হয় এবং প্রবল খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এই বিভ্রান্ত নীতিটি সাত মাস পরে রদ করা হলেও ততদিনে যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে। 
৩. দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যঙ্ক তার ব্যালান্স শীটের গর্তের উপর কাগজ রেখে টাকা ছাপতে শুরু করে এবং মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড মাত্রা ছোঁয়। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশগুলোকে জ্বালানী ডিজেল এবং গুঁড়ো দুধ ক্রয়ের জন্য ধার দেবার অনুরোধ জানান। সরকার বিদ্যুত ব্যবস্থায় রেশনিং জারি করেন। 
৪. ২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা তার আন্তর্জাতিক দেনা পরিশোধ বন্ধ করে। আর এভাবেই এই ছোট্ট দ্বীপ-রাষ্ট্রটি গভীর থেকে গভীরতর অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হয়। 
৫. দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা যতই কমতে থাকে, ততই পাল্লা দিয়ে খাবার, জ্বালানী এবং অন্যান্য নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের সরবরাহ হ্রাস পেতে থাকে, বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামে। বিক্ষোভ যত বাড়ে, ততই রাজাপাকসে পরিবারের ক্ষমতা ছেড়ে দেবার দাবি জোরালো হয় বা হতে থাকে। মে মাসে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়ার বড় ভাইকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জনদাবির মুখে সরতে হয়।  
৬. রনিশ বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরে ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড'-এর সাথে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছাড় দানের জন্য দেন-দরবার করা শুরু করেন। 
৭. পরিস্থিতি উত্তরোত্তর খারাপ হতে থাকে। অতীতের বছরগুলোয় শ্রীলঙ্কার অনেক বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পে অর্থ সাহায্য করা চীনও তার দূরত্ব বজায় রাখা শুরু করে। ইতোপূর্বে ভারতের দেয়া ৪ বিলিয়ন মার্কিনী ডলারের সমপরিমাণ সাহায্যও শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যেই খরচ করে ফেলেছিল। রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকেও শ্রীলঙ্কা জ্বালানি ক্রয়ে অর্থ সাহায্য দানের অনুরোধ জানায়। 
৮. সরকার জ্বালানি বাঁচাতে শ্রমিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় ও এই খাতে রেশন ব্যবস্থা চালু করে। জ্বালানি বাঁচাতে স্কুলগুলোও বন্ধ করা হয়। 
৯. এই শনিবারের আগের শনিবার বিক্ষোভকারীরা কলম্বোয় রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে ঢুকে পড়ে যেহেতু ইতোমধ্যে রাজাপাকসে পালিয়েছিলেন। পুরো রাজধানীর আবহ উচ্ছাসে আনন্দে ভরে ওঠে। সংসদের স্পিকার সবাইকে জানান যে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
১০. গত বুধবারে রাষ্ট্রপতি দেশত্যাগ করেন। জাতির নেতৃত্ব কার হাতে যাবে বুঝতে না পেরে বিক্ষোভকারীরা কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করলে তাদের উদ্দেশ্যে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হয়।
১১. প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে-ই বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করছেন এবং বিক্ষোভকারীদেও হাত থেকে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের প্রত্যয়ও তিনি ইতোমধ্যে ব্যক্ত করেছেন। 
১২. গোতাবায়ে রাজাপাকসে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে ই-মেইলে তাঁর পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেন। প্রথমে অবশ্য তিনি মালদ্বীপ যান এবং সেখান থেকে চলে যান সিঙ্গাপুর। যদিও তার পদত্যাগের ঘোষণার পর দেশ জুড়ে আনন্দ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তবে গত কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ এখনো সেখানে চলছে।  

শ্রীলঙ্কার জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ আমাদের আশাবাদী করলেও রাজনৈতিক বিজ্ঞানের সেই অমোঘ প্রবাদ 'বিপ্লবের পরেই আসে প্রতি-বিপ্লব' কিন্ত উপেক্ষনীয় নয়। 'সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা' উচ্চারণের অমন ফরাসী বিপ্লবের পরও আবার পারিতে রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

রাশিয়াতে সম্প্রতি রুশ বিপ্লবে নিহত ও দেশ থেকে বিতাড়িত জার নিকোলাস দুই ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ধর্মের রীতি অনুসারে 'সন্ত' হিসেবে মর্যাদা দিয়ে ডাকটিকিট ছাপা হয়েছে। 

নেহরুভিয়ান ধর্মনিরপেক্ষতায় দীক্ষিত ভারতে আজ জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দল বিজেপি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পাক শাসনামলে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি রাতারাতিই যেন অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে। বাংলায় মধ্যযুগে মাৎস্যন্যায়ের অবসানে প্রকৃতিপুঞ্জ গোপালকে নির্বাচিত করলেও কালক্রমে পাল রাজবংশ ও পরে সেন রাজবংশের জন্ম হয়। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে আবারও জাতীয় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গোটা পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক ব্লকের পতনের পর সেখানে ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী, ধনতান্ত্রিক রাজনীতির উত্থান আমরা দেখেছি। এক রাজাপাকসে গেলেও আর এক রাজাপাকসে বা তাঁর পরিবার যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে না সে কথা এখনি বলা যায় না। 

পরিস্থিতি নির্ভর করবে এখন শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহী জনতার এই চেতনা স্ফূরণকে সেদেশের সত্যিকারের কোন দেশপ্রেমিক ও জনমুখী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভাষা দিতে পারেন কিনা তার ওপর।  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.