কবিদের স্মৃতি: হে প্রাচীন দয়া ক’রে দেবেন কি একটি কবিতা?

মতামত

30 June, 2022, 11:55 am
Last modified: 30 June, 2022, 07:45 pm
আমরা যতই বলি না কেন, আমাদের সাহিত্যের, ঐতিহ্যের যারা প্রধান হয়েছিলেন, তাদের কাউকে আমরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে পারিনি। তাদের কবিতা, তাদের সাহিত্য, তাদের সৃষ্টি আমরা নিয়েছি। কিন্তু তাদেরকে আমরা নিতে পারেনি। তাদের জীবনের দুঃখ, দুর্দশা, লড়াইয়ের গল্পগুলো নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথাও নেই।
কবি শামসুর রাহমান; ছবি-সংগৃহীত

শামসুর রাহমান আমাদের প্রজন্মের জন্যে এক আলাদা নাম। ৬৯'র আন্দোলনের সময় শামসুর রাহমানের কবিতাই উচ্চারিত হতো মানুষের মুখে মুখে। বিশেষ করে, একটি কবিতা আমাদের সবার স্মরণে থাকতো, তা হলো, মজলুম নেতা ভাসানীর ওপর লেখা 'সফেদ পাঞ্জাবি'। 

আমরা বেয়াদবি করতাম মেধা দিয়ে, পেশির শক্তি দিয়ে নয়

শামসুর রাহমানের কবিতার সঙ্গে আমাদের পরিচয় অনেক আগে। শামসুর রাহমান এবং হাসান হাফিজুর রহমান, এই দুজনেই ছিলেন আমাদের প্রধান কবি। তাদের বই যখন বের হতো, আমরা সবগুলোই পড়তাম। এখনকার দিনে যেমন অনেক বই, অনেক লেখক, অনেক কবি, তখনকার দিনে এত কবি-সাহিত্যিক ছিলও না। সেজন্যই বোধহয় আমরা এই মানুষগুলোকে আরও বেশি করে জানতে পারতাম, তাদের লেখনীর গভীরে ঢুকতে পারতাম। আমরা শুধু পড়তামই না, বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনাও করতাম।

ঢাকা কলেজে যখন উঠলাম, তখন তো আমরা পুরোদস্তুর, বেয়াদব দুমুর্খ সাহিত্যিক। আমরা একটি লিটল ম্যাগাজিন বের করেছিলাম, পূর্বপদ্ম নাম। তাতে নিয়মিতভাবে শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমানদের মতো মানুষদের সাহিত্য পর্যালোচনা লেখা হতো। তাদের সম্পর্কে যে খুব  প্রশংসনীয় কিছু লেখা হতো তা কিন্তু নয়, বরং বলা যায় বেয়াদবিই (এতবড় সাহিত্যিকদের লেখনীর সমালোচনাকে বেয়াদবি হিসেবেই ধরা হয়) করতাম। কিন্তু পার্থক্য ছিল। আমরা বেয়াদবি করতাম মেধা দিয়ে। পেশির শক্তি দিয়ে নয়।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই পড়ার চর্চা ছিল আমাদের মধ্যে। আমরা কবি-সাহিত্যিকদের কাছে গিয়ে লেখা চাইতাম। এখনো নিশ্চয়ই চায়, কিন্তু ফোনেই কাজ সেরে নেওয়া যায়। তখন গিয়ে কথা বলতে হতো। একদিন শামসুর রাহমানের কাছে লেখা চাইতে গেলাম। তিনি তখন দৈনিক বাংলায় কাজ করতেন। গিয়ে দেখি, হাতে একটা পূর্বপদ্মের পত্রিকা, ওনার নামেই কী একটা যেন লেখা। লিখেছিলাম তো আমি বা আমরাই কেউ। যা-হোক, পড়ার পর উনি খুব ক্ষেপে গিয়েছিলেন আমার ওপর। কিন্তু তাতে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কখনো খারাপ হয়নি। বরং বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের মাঝে।

আমরা সাহিত্য অনুষ্ঠান করতাম, সেখানে শামসুর রাহমানকে নিয়ে আলোচনা করতাম। সেসব অনুষ্ঠানে অনেকে আমরা তার লেখা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করতাম। কিন্তু আগেই বলেছি আমাদের স্পর্ধাগুলো ছিল জ্ঞানকেন্দ্রিক, বিদ্যাকেন্দ্রিক। তাই এ ধরনের বেয়াদবি অনেকের সঙ্গে করার পরও আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কখনো নষ্ট হয়নি।

'এই ছোকরাটা এলো কোত্থেকে'

সাহিত্যের দুনিয়ার বাইরে গিয়ে শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল হাসান হাফিজুর রহমানের কারণে। সেজন্য হাসান হাফিজুর রহমানের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ আমি। শামসুর রাহমান আর হাসান হাফিজুর রহমান দুজনেই বন্ধু, ছেলেবেলার বন্ধু তারা। এ কথা অনেকেই হয়তো জানে না। শামসুর রাহমানের কাছে হাসান হাফিজুর রহমানকে নিয়ে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। দুজনেই তখন তরুণ। শামসুর রহমানের বাসায় খেতে বসেছিলেন তারা। এর আগে শামসুর রাহমানের বাবা হাসান হাফিজুর রহমানকে কোনো কাজ করে দিতে বলেছিলেন সেবার, যেটা হাসান ভাই করতে ভুলে যান। খাবার টেবিলে হাসান ভাইকে দেখে তখন শামসুর রাহমানের বাবা বলে উঠলেন, 'এই ছোকরাটা এলো কোত্থেকে'।

শামসুর রাহমান হাসতে হাসতে আমাকে বলছেন, 'আমার প্লেটে যদি মাগুর মাছের টুকরোটা না থাকতো (যেটা তখনও খাওয়া হয়নি) আফসান, আমিও তখন উঠে যেতাম, এতটা রেগে গিয়েছিল আমার বাবা'। এই যে তাদের ছোটবেলার সৌহার্দ্য, এটা কিন্তু সবাই জানে না।

ঝালকাঠি কবিতা উৎসবের সভাপতি ও ঝালকাঠি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আবদুল গণি খানের সঙ্গে কবির একটি দুর্লভ ছবি

তারা নিজেরা যখন একসঙ্গে হতেন, নিজেদের ছোটবেলার গল্প করেই কাটিয়ে দিতেন। অন্য কবি-সাহিত্যিকরাও আড্ডা দিতেন তাদের সঙ্গে। তবে সেটা হতো গণআড্ডা। কিন্তু তারা দুজন যখন একা হতেন, তখন নিজেদের ছোটবেলার গল্পই বলতেন। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তারা।

উর্দুতে কথা বলতেন তিনি, ভাবা যায়!

শামসুর রাহমান হলেন, আপাদমস্তক একজন পুরান ঢাকার মানুষ। লোকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে পুরান ঢাকার মানুষ হিসেবে চেনে। কিন্তু তিনি কিন্তু ঢাকার বাইরের মানুষ। শামসুর রাহমান কিন্তু জাত পুরান ঢাকাইয়া। তিনি উর্দুতে কথা বলতেন, ভাবা যায়! তার বাংলা ভাষাও ছিল পুরান ঢাকাইয়াদের মতোই। আমরা যেটাকে সৌজন্যমূলক ভদ্রবাবুর ভাষা হিসেবে  চিনি, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিন্তু সবসময় তিনি সে ভাষায় কথা বলতেন না।

পুরান ঢাকা আর নতুন ঢাকা কিন্তু আলাদা। 'শৈশবের বাতিওয়ালা' নামে একটা খুব বিখ্যাত কবিতা আছে শামসুর রাহমানের। সেখানে পুরান ঢাকার সন্ধ্যেবেলার সেই বাতিওয়ালাদের কথা লেখা। এই বাতিওয়ালাদের হাতে একটা লাঠিতে আগুন ধরানো থাকতো। সেই লাঠি দিয়ে ল্যাম্পপোস্টগুলোকে জ্বালাতো তারা। এই দৃশ্য আমি নিজেও টিকাটুলিতে দেখেছি। এজন্যই বলবো, শামসুর রাহমানকে বুঝতে হলে, পুরান ঢাকার সংস্কৃতিকে বুঝতে হবে। তিনি তার কয়েকটি কবিতায় পুরান ঢাকার ভাষাও ব্যবহার করেছেন। তার চতুর্থ গ্রন্থ অর্থাৎ, 'নিরালোকে দিব্যরথ' এমনকি তার তৃতীয় গ্রন্থ 'বিধ্বস্ত নীলিমা' থেকেই বোঝা যায় তিনি পুরান ঢাকার সংস্কৃতিকে সামনে আনতেন প্রায়ই।

একদিনের কথা আমার মনে আছে, হাসান ভাই আর শামসুর রাহমান দুজনে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি হাসান ভাইকে বলছি, অফিসের কাজ আছে, ওটা দেখে দিতে হবে, সই করতে হবে। তখন হাসান ভাই আমাকে বললেন, 'তুমি বসো, ওর (শামসুর রাহমান) সঙ্গে আড্ডা দাও। আমি কাজটা সেরে আসি'। দুজন মিলে খুচরা টুকটাক আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ করেই শামসুর রাহমান আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমার কবিতা নিয়ে তোমার কি ধারণা?'

আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, তার এই প্রশ্নে। সদ্য পাস করা একজন ছাত্রকে এত বড় মাপের একজন কবি কেন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন? আমি তাকে বললাম, 'আপনার প্রথম গ্রন্থটি, 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে' কিছুটা হলেও প্রস্তুতি পর্ব।  আপনার যে প্রচন্ড প্রতিভা তা প্রকাশিত হয়েছে, এই গ্রন্থে। কিন্তু এটা দেখেই বোঝা যায়, একজন কবি প্রস্তুত হচ্ছে, তবে পুরোপুরি পরিপক্কতা আসেনি। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ, 'রৌদ্র করোটি' দেখেই বোঝা যায়, আপনি পুরোপুরি পক্ক। কারণ এখানে আপনার ভাবনাচিন্তাগুলোই প্রকাশ পেয়েছে এবং এখানে আপনি একেবারেই মৌলিক কবিতা লিখেছেন। 'বিধ্বস্ত নীলিমা'র কবিতাগুলো সব সনেট হওয়ায় কবিতায় যে কারিগরি আছে, যে খেটে লিখেছেন তা স্পষ্ট। তবে, আপনার এই কবিতাগুলো খুব সফল এবং খুব নিটোল। 'নিরালোকে দিব্যরথ' এ কিছুটা নির্মিতি ভাব চলে এসেছে। নীলিমাতে যেমন ইউরোপিয়ান সাহিত্য, ইউরোপিয়ান চিত্রকলা নিয়ে আলাপ আছে। কিন্তু 'নিরালোকে দিব্যরথ' এ কিছুটা আলোচনা উঠে এসেছে।'

আমি যে কী করে শামসুর রাহমানের মতো একজনকে এই-সব কথা বলে ফেলেছি নিজেও জানিনা। কিন্তু তিনি মনোযোগ দিয়ে সব শুনে একদম চুপ করে রইলেন। আমি এত অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। এরপর আরও কয়েকবার দেখা হয়েছে, কিন্তু কবিতা নিয়ে কথা হয়নি। এরপর আরেকদিন দেখা হয়েছিল। তখন আমাকে ডেকে বললেন, 'তোমাকে একটা কবিতা শুনাই'। কেন যে তিনি আমাকে সেদিন কবিতা শোনাতে চেয়েছিলেন জানিনা।

'বাচ্চু তুই এলি?'

শামসুর রাহমানের একটি চরিত্র আছে, বাচ্চু। তার ছোটবেলার বন্ধুর নাম। 'বিধ্বস্ত নীলিমা' তে আছে কিনা ঠিক জানি না, কিন্তু নিরালোকে দিব্যরথে আছে এবং পরেরগুলোতেও এই চরিত্রের কথা লেখা আছে। 'বাচ্চু তুই এলি?' এটা স্বাধীনতার পরের লেখা।

শামসুর রহমানের সামাজিক কবিতাগুলো কিন্তু অতটা সফল নয়। 'সফেদ পাঞ্জাবি'র মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনা কম, সাবলীলভাব বেশি। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শামসুর রহমান আইকন হয়ে গেল। দৈনিক বাংলায় কাজ করাকালীন তাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এসব কিছুর চাপে পিষ্ট হয়ে, শামসুর রাহমান কবিতা থেকে সরে এসেছিলেন।

'এত কষ্ট হচ্ছে আফসান, এত স্মৃতি, আমি এই ভার বহন করতে পারবো না'

এয়ারপোর্ট থেকে হাসান ভাইয়ের লাশটা নিয়ে যখন ফিরে এলাম, আমি বাইরের একটা চেয়ারে চুপ করে তখন বসে আছি। শামসুর রাহমান আমার কাছে এসে বললেন, 'এত কষ্ট হচ্ছে আফসান, এত স্মৃতি, আমি এই ভার বহন করতে পারবো না। হাসান থাকবে না এটা আমি ভাবিনি' আমি কী বলবো শামসুর রাহমানকে। তাদের তো অনেক স্মৃতি। তারা একসাথে বড় হয়েছেন। কবি থেকে তাদের বন্ধুত্ব নয়, বন্ধু থেকেই পরবর্তীতে তারা কবি হয়েছেন।

রাহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হবার আগেই, তার সাহিত্যের গভীরে ঢুকে আসলে শামসুর পড়েছি আমরা। আমার কাছে তার গল্পগুলো, তার কবিতার মতো এতটা সম্পন্ন আর পরিপক্ক লাগেনি।

তবে মানুষটাকে নিয়ে যতটুকু আলোচনা হয়, তা তার সৃষ্টিকর্ম নিয়েই। তার সৃষ্টিকর্মের রাজনৈতিক দিকটাই বারবার আলোচনায় আনা হয়। এই দুনিয়ায় এসেই মনে হয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ফলে তার কবিতাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি যদি শুধু কবিতাতেই মগ্ন থাকতেন, তাহলে হয়তো সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু তার দুনিয়াই তখন পালটে গেছে। সেদিক থেকে কষ্ট হয় তার জন্য। কারণ যারা তার প্রথম দিকের কবিতা পড়েছে, তারা বুঝতে পারবে তার শেষদিকের কবিতার সঙ্গে তফাতটা কোথায়। অন্তত আমাকে তার প্রথমদিকের কবিতাগুলোই অনেক টেনেছে। শেষের দিক তার কবিতাগুলো এতটা সবল হয়নি।

আমরা তাকে শুধু গণকবি হিসেবেই চিনলাম। তার ব্যক্তিগতবোধগুলো কখনো জানা হয়নি। তার জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্য কখনো জানা হয়নি। তিনি রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন, তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হলো, চাকরিচ্যুত করা হলো। একদিন তিনি বলছিলেন, 'আমি তো এখন পরম শ্রমিক হয়ে গেছি। যে পরিমাণ লিখতে হয় আমাকে এখন।' চাকরির জন্য লিখতে হতো তাকে। অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল বলে পুরান ঢাকা থেকে চলে এসেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও কষ্ট কম ছিল না। তার যে সন্তানটি মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল, সে-ও অকালেই মারা যায়।

আমি দেখেছি, বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে আর্থিক কষ্টে ভুগতে হয়।  আমরা যতই বলি না কেন, আমাদের সাহিত্যের, ঐতিহ্যের যারা প্রধান হয়েছিলেন, তাদের কাউকে আমরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে পারিনি। তাদের কবিতা, তাদের সাহিত্য, তাদের সৃষ্টি আমরা নিয়েছি। কিন্তু তাদেরকে আমরা নিতে পারেনি। তাদের জীবনের দুঃখ, দুর্দশা, লড়াইয়ের গল্পগুলো নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথাও নেই। আমরা কেবল রেখে যাওয়া সৃষ্টিকর্ম নিয়েই বাঁচি। ব্যক্তিগত জীবন অজানাই রয়ে গেলো আমাদের কাছে সবসময়। 'উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ'- এর মতোই আমরা চলছি এদেশে।

শামসুর রাহমান কবি হয়ে বেঁচে থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার প্রথম গ্রন্থগুলোর জন্য। কারণ যে শিল্পদক্ষতা তার কবিতায় দেখা গেছে, তা আর আমাদের মাঝে দেখা যায়নি, হয়তো যাবেও না।

  • লেখক: গবেষক ও সাংবাদিক

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.