শি জিনপিং: উদীয়মান সুপারপাওয়ার চীনের সুপারহিরো
বর্তমান চীনের নবজাগরণের অন্যতম নেতা বলা হয় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কে। নিজ দেশের কৃষকদের কাছে তিনি যতটা বন্ধুপ্রতীম, ঠিক তেমনি চীনের ঐতিহ্যবাহী গ্রেট হলে বিদেশী অতিথিদের স্বাগত জানাতেও ততটাই আত্মপ্রত্যয়ী, প্রশান্তমনা ও অবিচল এই রাষ্ট্রনায়ক।
প্রেসিডেন্ট শি'র বিচক্ষণতার ফলে বিশ্বে উদীয়মান সুপার পাওয়ার হিসেবে সবার উপরে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে এশিয়ার দেশ চীন। অর্থনীতি, সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তিগতভাবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পশ্চিমাদের পিছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ হিসাবে চীনের অবস্থান দৃঢ় করাই বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর চূড়ান্ত লক্ষ্য।
প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে এশিয়ার দক্ষিণে হোয়াংহো নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চারটি (মেসপটেমিয়া, মিশরীয়, সিন্ধু, চৈনিক) সভ্যতার একটি চৈনিক বা চীনা সভ্যতা। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শাং সম্রাজ্যের সময় থেকে চীনা ইতিহাসের লিখিত দলিলপত্র পাওয়া যায়। এ সময় থেকে চীনে সম্রাজ্য ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়। এরপর একে একে এসেছে ঝাউ সম্রাজ্য, কিন সম্রাজ্য, হান সম্রাজ্য, সঙ সম্রাজ্য, উয়ান সম্রাজ্য, মিং সম্রাজ্য এবং সর্বশেষ কিং সম্রাজ্য, যা ১৯১১ সাল পর্যন্ত চীন শাসন করেছিল।
১৯১২ সালে সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজাতান্ত্রিক চীন (Republic of China)। কিন্তু রাজনৈতিক দলের আন্ত:কোন্দলের ফলে প্রজাতান্ত্রিক চীন বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। গৃহযুদ্ধ ও বিপ্লবের মাধ্যেমে মাও সে তুং ১৯৪৯ সালে তৎকালীন রিপাবলিকান নেতা চিয়াং কাই শেক'কে পরাজিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People's Republic China) অর্থাৎ গণচীন প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় আধুনিক চীনের যাত্রা মাও সে তুং এর হাত ধরে। পশ্চিমাদের টক্কর দিয়ে বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চীনের যেই চেষ্টা মাও এর শাসনামল থেকে শুরু হয়েছিলো তা এখন অব্দি বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর নেতৃত্বে অব্যহত আছে।
১৯৭৬ সালে মাও সে তুং এর মৃত্যুর পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে দেং জিয়াওপিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে আধুনিক চীনের অর্থনৈতিক রূপকার হিসেবে খ্যাত দেং জিয়াওপিং চীনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন এবং ১৯৮২ সালে তিনি সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনেন। যার মধ্যে অন্যতম একটি পরিবর্তন ছিলো চীনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। চীনের জনসাধারণকে স্বৈরতন্ত্র থেকে বাঁচানোর দেং জিয়াওপিং এর এই চেষ্টা ধূলিসাৎ হয়ে যায় ২০১৭ সালে, যখন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সংবিধানে পরিবর্তন এনে নিজের আজীবন রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে থাকার একমাত্র সাংবিধানিক বাঁধাকে অতিক্রম করেন।
প্রেসিডেন্ট শি এর এমন স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবকে বিশেষজ্ঞরা চীনের সাবেক কমিউনিস্ট নেতা ও প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং এর সাথে তুলনা করেছেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে মাও গণচীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এক সময় চীনকে আধুনিকায়নে তার গৃহীত পদক্ষেপ গ্রেট ফরওয়ার্ড লিপ (১৯৫৮-১৯৬২) ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব (১৯৬৬), প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। একইভাবে হংকং, তাইওয়ান, উইঘুরদের মানবাধিকার লঙ্ঘনেও চীনের তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই। বরং এসব অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে মূলত চীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে বলেই ধারণা করা করা হয়।
মাও সে তুং কমিউনিজমকে চৈনিক ধারায় এক সংস্কৃত রূপ দিয়েছিলেন, যা "কমিউনিজম উইথ চাইনিজ ক্যারেক্টারিস্টিকস" নামে বহুল প্রচলিত। সম্প্রতি বেইজিং এ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেসিডেন্ট শি প্রতিষ্ঠা করেছেন "শি জিনপিং রিসার্চ সেন্ট্রার ফর ডিপ্লোম্যাটিক থট"। চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট শি এর কূটনৈতিক মতবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথাগত তত্ত্বকে ছাড়িয়ে একুশ শতকের মার্কসবাদকে বাস্তবে রূপ দান করেছে এবং এই মতবাদই চীনা কূটনীতির চূড়ান্ত নীতিমালা। অর্থাৎ মাও এর মত প্রেসিডেন্ট শি ও মার্কসবাদের সঙ্গে তার নিজস্ব মতাদর্শ মিশিয়ে এক নতুন ধরণের কমিউনিজমের প্রচলন করেছেন চীনে। এর মাধ্যমে মাও এবং দেং জিয়াও পিং এর পরে এখন শি জিনপিং এর আদর্শও চীনের গঠনতন্ত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গা করে নিলো।
আবার দেং জিয়াওপিং ক্ষমতায় এসে অর্থনীতি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কের যেই মুক্তধারা তৈরি করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট শি সেই ধারাও বজায় রেখেছেন। বিআরআই প্রকল্প এবং তা বাস্তবায়নে যেসকল আবকাঠামোগত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে সেগুলো তারই প্রমাণ। ফলে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট শি চীনের ক্ষমতায় শুধুমাত্র মাও এর প্রতিচ্ছবি নয়, বরং অনেকটা মাও এবং দেং উভয়েরই সংমিশ্রণ।
তবে দেং যতটা শান্তিপূর্ণভাবে চীনা অর্থনীতি আধুনিকায়নের তত্ত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি কে ততটা নমনীয় বা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। সেটা লাদাখ ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী মনোভাবই দেখলেই বোঝা যায়।
গেলো বছর ভারত-চীন সীমান্তবর্তী গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সৈন্যদের মাঝে দ্বন্দ্বে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এই উপত্যকায় যেকোনো প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পরও চীন রড ও পেরেকের তৈরি দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করে ভারত। বোঝাই যাচ্ছে কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল চীনা সৈন্যদল।
এশিয়া অঞ্চলে প্রধান দুই শক্তি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র চীন ও ভারত। তাই ভারতকে দাবিয়ে রাখতে চীন এ অঞ্চলে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ঐতিহাসিককাল থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। এছাড়া নতুন করে নেপাল-ভারত সীমান্ত দ্বন্দ্বেও নেপালকে সমর্থন যোগাচ্ছে চীন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া সামরিক সরকারকেও সমর্থন দিচ্ছে চীন। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্ক নিয়ে চীন বাংলাদেশকে সান্ত্বনার বাণী শোনাচ্ছে, অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করছে। মূলত, এ অঞ্চলের দেশগুলো আয়তনে, অর্থনীতিতে ও সামরিক শক্তিতে চীনের চেয়ে যোজন যোজন কম হওয়ায় চীন খুব সহজেই তাদের হাতে রাখতে পেরেছে এবং আঞ্চলিকভাবে মোটামুটি বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলে চীনের এমন দৃঢ় অবস্থানকে টপকানো ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে।
এ তো গেলো আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে শি নেতৃত্বাধীন চীন এশিয়ায় কতটা শক্ত খুঁটি গাড়তে সক্ষম হয়েছে সেই আলোচনা। এবারে দেখা যাক এশিয়ার বাইরে প্রেসিডেন্ট শি কতদূর এগিয়েছে।
২০১২ সালে চীনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেই প্রেসিডেন্ট শি এক বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ হাতে নেন, যা বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে পরিচিত। বিশ্বের প্রায় ৭০ টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৪০ শতাংশ জিডিপি এই পরিকল্পনায় আওতাভুক্ত করেছে চীন সরকার।
কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, বিশাল এই কর্মযজ্ঞে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করেনি চীন। প্রতিউত্তরে যুক্তরাষ্ট্র বিআরআই প্রকল্পকে চীনকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক হিসেবে আখ্যা দিয়ে মিত্র দেশ জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে ব্লু ডট নেটওয়ার্ক (বিডিএন) প্রকল্প হাতে নিয়েছে সম্প্রতি। প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক দেশ ভারতও বি আর আই প্রকল্পের প্রতিউত্তরে প্রাচীন ভারতীয় কটন রুটকে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলো, যদিও সে উদ্যোগ খুব বেশি আশার আলো দেখাতে সমর্থ হয়নি।
প্রেসিডেন্ট শি এর বিআরআই প্রকল্প এশিয়া অঞ্চলে এবং পশ্চিমে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে যে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে সেটা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক প্রতিউত্তরেই বোঝা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন অবকাঠামোগত উন্নয়নে আঞ্চলিক দেশগুলোয় প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। এশিয়ো আবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা (Asian Insfructructure Investment Bank-AIIB), শ্রীলঙ্কার হাম্বান্টোটা পোর্ট ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়া, জিবুতিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ নানা অর্থৈতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাবকে প্রসারিত করে তুলেছে, যা প্রতিদ্বন্দী দেশগুলোকেও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করছে।
বিগত ট্রাম্প শাসনামলের চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ দুই রাষ্ট্রের মাঝে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে। যেমন- প্রযুক্তি স্থানান্তর, চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ডেটা নিরাপত্তা, সাইবার যুদ্ধ ইত্যাদি। যদিও বর্তমানে বাণিজ্য যুদ্ধ স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে, তথাপি উক্ত বিষয়গুলোর কোনো সমাধান হয়নি এবং এসব ইস্যু যেকোনো মুহূর্তেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
শি জিনপিং এর পূর্বের দশকগুলোয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ছোটখাটো দ্বন্দ্ব বা অস্থিতিশীলতা দেখা যেতো। এছাড়া হংকং ও তিব্বত ইস্যুতেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিলো। এর মাঝে হংকং ইস্যুতে আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদও ছিল। ফলে এসব অস্থিতিশীলতার কারণে নিজেকে পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চীনের এককভাবে অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতার উপর যতখানি মনোযোগ দেয়া দরকার ছিলো হয়ত ততখানি দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু গত প্রায় এক দশক যাবত প্রেসিডেন্ট শি এর নেতৃত্বে চীনের রাজনৈতিক অবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দেশের অভ্যন্তরে মাঝেমাঝে জনগণ দ্বারা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত হওয়া ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে কোনো ভিন্নমত বা বিদ্রোহ দেখা যায়নি। ফলে চীনের সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির দিকে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট শি চীনের অন্যান্য সাবেক রাষ্ট্র প্রধানদের তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্বক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে হংকং ইস্যুতে কিছু বলতে গেলেও কিছুটা ভেবেচিন্তে বলতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় রিপাবলিকান থাকুক বা ডেমোক্র্যাটস, নীতি নির্ধারকেরা চীনকে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসাবেই দেখে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীনকে "গ্লোবাল হেজেমনিক থ্রেট" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, যার সাথে বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও একমত। সম্প্রতি মার্কিন সিনেটের বিদেশ সম্পর্কিত কমিটি, কৌশলগত প্রতিযোগিতা আইন-২০২১ (Strategic Competition Act-2021) কে সমর্থন জানিয়েছে, যা চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং সামরিক সুরক্ষাসহ একাধিক ক্ষেত্রে কৌশলগত প্রতিযোগী হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনামলে বিশ্ব যেমন লাগাতার বাণিজ্য আগ্রাসন দেখেছিলো দুই দেশের মধ্যে, এখন হয়ত সেটা কিছুটা কমে আসবে। বিশ্লেষকগণ বলছেন, শীতল সম্পর্কের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্ব হয়ত দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতাসহ মাঝেমাঝে সহযোগিতাও প্রত্যক্ষ করবে।
অন্যদিকে, পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়া শীতল সম্পর্ক চীনের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ককে উত্তরোত্তর উষ্ণ করে চলেছে। বর্তমানে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন।
চীনকে বিশ্বের এক নম্বর শক্তিশালী রাষ্ট্র তথা প্রধান পরাশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যে বিশাল কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক বিশ্বে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বপূর্ণ পুঁজিবাদী ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক চীনের অভ্যুত্থানে বিশ্বব্যবস্থায় মতাদর্শগত পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
বহু বছর পূর্বে নেপোলিওন বোনাপার্ট বলেছিলেন, "চীনকে এখন ঘুমাতে দাও, যখন সে জেগে উঠবে সে পুরো বিশ্বকে চমকে দিবে।" (Let China sleep, for when she wakes she will shake the world)
২০৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক গণচীনের ১০০ বছর পূর্তিতে বিআরআই প্রকল্প চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলে নেপোলিয়নের উক্তিটি হয়ত সম্পূর্ণরূপে বাস্তবে পরিণত হতে দেখবে বিশ্ববাসী।
- লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- ইমেইল: [email protected]