মাতৃভাষার পর বাংলায় সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর  

বিনোদন

টিবিএস ডেস্ক
06 February, 2022, 06:45 pm
Last modified: 06 February, 2022, 06:49 pm
লতাকে বাংলা গান গাওয়ানোর ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বহু সুরকারের সুরে লতা মঙ্গেশকর বাংলা গান গেয়েছেন। হেমন্তের প্রযোজনায় হিন্দি ও বাংলা ছবিতে গান গেয়ে কোনোদিন পারিশ্রমিক নেননি এই কিংবদন্তী গায়িকা।

ভারতীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তী গায়িকা, সদ্য প্রয়াত লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতির ছিল গভীর যোগাযোগ। ১৯৫৬ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে "প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে" গানটি ছিল লতার গাওয়া প্রথম বাংলা গান। লতাকে বাংলা গান গাওয়ানোর ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরপর সলিল চৌধুরিও লতাকে দিয়ে বহু কালজয়ী গান গাওয়ান। এছাড়া সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরেও লতা বেশকিছু কালজয়ী বাংলা গান গেয়েছেন। সুধীন দাশগুপ্তর সুরেও কিছু বিখ্যাত গান রয়েছে তার। পরবর্তী সময়ে বহু সুরকারের সুরে লতা মঙ্গেশকর বাংলা গান গেয়েছেন।

তবে সবচেয়ে বেশি গান তিনি গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে। যদিও মান্না দে, শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন, সলিল চৌধুরি, গীতা দত্ত, অনিল বিশ্বাস, অশোক কুমার, কিশোর কুমার, শক্তি সামন্ত, হৃষিকেশ মুখার্জি, বিশ্বজিত, বাপী লাহিড়ি প্রমুখের সাথে লতা মঙ্গেশকরের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাথে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্য লতা মঙ্গেশকরের পরিবারের দরোজা খোলাই ছিল সবসময়। লতার মা তাকে খুবই ভালবাসতেন। এছাড়া বোনেরা আশা, মীনা, উষা ও ভাই হৃদয়নাথ সবাই হেমন্তের ভক্ত ছিলেন। এমনকি আশা ভোঁসলে তো নিজের ছেলের নামও রেখেছিলেন হেমন্তের নামে।

লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে হেমন্তর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। হেমন্তের মুম্বাইয়ের গীতাঞ্জলি বাংলোতে মাঝেমধ্যেই যেতেন লতা। হেমন্তর স্ত্রী বেলাদেবীর সাথেও তার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। বাংলা ভাষায় গান গাওয়ার জন্য নিজের বাংলা উচ্চারণ সঠিক করতে অনেক পরিশ্রম করেছিলেন লতা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এ বিষয় তাকে অনেক সাহায্য করেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য বাঙালি শিল্পীদের সাথে লতা বাংলায় কথাও বলতেন। বাঙালি খাবারের প্রতিও যথেষ্ট দুর্বলতা ছিল প্রয়াত এই সুরসম্রাজ্ঞীর।

হেমন্তের মুম্বাইয়ের বাড়িতে প্রায়ই নিমন্ত্রণ থাকতো লতার। তখন জমিয়ে বাঙালি মাছের পদ খেতেন তিনি। হেমন্ত কলকাতা থেকে লতার জন্য দই ও মিষ্টি নিয়ে যেতেন। লতার বাড়িতেও প্রায়ই হেমন্তের পরিবারের নিমন্ত্রণ থাকত। হেমন্তের কন্যা রানুর জন্মের আগে লতা নিজে বেলাদেবীকে সাধ খাইয়েছিলেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে লতা ও বেলাদেবী এক সাথে সিনেমা দেখতে ও হোটেলে খেতে যেতেন।

প্রথমের দিকে কলকাতায় এসে লতা হেমন্তের কলকাতার বাড়িতে থেকেছেন। হেমন্তের সুরে হিন্দি ও বাংলা ছবিতে লতা প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন। দুজনে ডুয়েটও গেয়েছেন প্রচুর। হেমন্তের কাছে রবীন্দ্র সংগীত শিখেছেন লতা মঙ্গেশকর। লতাকে দিয়ে প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ানোর কৃতিত্বও হেমন্তের। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে উৎসাহী লতা মঙ্গেশকর বাংলার রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখের মারাঠি অনুবাদ পড়েছেন। কিংবদন্তী এই গায়িকার বাড়িতে এসব বাঙালি লেখকের লেখার মারাঠি অনুবাদ রয়েছে। বাঙালি তাঁতের শাড়িও তিনি খুব পছন্দ করতেন।

উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা ছবির বিশেষ ভক্ত ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তার বাড়িতে উত্তম-সুচিত্রার ছবির ক্যাসেট, সিডিও পাওয়া গেছে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় হিন্দি ও বাংলা ছবিতে গান গেয়ে কোনোদিন পারিশ্রমিক নেননি লতা। বাঙালি জাতি ও বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল লতা মঙ্গেশকর মৃত্যুর আগে খুব আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, "এখন তো মুম্বাইতে বাংলায় কথা বলার লোকই পাওয়া যায় না। কারণ এখানকার বাঙালিরা তো আজকাল বাংলায় কথাই বলে না।"

সূত্র: কোলকাতা নিউজ 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.