লতাজী মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করছিলেন আর আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল: আঁখি আলমগীর

বিনোদন

06 February, 2022, 12:30 pm
Last modified: 06 February, 2022, 12:28 pm
সেদিন ৩০ মিনিট সময় দিয়ে আড়াই ঘন্টা তাদের সাথে গল্প করেন লতা মঙ্গেশকর। তার কথা বলার মজার ভঙ্গী, পুরনো স্মৃতিচারণের গল্প- সবই মনে রেখেছেন আঁখি।

করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। আজ সকাল ৮.১২ মিনিটে মারা যান কিংবদন্তি এ শিল্পী। 

লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীরের।  মাধ্যম ছিলেন উপমহাদেশের আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।

সেই স্মৃতি স্মরণ করে আঁখি বলেন, আমাদের দেখা হয়েছিল ২০১৭ সালে। আমরা 'একটি সিনেমার গল্প' চলচ্চিত্রের গান রেকর্ডিং এর জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। রেকর্ডিং এর আগে সুযোগটা হয়েছিল, আর সেটা করে দিয়েছিলেন রুনা আন্টি।'

শুধু তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২৬ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় একটি শো ছেড়ে দেন আঁখি। কারণ দেখা করার তারিখ ছিলো ২৭ মার্চ। শো করে ইন্ডিয়া এসে দেখা করা কঠিন। তাই শো ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যান। জানালেন, লতাজীর সাথে দেখা করার আগের রাতে ঘুমাতে পারেননি তিনি।

আঁখি আলমগীর বলেন, "সারারাত ঘুম হয়নি আমার। আমি যে উনার কি পরিমাণ ভক্ত সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ছোটবেলায় উনার গান ক্যাসেট প্লেয়ার ও রেডিওতে শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলতাম। তার সব গান হয়তো গাইতে পারি না, কিন্তু জানি। অনেকেই হয়ত তার ভক্ত কিন্তু আমার মতো এতটা কাছে যাওয়ার সুযোগ কয়জন পায়। আমি সেই সুযোগটা পেয়ে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।"

তিনি আরও যোগ করেন, "লতাজী আমাদের দেখা করার সময় দিয়েছিলেন ২৭ মার্চ বিকেল চারটা। বরাদ্দ ছিলো ৩০ মিনিট। বারবার ভয় করছিল হয়ত তিনি সকালে ফোন করে বলবেন দেখা হবে না। আবার যাওয়ার পরেও হয়তো কেউ এসে জানাবেন উনি দেখা করবেন না। এমন আশঙ্কা নিয়েই সেদিন উনার মুম্বাইয়ের বাড়িতে পা রেখেছিলাম।' 

বাড়িতে পা দেয়ার পর কি হয়েছিল সেই প্রশ্নের জবাবে গায়িকা বলেন, "আমরা যাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর উনি সামনে আসেন। উনাকে সামনে পেয়ে আমি সবকিছু ভুলে যাই। রুনা আন্টি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি পুরোটা সময় উনার হাত ধরে পায়ের কাছে বসেছিলাম। যদিও লতাজি বারবার আমাকে উনার পাশে সোফায় বসাতে চাইছিলেন, কিন্তু আমি মেঝেতে উনার পায়ের কাছেই বসেছিলাম। আমি আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না সেই দিনের অনুভূতি। আমি একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।"

তার কাছ থেকেই জানা গেলো, সেদিন ৩০ মিনিট সময় দিয়ে আড়াই ঘণ্টা তাদের সাথে গল্প করেন লতা মঙ্গেশকর। তার কথা বলার মজার ভঙ্গী, পুরনো স্মৃতিচারণের গল্প- সবই মনে রেখেছেন আঁখি।

আঁখি আলমগীর বলেন, আসার সময় আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন লতাজী। তখন আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। ওই সময় আশেপাশে আরও অনেকেই ছিল। বার বার বলছিলাম, আমি খুব সরি। ক্ষমা করবেন। তারা বলেছিল, আপনার ভালোবাসায় আমাদের ঘর ভরে গেছে।'

আঁখি জানান, ওইদিন তাকে বেশ কিছু উপহার দেন লতা মঙ্গেশকর। একইসঙ্গে রুনা লায়লাকে একটি শাড়ি, নিজের আত্মজীবনী, ভাগ্নী রচনার লেখা বই এবং নিজের গানের সিডি উপহার দেন। আর তাকে একটি জামদানি শাড়ি উপহার দেন রুনা লায়লা।

ফিরে এসে পরদিন গান রেকর্ড করেন আঁখি আলমগীর। আঁখি বলেন, "ওই দিন রেকর্ডিং শেষে রুনা আন্টি আমার গানের খুব প্রশংসা করেন। ওই গানটার জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। এটা হয়তো লতাজীর আশীর্বাদেই পাওয়া।"

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.