শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে জমজমাট এফডিসি

বিনোদন

25 January, 2022, 05:30 pm
Last modified: 25 January, 2022, 05:44 pm
সভাপতি পদপ্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, "শিল্পীদের সহযোগিতা করার চেয়ে কাজ দিতে হবে। সাহায্য করে শিল্পী বা শিল্প বাঁচিয়ে রাখা যায় না। তাই সবার আগে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা নির্বাচিত হলে সেটা নিশ্চিত করব।"
বাম দিক থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন, নিপুন, মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান।

জমে উঠেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। আগামী ২৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুটি প্যানেল। প্রথমটি গত দুই বছর দায়িত্ব পালন করা মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান প্যানেল এবং অপরটি ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুন প্যানেল। দুই প্যানেলই গত ১২ জানুয়ারি তাদের বাকি পদের সদস্যদের নিয়ে মনোনয়ন ফর্ম জমা দিয়েছেন। এখন তারা চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা।

এই দুই প্যানেলের প্রার্থী ও ভোটারদের পদচারণায় এফডিসি এখন সরগরম। এফডিসির ভেতরে শিল্পী সমিতির অফিসের দুই পাশে দুটি ক্যাম্প অফিস করেছে দুই প্যানেল। শুধু এই প্যানেল ঘিরেই নয়, এফডিসির ক্যান্টিন, কড়ই তলা, প্রশাসন ভবনের সামনে মানুষ ভিড় করছে। তবে শুরুতে কিছুদিন দর্শনার্থীদের অবাধ যাতায়াত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এখন সীমিত করা হয়েছে। সবার আইডি কার্ড দেখে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

শুধু এফডিসিতেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুমুল আলোচনা হচ্ছে এই নির্বাচন নিয়ে। প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ভোটার তালিকা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

নির্বাচনে দুই প্যানেল ঘিরেই রয়েছে চমক। একের পর এক নির্বাচনি প্রচার নিয়ে বাকবিতণ্ডায় দুই প্যানেলের তারকারা।

এদিকে কয়েকদিন আগেই শিল্পী সমিতি থেকে সদস্য পদ হারানো চিত্রনায়িকার শিমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঞ্জন ওঠে এই হত্যার পেছনে জায়েদ খানের সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে লাশ উদ্ধারের অল্প সময়ের মধ্যে হত্যার অভিযোগে শিমুর স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শিল্পী সমিতির মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের প্যানেলে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা এবং ব্যানারে সদস্যপদ লেখা নিয়ে বিতর্ক বেশ জমে ওঠে।

এদিকে শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জন শিল্পীর বিষয়ে উচ্চ আদালতে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গত দুই বছরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি বলেন, "আমরা গত দুই বছর শিল্পীদের পাশে ছিলাম। করোনাকালে সবার খোঁজ খবর নিয়েছি। চেষ্টা করেছি তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার। তাই আমার বিশ্বাস শিল্পীরা এবারও আমাদের নির্বাচিত করবেন।"

তার সঙ্গে একই সুরে কথা বলেন এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান। তিনি বলেন, "করোনায় মৃত্যুবরণ করা শিল্পীদের লাশ আমি গোসল করিয়েছি। কবরে নামিয়েছি। তাদের যেকোনো বিপদ আপদে সবার আগে ছুটে গিয়েছি। তাই এবার সব সদস্যরা আমাদেরই নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস।"

তবে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ প্যানেল তাদের জয়ের ব্যাপারে অনেকখানি আশাবাদী। সভাপতি পদপ্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, "শিল্পীদের সহযোগিতা করার চেয়ে কাজ দিতে হবে। সাহায্য করে শিল্পী বা শিল্প বাঁচিয়ে রাখা যায় না। তাই সবার আগে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা নির্বাচিত হলে সেটা নিশ্চিত করব।"

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অভিনেত্রী নিপুন বলেন, "এবারের জোয়ার আমাদের দিকে। শিল্পীরা তাদের নেতৃত্ব আর দেখতে চায় না। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।"

এদিকে এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন বলেন, "একদিকে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেকদিকে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আসছে। এরমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা খুব কঠিন। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে আমাদেরও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে হচ্ছে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে এফডিসিতে দুটি প্যানেলের পরিচিতি সভা হয়। এবার করোনার কারণে সেটা বাতিল করা হয়েছে। ভোটের দিন শিল্পীদের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন থাকে সেটাও বাতিল করা হয়েছে। ভোট দিয়ে দ্রুত সময়ে এফডিসি ত্যাগ করার জন্য শিল্পীদের অনুরোধ করা হয়েছে।"

নির্বাচনের সচ্ছতার জন্য এবার নির্বাচন শেষ হওয়ার পর প্রতিঘণ্টায় মিডিয়ার সামনে ব্রিফ করা হবে এবং দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গঠন করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ শরীফ।

ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুন প্যানেলে যারা রয়েছেন

সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক নিপু্ন, সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ ও ডি.এ তায়েব, সহ-সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক অভিনেত্রী শাহনুর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রনায়ক নিরব হোসেন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক অভিনেতা আরমান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন ও কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচন করবেন অভিনেতা আজাদ খান।

এই প্যানেলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রার্থী হচ্ছেন অমিত হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়ক শাকিল খান, অভিনেতা নানা শাহ, কমেডিয়ান আফজাল শরীফ, খল-অভিনেতা সাংকো পাঞ্জা, অভিনেত্রী জেসমীন, চিত্রনায়িকা কেয়া, পরীমনি, খল-অভিনেতা গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত।

মিশা-জায়েদ প্যানেলে যারা রয়েছেন

সভাপতি মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত, সাংগঠনিক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জেকে আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ।

এই প্যানেলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে প্রার্থী হচ্ছেন রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুনা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীর।

এছাড়া কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা ডন। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.