জাপানে অবশেষে 'ওপেনহাইমার', মুক্তি পেল নানা সতর্কতার মধ্যে, হিরোশিমায় অস্বস্তি

বিনোদন

রয়টার্স
30 March, 2024, 11:45 am
Last modified: 30 March, 2024, 11:58 am
বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত 'ওপেনহাইমার' সিনেমাটি পারমাণবিক বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একমাত্র দেশ জাপানে দীর্ঘ ৮ মাস পর মুক্তি দেওয়া হলো।

অস্কারের সেরা সিনেমার পুরস্কার বিজয়ী 'ওপেনহাইমার' অবশেষে শুক্রবার (২৯ মার্চ) জাপানে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনকে কেন্দ্র করে যাকে পারমাণবিক বোমার জনক বলা হয়। দীর্ঘ ৮ মাসের বিতর্কিত প্রচারণা এবং পারমাণবিক বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একমাত্র দেশ জাপানে সিনেমাটির প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, এ আলোচনার মধ্যেই দেশটিতে মুক্তি দেওয়া হলো সিনেমাটি।

পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের সিনেমাটি অস্কারের সেরা সিনেমা, সেরা অভিনেতা এবং সেরা সহ-অভিনেতা সহ বেশ কিছু বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। সিনেমাটি এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।

জাপান হলিউডের সিনেমার অন্যতম প্রধান বাজার হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে এতদিন সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের পশ্চিমের শহর হিরোশিমা এবং দক্ষিণের শহর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি ২ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

হিরোশিমার ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা কাওয়াই বলেন, "অবশ্যই এটি একটি অসাধারণ সিনেমা যা একাডেমি পুরস্কার জেতার যোগ্য। কিন্তু সিনেমাটি পারমাণবিক বোমাকে এমনভাবে চিত্রিত করেছে যা দেখে মনে হয় সেটি প্রশংসার যোগ্য। হিরোশিমার একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি সিনেমাটি দেখতে অস্বস্তি বোধ করেছি।"

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ছবিতে দেখা গেছে, টোকিওর কিছু থিয়েটারের প্রবেশপথে দর্শকদের সতর্ক করে নোটিশ টানানো হয়েছে যাতে বলা হয়েছে 'সিনেমাতে পারমাণবিক পরীক্ষার দৃশ্য রয়েছে যা তাদের পারমাণবিক বোমার জন্য সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে'।

হিরোশিমার বাসিন্দা আরেক বাসিন্দা এগেমি কানেগা (৬৫) সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত দেখে মিশ্র অনুভূতি পেয়েছেন। তিনি বলেন, "সিনেমাটি দেখার মতো ছিল। কিন্তু আমি কয়েকটি দৃশ্য দেখে খুব অস্বস্তি বোধ করেছি যেমন শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওপেনহাইমারের বিচার প্রক্রিয়া।"

গত জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়ার পর 'ওপেনহাইমার' বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। কিন্তু জাপানিরা 'বারবেনহাইমার' এর মত অনলাইন মিম দেখে বিরক্ত হয়েছিল যা এটিকে 'বার্বি' (একই সময়ে মুক্তি পাওয়া আরেকটি সিনেমা) সিনেমার সাথে যুক্ত করে করা হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে ইউনিভার্সাল পিকচার্স 'ওপেনহাইমার' এর বিশ্বব্যাপী মুক্তির পরিকল্পনায় জাপানকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। পরবর্তীতে স্বাধীন চলচ্চিত্রের জাপানি পরিবেশক 'বিটার্স এন্ড' অস্কার পুরস্কার অনুষ্ঠানের পরে দেশটিতে এইটি মুক্তির সময়সূচি তৈরি করে।

সিনেমাটি মুক্তিরা আগে রয়টার্সের সাথে কথা বলার সময় পারমাণবিক বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া তেরুকো ইয়াহাতা (৮৬) বলেছিলেন তিনি এটি দেখতে আগ্রহী এই আশায় যে এটি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিতর্ককে পুনরায় উজ্জীবিত করবে।

ইয়াহাতা বলেছেন, যে তিনি বোমার পেছনে থাকা পদার্থবিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের জন্য কিছুটা সহানুভূতি অনুভব করেছিলেন। 

১৯ বছর বয়সী জাপানি ছাত্র রিশু কানেমোতো যিনি শুক্রবার ছবিটি দেখেছিলেন বলেছেন, "হিরোশিমা এবং নাগাসাকি অবশ্যই পারমাণবিক বোমার শিকার হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, উদ্ভাবক অপরাধীদের মধ্যে একজন হলেও তিনিও যুদ্ধের শিকার হয়েছিলেন।"

 


অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়


 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.