নেটিভ আমেরিকান অভিনেত্রী ও অধিকারকর্মী সাচিন লিটলফেদার মারা গেছেন 

বিনোদন

টিবিএস ডেস্ক
03 October, 2022, 02:30 pm
Last modified: 03 October, 2022, 03:40 pm
'দ্য গডফাদার' খ্যাত অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডোর হয়ে অস্কার পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন সাচিন লিটলফেদার। দ্য গার্ডিয়ান সূত্রে জানা গেছে, স্তন ক্যান্সারে ভুগছিলেন সাচিন লিটলফেদার। রোববার রাতে এক টুইট বার্তার মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানায় একাডেমি অব মোশন পিকচারস।

নেটিভ আমেরিকান অভিনেত্রী ও অধিকারকর্মী সাচিন লিটলফেদার ৭৫ বছর বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। রোববার একাডেমি অব মোশন পিকচারস অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে, খবর সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের। 'দ্য গডফাদার' খ্যাত অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডোর হয়ে অস্কার পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন সাচিন লিটলফেদার।

দ্য গার্ডিয়ান সূত্রে জানা গেছে, স্তন ক্যান্সারে ভুগছিলেন সাচিন লিটলফেদার। রোববার রাতে এক টুইট বার্তার মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানায় একাডেমি। সাচিন লিটলফেদারের কেয়ারটেকারের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে দ্য হলিউড রিপোর্টার জানিয়েছে, রোববার দুপুরে নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার নোভাটো শহরে নিজ বাড়িতে মৃত্যবরণ করেন এই অভিনেত্রী। মৃত্যুর সময় তার প্রিয়জনেরা তার পাশে ছিলেন।

কালজয়ী হলিউড চলচ্চিত্র 'দ্য গডফাদার'-এ অভিনয়ের জন্য ১৯৭৩ সালে 'সেরা অভিনেতা' হিসেবে অস্কার লাভ করেন মার্লন ব্র্যান্ডো। কিন্তু আমেরিকান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নেটিভ আমেরিকানদের অধিকার আদায়ের সমর্থনে ব্র্যান্ডো সেদিন অস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। নিজের পরিবর্তে তিনি সাচিন লিটলফেদারকে পাঠান। অস্কারের মঞ্চে উঠে সাচিন মার্লন ব্র্যান্ডোর হয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন ব্র্যান্ডোর এই প্রত্যাখ্যানের কারণ জানিয়ে।

ওই ঘটনার সময় সাচিন লিটলফেদারের বয়স ছিল ২৬ বছর। অস্কারের মঞ্চে বক্তৃতার পর তাকে দুয়োধ্বনি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে অভিনেত্রী অভিযোগ করেছিলেন, ব্যাকস্টেজে সেদিন অভিনেতা জন ওয়েইন তাকে হেনস্থা করতে চেয়েছিলেন। এমনকি এর জন্য নিরাপত্তারক্ষীরা জন ওয়েইনকে জোর করে নিরস্ত করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিনের অনুষ্ঠানের পর থেকে সাচিন লিটলফেদারকে হলিউড থেকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয় এবং তিনি সেখানে আর অভিনয়ের সুযোগ পাননি।

এ ঘটনার ৫০ বছর পর, চলতি বছরের আগস্টে সাচিন লিটলফেদারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস।

একাডেমী অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড রুবিন লিটলফেদারের কাছে লেখা চিঠি সোমবার জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। চিঠিতে রুবিন লিখেছেন, "যে পরিমাণ গঞ্জনা আপনাকে সহ্য করতে হয়েছে.. তা ছিল অন্যায্য ও অযৌক্তিক।" রুবিন বলেন, ৪৫তম অস্কারের মঞ্চে লিটলফেদারের সেই বক্তৃতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানুষের মর্যাদা রক্ষা ও শ্রদ্ধা করার গুরুত্ব কতখানি।

তবে অস্কার কর্তৃপক্ষের ক্ষমা প্রার্থনার জবাবে লিটলফেদার বলেছেন, "আমরা নেটিভ আমেরিকানরা খুবই ধৈর্যশীল, মাত্র তো ৫০ বছর গেল!" তিনি আরও যোগ করেন, কৌতুকপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখাই তাদের টিকে থাকার উপায়!

২০২১ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের শৈশব নিয়ে কথা বলেছিলেন সাচিন লিটলফেদার। ১৯৪৬ সালে আপাচি-ইয়াকুই বাবা ও শ্বেতাঙ্গ মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন সাচিন। কিন্তু তার বাবা-মা দুজনেই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং তাকে লালনপালনে সক্ষম ছিলেন না। তিন বছর বয়সে তার নানা-নানি তাকে নিয়ে যান এবং তাদের কাছেই তিনি বড় হন। তিনি জানিয়েছিলেন, ঐ শিশু বয়সেই নিজের মাকে বাবার মারের হাত থেকে বাচাতে তিনি একদিন বাবাকে ঝাড়ু দিতে আঘাত করেছিলেন। সাচিনের ভাষ্যে- "হয়তো ঐ দিন থেকেই আমি একজন অধিকারকর্মী হয়ে গিয়েছিলাম!"

সাচিন লিটলফেদারের বাবা মারা যাওয়ার পর ১৭ বছর বয়সে তিনি অ্যারিজোনায় রিজার্ভেশনগুলো পরিদর্শন করতে শুরু করেন। তিনি বলেছিলেন, "তখন আমার একটা নতুন জীবন শুরু হয়েছিল। আমাদের সংস্কৃতি, প্রথার সঙ্গে মিশতে শুরু করেছিলাম আবারও।"

বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন সাচিন সান ফ্রান্সিসকোতে একটি রেডিও স্টেশনে চাকরি নেন এবং নেটিভ আমেরিকানদের জন্য স্থানীয় অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্ব দেন। একই সাথে তিনি পর্দায় ও ক্রীড়াঙ্গনে নেটিভ আমেরিকানদের তুলে ধরার বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে মার্লন ব্র্যান্ডো নেটিভ আমেরিকানদের অধিকার নিয়ে কথা বলছেন, তখন তিনি অভিনেতাকে একটি চিঠি লেখেন। এরপর ব্র্যান্ডো তাকে কল করেন এবং এক পর্যায়ে দুজনে ভালো বন্ধুতে পরিণত হন।

একই সাক্ষাৎকারে লিটলফেদার জানিয়েছিলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

সাচিন লিটলফেদার বলেছিলেন, "আমি অনেকদিন যাবতই কেমোথেরাপি এবং প্রতিদিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার মধ্যেই আছি। এর ফলে আমার স্মৃতিশক্তি আর আগের মতো ভালো নেই। আমি সারাক্ষণই খুব ক্লান্ত থাকি, কারণ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থাকতে হয়: সিটি স্ক্যান, এমআরআই, রক্ত পরীক্ষা, নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া, কেমোথেরাপি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা ইত্যাদি। এসব কাজে যদি আপনি অলস হন, তাহলে আর ক্যান্সারের ধারেকাছেও যাবেন না।"

মৃত্যু সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সাচিন লিটলফেদার বলেছিলেন, "আমি অন্য একটা জায়গায় যাচ্ছি। আমি আমার পূর্বপুরুষদের কাছে যাচ্ছি। আমি আপনাদের বিদায় জানাচ্ছি... আমি আমার আপন সত্ত্বার মধ্যেই থাকার অধিকার অর্জন করেছি।"

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.