কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ-লুক গদার মারা গেছেন

কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ফরাসি নিউ ওয়েভ সিনেমার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব জঁ-লুক গদার মারা গেছেন। ফরাসি সংবাদপত্র 'লিবারেশন' গদারের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
গদারকে বলা হয় বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক। চলচ্চিত্রের নির্মাণ কৌশলের দিক থেকে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন গদার। 'ব্রেথলেস' এর মতো ক্লাসিক সিনেমা নির্মাণের পর বিশ্ববাসীর নজরে আসেন তিনি।
এরিক রোমার, জাক রিভেট ও ফ্রাঁসোয়া ট্রুফোর মতো সমসাময়িক অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতার পাশাপাশি গদারও পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে জেগে ওঠা 'ন্যুভেল ভ্যাগ' চলচ্চিত্র আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গদারের নির্মিত একাধিক চলচ্চিত্রকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র আখ্যা দেওয়া হয়।
১৯৬০ সালে মুক্তি পায় গদারের প্রথম চলচ্চিত্র 'ব্রেথলেস'। ছবিটিতে 'মিশেল' চরিত্রটিতে অভিনয় করেন জঁ-পল বেলমুন্দু এবং তার আমেরিকান গার্লফ্রেন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেন জিন সিবার্গ। ব্যতিক্রমী ভিজ্যুয়াল স্টাইল ও সম্পাদনা কৌশলের কারণে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে সিনেমাটি; সেই সাথে গদারকেও সিনেমা জগতের একজন অসাধারণ উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত করে।
ষাটের দশক থেকে সিনেমা নিয়ে গদারের নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বহু পরিচালককে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন গদার। তার বানানো একের পর এক চলচ্চিত্র ফরাসি চলচ্চিত্রের অচলায়তন ভেঙে দিয়েছিল। চিরাচরিত পারিপাট্য, চিত্রায়ণের ব্যাকরণকে ধাক্কা দিয়েছিল গদারের হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরার কাজ। 'জাম্প কাট' সৃষ্টির জন্য সিনেমা তার কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে।
সংবাদমাধ্যম ডেডলাইন জানিয়েছে, গদার ১৯৩০ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে বেড়ে ওঠেন। সুইজারল্যান্ডের একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে স্কুল শেষ করার পর প্যারিসে ফিরে আসেন গদার এবং সিনেমা নির্মাণের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ।
১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত অভিনেত্রী অ্যানা কারিনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন এই ফরাসি-সুইস পরিচালক। গদারের বেশকিছু ছবিতে- ভিভরে সা ভিয়ে (১৯৬২), পিয়ের্যে লে ফু (১৯৬৫), বান্দে পাঁ (১৯৬৪) সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গেছে অ্যানা কারিনাকে।
গদারের কিছু সিনেমা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে তৎকালীন সময়ে। যেমন- আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকে উপজীব্য করে নির্মিত 'লে পেটি সোলদা'। ১৯৬৩ সালে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হলেও, ফরাসি সরকারকে ভুলভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ তুলে প্রাথমিকভাবে ছবিটি ফ্রান্সে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
এরপর ১৯৬৭-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত অভিনেত্রী আন উইয়াজেমেস্কির সাথে সংসার করেন গদার। গদারের পরিচালনায় নির্মিত 'লা শিনোয়াজ', ''উইক এন্ড' এবং ওয়ান প্লাস ওয়ান' চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে।
১৯৭০ সালে আন-মারি মিয়েভিল এর সাথে পরিচয় হয় গদারের এবং পরবর্তীতে তার সাথেই রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ান তিনি।
গদার তার জীবনের বাকি সময়টাও চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। ২০১৪ সালে তার নির্মিত চলচ্চিত্র 'গুডবাই টু ল্যাংগুয়েজ' এবং ২০১৮ সালে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র 'দ্য ইমেজ বুক', উভয়ই কান চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, "ফরাসি চলচ্চিত্র শিল্পে অলৌকিকভাবে আবির্ভাব ঘটেছিল তার। তারপর তিনি হয়ে গেলেন একজন মাস্টার। জঁ-লুক গদার, ফরাসি নিউ ওয়েভের সবচেয়ে আইকনিক চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি আধুনিক এবং মুক্ত শিল্পের ধারা প্রবর্তন করেছিলেন, আজ সেই জাতীয় সম্পদকে আমরা হারিয়েছি।"
সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট, ডেডলাইন