সাচিন লিটলফেদারকে অপমানের ঘটনায় ৫০ বছর পর ক্ষমা চাইলো অস্কার কর্তৃপক্ষ
বিনোদন
ন্যাটিভ আমেরিকান অভিনেত্রী ও অধিকারকর্মী সাচিন লিটলফেদারকে অস্কারের মঞ্চে অপমানের ঘটনার ৫০ বছর পর ক্ষমা চাইলো অস্কার কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৩ সালে হলিউড অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডোর হয়ে অস্কারের মঞ্চে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
হলিউডের কালজয়ী চলচ্চিত্র 'দ্য গডফাদার'-এ অভিনয়ের জন্য অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন মার্লন ব্র্যান্ডো। কিন্তু মার্কিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ন্যাটিভ আমেরিকানদের ভুলভাবে উপস্থাপনের প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজের জায়গায় সাচিন লিটলফেদারকে পাঠান 'দ্য গডফাদার' অভিনেতা।
একাডেমী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেদিন অস্কারের মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার পর থেকে তাকে অসংখ্য অন্যায়-নিপীড়ণ সহ্য করতে হয়েছে। সেসময় লিটলফেদারের বয়স ছিল ২৬ বছর। অস্কারে তার বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে অসংখ্য কটূ কথা শুনতে হয়েছিল।
আয়োজকদের মতে, সাচিন লিটলফেদারের সেদিনের বক্তৃতা ছিল টেলিভিশনে প্রচারিত কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য! পরবর্তী বছরগুলোতে আস্তে আস্তে এটিই ট্রেন্ড হয়ে যায়।
সেদিন মার্লন ব্রান্ডো পক্ষে পুরস্কার নিতে গিয়ে সাচিন লিটলফেদার সংক্ষেপে বলেছিলেন, "ব্র্যান্ডো এই পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। মার্কিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং 'উন্ডেড নী' তে যা হয়েছে, তার প্রতিবাদস্বরূপ তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।" এ বক্তব্যের পরপরই দর্শক সারি থেকে তার উদ্দেশ্যে দুয়োধ্বনি দেওয়া হয়; আবার কেউ কেউ উল্লাসও প্রকাশ করেছিলেন।
২০২০ সালে লিটলফেদার বিবিসিকে বলেছিলেন, সেদিনের বক্তৃতার পরপরই তাকে দুজন নিরাপত্তা প্রহরীকে সাথে নিয়ে মঞ্চ ছাড়তে হয়েছিল। তিনি এও বলেছিলেন যে, ব্যাকস্টেজে অভিনেতা জন ওয়েইন ছিলেন এবং তিনি মার্লন ব্র্যান্ডো ও লিটলফেদারের উপর এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে তাকে মঞ্চ থেকে টেনে নামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন! এমনকি তিনি হেঁটে যাওয়ার সময়ও কেউ কেউ তাকে ন্যাটিভ আমেরিকানদের প্রতি অবজ্ঞাসূচকভাবে তাকে 'টমাহক চপ' বলেছিলেন।
মার্লন ব্র্যান্ডো সেদিন বিশাল বড় বক্তৃতা লিখে পাঠালেও, অস্কার কর্তৃপক্ষ লিটলফেদারকে বলেছিল তার বক্তব্য ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে। অস্কারে ওই অনুষ্ঠান ৮০ মিলিয়ন মানুষ টেলিভিশনে দেখেছিল।
ওই ঘটনার পর কোনো কোনো গণমাধ্যম দাবি করেছিল, সাচিন লিটলফেদার আসলে সত্যিকার ন্যাটিভ আমেরিকান নন, বরং ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে তিনি ব্র্যান্ডোর অনুরোধে রাজি হয়েছেন। কেউ কেউ তাকে ব্র্যান্ডোর রক্ষিতা বলেও অপমান করেছিলেন! তবে সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে এই সব অভিযোগই মিথ্যা বলে জানিয়েছেন লিটলফেদার।
এদিকে একাডেমী অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড রুবিন লিটলফেদারের কাছে লেখা চিঠি সোমবার জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। চিঠিতে রুবিন লিখেছেন, "যে পরিমাণ গঞ্জনা আপনাকে সহ্য করতে হয়েছে.. তা ছিল অন্যায্য ও অযৌক্তিক।" রুবিন বলেন, ৪৫তম অস্কারের মঞ্চে লিটলফেদারের সেই বক্তৃতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানুষের মর্যাদা রক্ষা ও শ্রদ্ধা করার গুরুত্ব কতখানি।
আসছে সেপ্টেম্বরে একাডেমী মিউজিয়াম অব মোশন পিকচারস, যেখানে সাচিন লিটলফেদার ১৯৭৩ সালের অস্কারের ঘটনাটি এবং ভবিষ্যতে অস্কারে আদিবাসীদের উপস্থাপন নিয়ে কথা বলবেন। তবে অস্কার কর্তৃপক্ষের ক্ষমা প্রার্থনার জবাবে লিটলফেদার বলেছেন, "আমরা ন্যাটিভ আমেরিকানরা খুবই ধৈর্যশীল, মাত্র তো ৫০ বছর গেল!" তিনি আরও যোগ করেন, কৌতুকপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখাই তাদের টিকে থাকার উপায়!
সূত্র: বিবিসি
Comments
While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.