পরের ছবিতে সমাজের দুজন বিচ্ছিন্ন মানুষের গল্প বলব: মেজবাউর রহমান সুমন

বিনোদন

03 August, 2022, 08:40 pm
Last modified: 03 August, 2022, 09:06 pm
‘আমি খুবই অবাক হচ্ছি—এই ছবি দেখার জন্য তো এত দর্শক হওয়ার কথা না। এটা আসলে আমাদের সাহসও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

'আমি আসলে হলে হলে যাচ্ছি না। আমার কাছে প্রেক্ষাগৃহের ভিডিওগুলো আসছে। আমি মনে করি সিনেপ্লেক্সের দর্শক উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। হাওয়া নিয়ে তাদের এক ধরনের উচ্ছ্বাস থাকবেই। কিন্তু মধুমিতা, সাভারসহ সিঙ্গেল স্ক্রিনের ভিডিওগুলো দেখে আমি রীতিমতো অভিভূত। আমি নির্মাতা হিসেবে বলতে পারি, হাওয়া সবার সাথে বা সব ধরনের দর্শকের সঙ্গে কমিউনিকেট করার মতো ছবি না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেটা সবাই কানেক্ট করছেন। আমি আসলেই খুব আনন্দিত।'

হাওয়া নিয়ে দর্শকের উচ্ছ্বাস প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন। বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন হাওয়া লাগিয়েছে ২৯ জুলাই মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'হাওয়া'। বহুদিন পর দর্শকেরা হলমুখী হয়েছেন হাওয়ার কল্যানে। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লক বাস্টার সিনেমাসসহ বেশিরভাগ সিনেমা হলের এক সপ্তাহের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, সাভার, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ হাওয়া মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ সিনেমা হলে।

হাওয়া মুক্তির পর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা হয় মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে। তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন ছবিটি সব ধরনের দর্শকের সঙ্গে কানেক্ট করার মতো না, সেটি। তিনি বলেন, 'ছবি তো সবার সাথে কমিউনিকেট করার জন্যই্। কিন্তু আপনি খেয়াল করে দেখবেন সবাই একই সঙ্গে বা একইরকমভাবে হলুদ রঙটা পছন্দ করেন না। লাল রঙ পছন্দ করেন না। মানুষের চয়েস থাকে। 

'আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রেমের গল্প দেখতে চান। বা অ্যাকশন দেখতে চান। ছবিটা ছবি হয়ে ওঠার জন্য হয়তো এগলো ঠিকঠাক লাগে। না হলে এগুলো নাটক বলে অ্যাখ্যায়িত করেন সবাই। তো সিনেমাটিক যে জার্নি, সেটা হয়তো আমাদের ছবিতে নেই। তার মানে এই নয় যে, সিনেমার দর্শক নেই। কিন্তু আমি তো চাইলেই এটা পরিবর্তন করতে পারব না। 

'ছবি দেখার সাধারণ যে দর্শক তাদের নিয়ে আমার একটু ভয় ছিলো, হাওয়া তারা কীভাবে নেবেন? কিন্তু তারা ঠিকই গল্পটা কানেক্ট করে ফেলছেন। যারা সিঙ্গেল স্ক্রিনে ছবি দেখছেন তাদের উচ্ছ্বাসটাই আমাদের জন্য প্রাপ্তি। তারা গল্পে মেটাফোরটা বুঝে না ফেললেও, গল্পটা ঠিকই বুঝে ফেলেছেন এবং সেটা জানিয়ে দিচ্ছেন।'

সুমনের কাছে জানতে চাই, এমনটা হওয়ার কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

তিনি বলেন, 'এটার বড় কারণ, 'হাওয়া' একটা লোকগল্পের প্লট। আমাদের দেশের দর্শকেরা লোকগল্পের ফর্মের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত, যেমন বেদের মেয়ে জোসনা, রূপবান এসব। আমরা হাওয়াতে সেই গল্পের একটা মডার্ন ফর্ম ব্যবহার করেছি। এ কারনেই মানুষ কানেক্ট করে পছন্দ করছেন।'

সুমন মনে করেন যাদের হাওয়া ভালো লাগছে তারা হয়তো অ্যাকশন বা বানিজ্যিক ছবি দেখা দর্শক। তিনি বলেন, 'আমি খুবই অবাক হচ্ছি—এই ছবি দেখার জন্য তো এত দর্শক হওয়ার কথা না। এটা আসলে আমাদের সাহসও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আস্তে-ধীরে বুঝে বুঝে ব্যাপারটা হোক। গতকাল বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে থেকে গাউসুল আলম শাওন ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বললেন, সুমন এই ছবিটা নিয়ে এত মানুষের উচ্ছ্বাস। তার মানে আমরা এখন সব ধরনের গল্প বলতে পারব। তার কথা আমাকে আরও বেশি আগ্রহী কয়ে তুলেছে। আমরা তো চাইলে ফেস্টিভালের জন্য ছবি বানিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরতে পারি। কিন্তু আমাদের চাওয়া ছিল এটা যেন সবার আগে এই দেশের মানুষ দেখেন এবং বুঝতে পারেন।'

ছবি মুক্তির পরপরই সিনেমা হলে ছুটছেন ছবিটির অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু ছবিটির 'ক্যাপ্টেন অভ দ্য শিপ' সুমন কোথাও যাচ্ছেন না। নিজের মতো করে আছেন। নীরবে-নিভৃতে উপভোগ করছেন হাওয়ার এই ভ্রমণ। জানতে চাই, আপনার এরকম গুটিয়ে থাকার কারণ কী?

তিনি বলেন, 'আমার ফারফর্মাররা যাচ্ছেন। তারা কথা বলছেন। আমার কাছে মনে হয় আমার এখন কথা বলার চেয়ে শোনা বেশি দরকার। ছবিটাতে সবাই ক্যামেরার সামনে থেকে পারফর্ম করেছেন, আমি করেছি পেছন থেকে। তাই পেছন থেকেই আমি বিষয়টা উপভোগ করতে চাই। আমি আসলে ঠান্ডা মাথায় এটা করতে চাই। উত্তেজিত হয়ে না।'

ছবিটি বানানোর গল্পটা প্রসঙ্গে বলেন, 'আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল সমুদ্রে শুটিং করা। ছবিতে নয়টা চরিত্র। হাওয়া স্পেসিফিক একটা বা দুটি চরিত্রের ঘাড়ে চড়ে গল্পটা বলে নাই্। গল্পের প্রয়োজনে প্রতিটি চরিত্রের পরিবর্তন আছে। 

'জোর গলায় বলতে চাই, আমি যে ছবিটা বানিয়েছি সেটা একদম আমাদের অঞ্চলের লোক ফর্ম। আমাদের গল্প। পাশাপাশি বাণিজ্যিক জায়গাটা মাথায় রাখিনি। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর অ্যাক্টিং ক্রাফট নিয়ে কাজ করেছি। আমি আসলে আলাদা পৃথিবীতে মানুষকে ঢোকাতে চেয়েছি। ১২০ মিনিট মানুষ একটা অন্য পৃথিবীতে থাকবে। নৌকায় থাকবে। এই জার্নিতে কিন্তু নাচ-গান প্রেম বা মশলাদার কিছুই নাই। ঠান্ডা মাথায় ছবিটা দেখতে হবে। দর্শক সেটাই করছেন।'

ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। রিভিউ আসছে। অশ্লীল সংলাপ নিয়ে কথা বলছেন অনেকে। এটা নিয়ে কথা বলেন সুমন। তিনি বলেন, 'যারা আমাদের ছবির অভিনয়শিল্পীদের বলা স্ল্যাং নিয়ে কথা বলছেন তারা সম্ভবত সমুদ্রের মানুষের ভাষা জানেন না। আমি যে স্ল্যাং ব্যাবহার করেছি সেটা খুবই কম। সমুদ্রের মানুষদের বলা পাঁচ শতাংশও না। নরমালিসাধারণত ওরা একে অপরের সঙ্গে এরচেয়ে ভয়ংকর স্ল্যাং ব্যবহার করে কথা বলেন। এসব ওরা হাসতে হাসতে একে অপরকে বলেন। আমি মাঝিদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে দেখেছি এটাই ওদের ভাষা। বঙ্গীয় ভাষায় তারা কথা বলেন না।'

পরের ছবি নিয়েও কথা বলেন সুমন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে নতুন ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজে হাত দেবেন। ইঙ্গিত দিলেন নতুন ছবির গল্পের। জানালেন, এবার সমুদ্র নয়; জল ও স্থলের গল্প বলবেন তিনি। ছবির ২০-৩০ ভাগ থাকবে নদীর গল্প। 

তিনি বলেন, 'সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন দুজন মানুষের গল্প বলব। ছবিতে গ্রাম বা নদী থাকবে। কিন্তু সেটা আসলে আমাদের গল্পের মূল বিষয় না। দুজন বিচ্ছিন্ন মানুষই আমাদের গল্পের বিষয়বস্তু।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.