অমিতাভ বচ্চন এবং তিন 'খান'ই ছিলেন দক্ষিণ ভারতে সর্বশেষ সফল বলিউড তারকা!

বিনোদন

টিবিএস ডেস্ক
28 July, 2022, 02:25 pm
Last modified: 28 July, 2022, 02:54 pm
হিন্দি চলচ্চিত্র এবং দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে তুলনা এখন যেন অনেকটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততই বলিউডকে সরিয়ে শীর্ষে জায়গা করে নিচ্ছে তামিল, মালয়ালাম, তেলেগু ইত্যাদি সিনেমাগুলো।

হিন্দি চলচ্চিত্র এবং দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে তুলনা এখন যেন অনেকটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।  যতই দিন যাচ্ছে, ততই বলিউডকে সরিয়ে দিয়ে শীর্ষে জায়গা করে নিচ্ছে তামিল, মালয়ালাম, তেলেগু ইত্যাদি সিনেমাগুলো। সম্প্রতি রণবীর কাপুরের কামব্যাক সিনেমা 'শমশেরা'তে তার আশাতীত দুর্বল (!) পারফরম্যান্স সমালোচক ও সিনেমা বিশ্লেষকদেরকে আরও একবার মুখ খোলার সুযোগ করে দিয়েছে।

একই সিনেমার হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় সংস্করণের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণে নেমেছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তারকাদের জন্য এই ট্রেন্ড যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে! অনেকেই প্রশ্ন করছেন, হিন্দি সিনেমাগুলো কেন ডাবিং করা দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার মতো ব্যবসায়িক সাফল্য পাচ্ছে না। হিন্দি সিনেমাগুলোকে দক্ষিণ ভারতীয় ভাষায় মুক্তি দেওয়া উচিত- এমন মন্তব্যও করেছেন তারা। কিন্তু হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রবণতা সচরাচর চোখে পড়ে না।

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা সম্পর্কিত ট্রেড অ্যানালিস্ট শ্রীধর পিল্লাই জানান, দক্ষিণের দর্শকদের জন্য হিন্দি সিনেমা ডাবিং করার প্রয়োজন পড়ে না। তার ভাষ্যে, "আমার মনে হয় না যে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'শমশেরা'রও ডাবিং প্রয়োজন আছে। কারণ দক্ষিণ ভারতের মানুষ বহু বছর ধরেই হিন্দি সিনেমা দেখছে, কখনোই সেখানে ডাবিং ছিল না। এখন হুট করে হিন্দি সিনেমাগুলো দক্ষিণ ভারতীয় ভাষায় ডাবিং করতে শুরু করলে এটা কোনো কাজে দিবে না।"

আর শ্রীধরের মতে, এটার পেছনে কারণ হচ্ছে ডাবিং খুবই সাম্প্রতিক একটি ট্রেন্ড। তিনি বলেন, "আমরা এমন একটা সময়ে বেড়ে উঠেছি যখন বড় বড় সিনেমাগুলোর ডাবিং ভার্সন ছাড়া হতো না। শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতের ছবিগুলো যখন উত্তর ভারতে দর্শক পাওয়ার জন্য কাজ করতে শুরু করলো, তখনি এই ট্রেন্ড চালু হলো। হিন্দি সিনেমার আসল হিন্দি ডায়লগ, গান এবং হিন্দিভাষী অভিনেতাদের জন্য সবসময়ই দর্শক চাহিদা ছিল। উত্তর ভারতের অভিনেতারাই বরং দক্ষিণে এসে কাজ করা শুরু করেছেন।"

তেলেগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক হায়দরাবাদে আগে থেকেই হিন্দি সিনেমার বাজার ছিল, তাই সেটি এই আলোচনার বাইরে। কিন্তু শ্রীধরের প্রশ্ন তামিল ও কন্নড়া সিনেমা নিয়ে।

তিনি বলেন, "আপনি যদি চেন্নাই আর ব্যাঙ্গালোরের দিকে তাকান, এখানে কারা হিন্দি সিনেমা দেখে? শুধুমাত্র অভিবাসী শ্রমিকেরা। এখন এই দুই শহরে আইটি খাতে বহু লোক কাজ করে। আর ঝাড়খন্ড এবং বিহার থেকে কায়িক শ্রমের জন্যও আসে প্রচুর মানুষ। তারা হিন্দিভাষী লোক, তারাই হিন্দি সিনেমা দেখে। আমাদের দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা তাদের ভালো লাগবে না।"

কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এই ট্রেন্ড সম্পূর্ণ উলটো। হিন্দিতে ডাবিং করা দক্ষিণী সিনেমাগুলো হিন্দিভাষী দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। এর কারণ হিসেবে শ্রীধর মনে করেন, "বিভিন্ন হিন্দি টিভি চ্যানেলে ডাবিং করা দক্ষিণী সিনেমা সম্প্রচারের মাধ্যমে উত্তর ভারতের দর্শকদের কাছে দক্ষিণের হিরোদের জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। এটা শুরু হয়েছিল 'বাহুবলী' দিয়ে,  এরপর 'আরআরআর' এবং 'কেজিএফ'।"

অধিকাংশ বিশ্লেষকই বলবেন, কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউনের আগপর্যন্ত হিন্দি সিনেমার বাজার রমরমাই ছিল এবং তাদের প্রচুর দর্শকও ছিল। কিন্তু কোভিড-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ ভারতের মাসালাদার সিনেমা বেশ হিট হয়েছে বাজারে। এ ব্যাপারে শ্রীধরের মতামত, "ষাটের দশক থেকে এখন পর্যন্ত, হিন্দি সিনেমায় অ্যাকশন হিরোদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধর্মেন্দ্র হোক বা অ্যাংরি ইয়ংম্যান অমিতাভ বচ্চন- তাদের সিনেমায় সবকিছুই ছিল। 

"তারপর আসে আমির খান-শাহরুখ খানের মতো অপেক্ষাকৃত নমনীয় হিরোরা। তাদেরকে অ্যাকশন হিরো বলে চিহ্নিত করা হয়নি। সালমান খান প্রথমে রোমান্টিক ছবি দয়ে শুরু করেন এবং পরে অ্যাকশন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে 'ভাইজান' তকমা লাভ করেন। সালমানের অ্যাকশন ছবিগুলো দর্শক অত্যন্ত পছন্দ করেছিল। কিন্তু সালমানও পরে মাল্টিপ্লেক্স দর্শকের দিকেই ঝুঁকে যান।

কিন্তু এখানেই একটা ভুল করেছিলেন হিন্দি নির্মাতারা। তাদের ধারণা ছিল, মুম্বাই ও দিল্লীর উঁচুদরের দর্শকেরাই তাদের নিয়মিত দর্শক। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শ্রীধর জানান, 'ভুলভুলাইয়া ২' দক্ষিণ ভারতে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। এটা এখানকার বাজার বিবেচনা করে বানানো হয়নি, বরং আসল ভাষায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

"আমি মনে করি না, উত্তর ভারতের কোনো হিরো বা নায়ক দক্ষিণে এসে বিগ ওপেনিং বা বড় ব্যবসায়িক সাফল্য পাবেন। অভিতাভ বচ্চনই ছিলেন শেষ হিন্দি অভিনেত,  যিনি দক্ষিণের মানুষেরও মন জয় করে নিয়েছিলেন। এরপর তিন খানও বেশ ভালোই দাপট দেখিয়েছেন। কিন্তু তাদের পর সেই জায়গা আর কেউ দখল করতে পারেননি। কন্টেন্ট খুব ভালো না হলে এখন দক্ষিণে এসে ব্যবসাসফল হওয়া কঠিন।"

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.