‘চীনা সাংস্কৃতিক মাস, ২০১৯’ উপলক্ষ্যে শিল্পকলায় রবীন্দ্রনাথের নাটক
‘চীনা সাংস্কৃতিক মাস ২০১৯’ উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকেল ৪ টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি’র পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘চিত্রা’ এবং বাংলাদেশের লোক নাট্যদলের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘রথযাত্রা’।
চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটির পরিবেশনায় চিত্রা নাটকটি নির্দশনা দিয়েছেন হৌ ইং চুয়ে, অনুবাদ করেছেন পাই থাই ইউয়ান এবং বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লু চিয়া হুয়া, চিয়াং চাও লে, লাই হাই ফোং, লি লিন খুন ও লিউ চিং ই।
‘চিত্রা' নাটকের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের নাট্যকর্ম এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে চীনা ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে চীনের সংস্কৃতির বিশেষ সংস্পর্শের সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদেরকে চীন এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে উত্সাহিত করার চেষ্টাও আছে।
রবীন্দ্রনাথের নাটকের নারী চরিত্রগুলো নেওয়া হয়েছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও স্তর থেকে। 'চিত্রা' নাটকের 'চিত্রাঙ্গদা' তেমনি একটি চরিত্র। ১৮৯২ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'চিত্রাঙ্গদা' নাটক প্রকাশ করেন। এই নাটকের বিষষবস্তু মহাকাব্য 'মহাভারত' থেকে নেওয়া হয়েছে। নাটকে বীর অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার প্রেমের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তবে মহাভারতের চিত্রাঙ্গদাও কবির নাটকের চিত্রাঙ্গদার মধ্যে অমিল আছে।
মহাভারতের 'চিত্রাঙ্গদা' ছিলেন একজন অপরূপ ও লাবণ্যময়ী মেয়ে। আর রবীন্দ্রনাথের নাটকে চিত্রাঙ্গদার নেই ফুলের মতো সুন্দর মুখ আর অপূর্ব চেহারা। তিনি মেয়েদের লাবণ্য বুঝেন না; ভয় কী, তাও তিনি জানেন না। তিনি সুন্দর সুন্দর পোষাক ও গায় দেন না। সারা দিন তিনি শুধু তীর-ধনুক নিয়ে থাকেন। মহাভারতের চিত্রাঙ্গদার সংগে এ চিত্রাঙ্গদার অনেক পার্থক্য। নাটকে চিত্রাঙ্গদা যথন প্রথম অর্জুনের সামনে আসেন, তখন তিনি অর্জুনের মন জয় করতে পারেন নি। তবে চিত্রাঙ্গদা শেষ পর্যন্ত অর্জুনের ভালোবাসা পেয়েছেন। 'চিত্রা' নাটকে কবি এই কাহিনী অপূর্ব ভাষায় ফুটিয়ে তোলেন।
লোক নাট্যদলের পরিবেশনায় রথযাত্রা নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহারিয়ার কামাল,আবু বকর বকশী, জিয়াউদ্দিন শিপন, বিপুল কুমার দাস,মাস্উদ সুমন, ধনিক-২- জুলফিকার আলী (বাবু), আজিজুর রহমান সুজন, শিশির কুমার রায়, মুসা রুরেল, মোঃ ফজলুল হক।
‘রথযাত্রা’ নাটকে রথের গল্প বলা হয়েছে। রাজা, পুরোহিত, সৈন্য কেউ রথ চালাতে পারছেন না। গভীর সঙ্কট! জনগণ উদ্বিগ্ন, কেউ কোনো উপায় বের করতে পারছে না। অবশেষে মন্ত্রী মহোদয় সমাজের বণিক শ্রেণীকে আমন্ত্রণ জানালেন রথচালাতে। অনিচ্ছা নিয়ে তারা অনেক চেষ্টা করলো, কিন্তু রথের চাকা চললো না। বণিক শ্রেণীর ব্যর্থতায় সৈন্যরা খুশি হলো।
হঠাৎ একজন সংবাদ নিয়ে এলো, সমাজের নিম্নবর্ণের অদক্ষ লোকজন রথ চালানোর জন্য আসছে। এ সংবাদে সৈন্যরা এবং পুরোহিতরা গাম্বিত হলেন এবং তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলেন। যেহেতু এরা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর, তাই তাদের কোনো অধিকার নেই রথের রশি স্পর্শ করার! কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় এদের বাঁধা দিতে নিষেধ করলেন। অবশেষে নিম্নবর্ণের জনগণের নেতা তার দল নিয়ে এলো। তারা রথের রশি ধরতেই রথের চাকা সাবলীলভাবে চলতে শুরু করল!
প্রসঙ্গত, ঢাকায় চীনা দূতাবাসের আয়োজনে ‘চীনা সংস্কৃতি মাস, ২০১৯’ উপলক্ষ্যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল ২৬ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে। নাট্য দলটি ২৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘চিত্রা’ মঞ্চস্থ করবে।