‘নিজে মরার আগে আসল ঘটনা বলে যাও’: সাক্ষাৎকারে পরীমনি

বিনোদন

15 June, 2021, 01:30 pm
Last modified: 15 June, 2021, 02:00 pm
'এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা যায়, তারা কেন সুইসাইড করে, আমি কয়েকদিনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমি নায়িকা পরীমনি না হলে হয়তো ওই সিদ্ধান্ত নিতাম বা আমাকে বাধ্য করা হতো।'

গত ৯ জুন রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে আলোচিত নায়িকা পরীমনিতে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়, এমন অভিযোগ এনে ১৩ জুন রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন এই নায়িকা। পরেরদিন (সোমবার) মামলাও করেন তিনি।

সেদিনই মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনা নিয়ে ১৪ জুন রাতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

পরীমনি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

টিবিএস: অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়েছে। আপনার এখন প্রতিক্রিয়া কী?

পরীমনি: এটা আসলে অল্প কথায় বলা কঠিন। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি এত দ্রুত সব কিছু হবে। আসলে অপরাধীরা আটকের আগ পর্যন্ত নিজের কোনো অনুভূতি কাজ করছিল না। যখন টিভিতে দেখলাম ওদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তখন যেন শক্তি ফিরে পেলাম। আমার কাজ করার শক্তি, খাওয়ার শক্তি যেন ফিরে এলো।

আটকের খবর টিভিতে দেখার পর ভাত খেতে পেরেছি। তার আগ অবধি গলা দিয়ে ভাত নামছিল না। সবার এত সাপোর্ট বিফলে যায়নি। গতকাল (রোববার) আমাকে সবাই কাঁদতে দেখেছেন। এখন একটু হাসতে পারছি।

টিবিএস: আটকের আগ পর্যন্ত কি আশা করেছিলেন এত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

পরীমনি: আমার সাথে ঘটনাটা ঘটে ৯ জুন রাতে। উত্তরার বোট ক্লাবে। তারপর থেকে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল এই বুঝি মারা যাব। এই অবস্থায়ও আমি শিল্পী সমিতির সাধারষ সম্পাদক জায়েদ খানের কাছে গিয়েছিলাম। পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের কাছেও গিয়েছিলাম। থানায় গিয়েছিলাম তারও আগে। কিন্তু কেউ সেভাবে আমাকে কোনো সহযোগিতা করেননি। আমি অভিভাবক হিসেবে কাউকে পাইনি।

ঘটনাটির পর শুরু থেকে যাদের কাছে গিয়েছি তারা প্রত্যেকে আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন। একজনের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার অবধি পৌঁছাতে পারিনি। তখনই খুব ইনসিকিউরড ফিল করি। সেইসময় মনে হয়, আমি যদি মরে যাই তবে দোষীদের নিয়ে মরি! একা কেন মরব? যখনই বিষয়টি পাবলিক করি (ফেসবুক পোস্ট), তারপরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এটা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।

টিবিএস: শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলছেন, তিনি সবসময় নাকি আপনার পাশে আছেন...

পরীমনি: আমি শিল্পী সমিতির সদস্য এবং চলচ্চিত্রে কাজ করি। আমাদের একটা সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। আমি ব্যক্তি পরীমনি চাইলে হয়তো একা অনেক কিছুই করতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা শুরুতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম আমার সংগঠন আমার পাশে থাকুক। আমার সম্মানহানি তাদেরও তো সম্মানহানি। তাই সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি প্রথমে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ভরসা পেয়েছিলাম। দুদিন চলে যাওয়ার পরও আমাকে একবার ফোন করেও খোঁজ নেননি। তিনদিনের মাথায় তিনি জানান, আমি যার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি তিনি ঢাকায় নেই। এতে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। হতাশ হয়েছি। উপায় না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেই। এখন যদি সমিতি থেকে বলে আমার পাশে আছে, তাহলে থাকুক। তবে আমি যাদের আপন ভাবতাম, কিছু হলেই যাদের বাসা পর্যন্ত যেতাম, তাদের কাউকে পাশে পাইনি।

টিবিএস: তাহলে এত দ্রুত যে ব্যবস্থা নেওয় হলো, অপরাধীরা আটক হলো, এটি আসলে ব্যক্তি পরীমনির ক্রেডিট নাকি অন্য কারও?

পরীমনি: ক্রেডিটটা মিডিয়াকর্মীদের। আমার সাংবাদিক ভাইদের। তাদের বিকল্প ছিল না। এছাড়া প্রশাসন দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের আইন কতটা শক্তিশালী। তারা চাইলেই সবকিছু পারে।

টিবিএস: কিন্তু স্যোশাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে, একটা সময় আপনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করতেন...

পরীমনি: যাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছি, তারা প্রকৃত সাংবাদিক ছিল না। নামেমাত্র সাংবাদিক ছিল। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন কাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছি। আপনারা বলতে পারবেন কখনো পরীমনি আপনাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে? যারা সত্যিকারের সাংবাদিক, তারা শুরু থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছেন। আমিও তাদের সম্মান দিয়েছি।

টিবিএস: পারিবারিক অভিভাবক বলতে আপনার নানা ছাড়া কেউ নেই। তিনি কি বিষয়টি জেনেছেন?

পরীমনি: আমার নানার বয়স ১১৩ বছর। আমার সাথে থাকেন। তিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি বোঝেন। এই বিষয়টি তাকে জানাতে চাইনি। কিন্তু বাসায় এত মানুষজন এসেছেন, তিনি যেকোনোভাবে বিষয়টি জেনে গেছেন। অথবা তাকে কেউ ফোনে জানিয়েছে। গতরাতে সবাই চলে যাওয়ার পর তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, কী হয়েছে? আমি সবকিছু খুলে বলতে পারিনি। কেঁদে ফেলেছি। তখন শুধু তিনি আমাকে একটি কথাই বলেছেন, 'বি স্ট্রং'। তারপর থেকেই একটু একটু শক্তি পাচ্ছিলাম।

পরীমনি। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

টিবিএস: বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। সেখানে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য কি আপনার কাছে যথেষ্ট আলামত আছে?

পরীমনি: যা যা প্রমাণ ছিল, সবই দিয়েছি। আপনারাও দেখেছেন। ওইদিনের সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজগুলো দেখলেও অনেক কিছু প্রকাশ পাবে। আমি চাই সেগুলো যেন দ্রুত সংগ্রহ করা হয়। ওইদিন সেখানকার ওয়েটাররা আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। তাদের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তাদের বারবার লাইট বন্ধ করতে বলা হলেও তারা লাইট বন্ধ না করে সুইচ ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা সাহায্য না করলে হয়তো ওইদিন আমাকে মেরে ফেলত সেখানে।

টিবিএস: আপনার এই ঘটনার মাধ্যমে সাধারণ মেয়েদের কি কোনো বার্তা দিতে চান?

পরীমনি: আসলে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা যায়, তারা কেন সুইসাইড করে, আমি কয়েকদিনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমি নায়িকা পরীমনি না হলে হয়তো ওই সিদ্ধান্ত নিতাম বা আমাকে বাধ্য করা হতো। যাদের কাছে জানাতে গিয়েছি, তারা আমাকে নিজের মান-ইজ্জত নিয়ে ভাবতে বলেছেন। বলেছেন, আমার ইজ্জত থাকবে না। কিন্তু যেটার ওপর অলরেডি আঘাত এসেছে, সেটা সবাইকে জানালে নতুন করে আর কি যাবে! তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, অবশ্যই সেটা সবাইকে বলব। তারপর যা হওয়ার হবে।

সাধারণ মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলব, অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করা উচিত না। এটা যদি ভীতুদের মতো কথা হয়, তাহলে তা-ই। কারণ আমি নিজেই প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। এমন যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, সত্যটা বলেই মরো। যদি এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেউ মরে যায়, তাহলে সেই মরে যাওয়াটা কোনো সমাধান নয়। মরে গেলে কোনো সমস্যা বা রহস্যের জট খুলবে না। তাই নিজে মরার আগে আসল ঘটনা বলে যাও।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.