নাটকে আপত্তিকর বার্তা, দুঃখ প্রকাশ নিশো-মেহজাবীনের, ক্ষমা চাইলেন পরিচালক

বিনোদন

25 July, 2021, 10:00 pm
Last modified: 26 July, 2021, 02:43 pm
'ঘটনা সত্য' নাটকের শেষ দিকে বলা হয়, বাবা মা-র পাপের শাস্তি বা কর্মফলের কারণে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

সমালোচনার মুখে ইউটিউব থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো ঈদের নাটক 'ঘটনা সত্য'। শুধু নামিয়ে দেওয়াই হয়নি, নাটকে প্রচারিত সংলাপের কারণে ক্ষমা চাইলেন পরিচালক। পাশাপাশি নাটকের দুই অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী দর্শকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

নাটকটিতে আফরান নিশো অভিনয় করেছেন ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার চরিত্রে এবং মেহজাবীন অভিনয় করেছেন কাজের বুয়ার চরিত্রে। নাটকের শেষ দিকে বলা হয়, বাবা মা-র পাপের শাস্তি বা কর্মফলের কারণে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

এ ধরনের বার্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ওঠে। অনেক বাবা-মা স্ট্যাটাস ও লাইভে এসে নাটকটির রচয়িতা, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের মতো এমন অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে এমন ভুল তথ্য আশা করেন না বলে জানান।

'ঘটনা সত্য' নাটকের একটি দৃশ্য

এ ছাড়া পিএফডিএ-ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজিদা রহমান ড্যানি স্বাক্ষরিত নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন ড. মোঃ গোলাম রাব্বানী বরাবর লিখিত এক চিঠিতে বলা হয়, "২০১১ সাল থেকে অটিজম এবং স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সক্রিয় সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সম্মানিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত দশ বছরের সচেতনতা, প্রচার, দেশ জুড়ে- বিদেশে, প্রতিষ্ঠানে, পিতামাতাদের সাথে, সামাজিকভাবে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরলস কাজ করা হয়েছে।

"অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এই ঈদে আফরান নিশো ও মেহজাবীন অভিনীত মায়নুল সানুর লেখা এবং রুবেল হোসেন পরিচালিত "ঘটনা সত্য" নাটক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের পরিবারকে/পিতা মাতাকে মানসিক আঘাত করে এবং প্রতিবন্ধিত্ব সম্পর্কে যে ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক, মানহানীকর। নাটকের এই স্ক্রিপ্ট  'পাপের ফল, মানুষ কোনভাবেই এড়াতে পারে না। প্রত্যেককেই তার নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করতে হয় এটাই নিয়তি। কখনো কখনো আমাদের কোন অনৈতিক কাজ বাস্তব জীবনে চরম শাস্তি নিয়ে আস্তে পারে। যা হয়ত জীবন ব্যাপী ভোগ করতে হয়। ঘটনা কিন্তু সত্য'- মূলত আমাদের স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।"

"এই ধরনের নেতিবাচক মেসেজ সাধারন মানুষ এবং সমাজের উপর সরাসরি প্রতিবন্ধিতা সম্পন্ন মানুষের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।"

নাটক সংশ্লিষ্ট সবার শাস্তি দাবি করে তিনি আরও বলেন, "এই অসত্য, নেতিবাচক এবং স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা সম্পন্ন মানুষের জন্য অপমানকর। নাটকটি অতি সত্ত্বর অপসারণ এবং সম্প্রসারণ বন্ধ করা হোক। একইসাথে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সুরক্ষা ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩-এর অধীনে মানহানীকর হিসেবে নাটকের স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরিচালক, এবং সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জোর আবেদন করছি।"

সমালোচনার মুখে আজ রোববার দুপুরে নাটকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির ইউটিউব চ্যানেল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা পাঠানো হয় গণমাধ্যমে।

'ঘটনা সত্য' নাটকের একটি দৃশ্য

এছাড়া অভিনয়শিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তারা লেখেন, "সুপ্রিয় দর্শক, 'ঘটনা সত্য' নাটকের নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী এবং কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ নাটকের মাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটির সাথে আমরা সহমত পোষণ করছি। বিষয়টি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। যারা আমাদের নাটক 'ঘটনা সত্য'র এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছেন, সবাইকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে জানাই, প্রথম বার্তা পাবার পরপরই আমরা উপলব্ধি করি, অসাবধানতাবশত নাটকে আমরা ভুল একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম। এরপর আমরা সঙ্গে সঙ্গেই নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজ চলছে।"

নাটকটির পরিচালক রুবেল হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। আমরা ইচ্ছা করে করিনি। তাই সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। আশা করছি আমাদের ভুলটা আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।'

নাটকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির কর্নধার এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, 'আমরা আসলে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। যেখানে বলতে চেয়েছি কেউ অন্যায় করে সফল হতে পারে না। কিন্তু সেটার উপস্থাপনটা ঠিক হয়নি। তাই আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং নাটকটি নামিয়ে ফেলেছি। যেসব মা-বাবা দুঃখ পেয়েছেন তাদের সবার কাছে আমরা ক্ষমা চাই।'

তিনি জানান, 'ভুলটা কারেকশন করে পুনরায় নাটকটি আপলোড করা হবে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.