জানোয়ার: গল্পই যেখানে নায়ক

বিনোদন

02 February, 2021, 01:50 pm
Last modified: 02 February, 2021, 01:52 pm
করোনাকালে গাজীপুরে ঘটা এক নৃশংস ঘটনা ঘিরে এটি নির্মিত।

গত ১৪ জানুয়ারি দেশীয় ওটিটি প্লাটফর্ম সিনেমাটিকে মুক্তি পেয়েছে  ওয়েব ফিল্ম 'জানোয়ার'। করোনাকালে গাজীপুরে ঘটা এক নৃশংস ঘটনা ঘিরে এটি নির্মাণ করেছেন রায়হান রাফি।

মুক্তির পরপরই ফিল্মটি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে রাফি বলেন, 'করোনার কারণে তখন পৃথিবীটা স্তব্ধ। আমরা টেলিভিশনে শুধু করোনার খবর দেখি। ওই সময়ই একটা খবর দেখে আমি চমকে যাই। একই পরিবারের চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমার কাছে ঘটনাটা একটু অন্যরকম লাগে। পুরো পৃথিবী যেখানে থেমে আছে, তখন একরাতে এক পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমি ঘটনাটা ফলোআপে রাখি। পরদিন, তার পরদিন...। তিন-চারদিনের মাথায় খুনিরা আটকও হয়।'

চিত্রনাট্য লেখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের সমস্যা হলো, যেকোনো ঘটনা ঘটলে দু-তিনদিন হয়তো মনে রাখি, তারপর সেটা ভুলে যাই। নতুন ঘটনায় চোখ রাখি। কিন্তু গাজীপুর আমার গ্রামের বাড়ি। তাই সহজেই বিষয়গুলো কানেক্ট করতে পারছিলাম। এ কারণে নিজ উদ্যোগে কিছু করার পরিকল্পনা করি।'

করোনাকালে রাফি 'অক্সিজেন' নামে একটি শর্টফিল্ম বানিয়ে ঈদে রিলিজ দেন। তার আগেই 'জানোয়ার' নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন। লিখতে বসে প্রথমে এ নামটাই ভাবেন। রাফির মতে, 'যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা জানোয়ার ছাড়া অন্য কিছু নয়।'

রাফি বলেন,"ওইসময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাইভ টেকনোলজির সঙ্গে আলাপ করি। এরইমধ্যে তাদের বিগ বাজেটের ছবি 'পরান' নির্মাণ করেছি। কিন্তু করোনার কারণে রিলিজ দিতে পারেননি তারা। এই কারণে তারা বলেন, তাদের জন্য যেন একটা কনটেন্ট বানিয়ে দিই। তখনই আমার মনে আসে, 'জানোয়ার' কেন নয়?"

কনটেন্ট নিয়ে আলাপের সময় অবশ্য রাফি শর্ত দেন, কাস্টিং নিয়ে কথা বলা যাবে না। তার ইচ্ছামতো কাস্টিং নেবেন। স্টার কাস্ট নেবেন না। লাইভ টেকনোলজি সম্মতি দেয়।

এরপর শুরু হয় পুরো টিমের কাজ। রাফি বসে যান চিত্রনাট্য লিখতে। এক ফাঁকে ঘুরে আসেন ঘটনাস্থল। আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার আদ্যোপ্রান্ত জেনে নেন। আটককৃত আসামিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কাশিমপুর কারাগারেও যান। স্ক্রিপ্টের পাশাপাশি শুরু হয় কাস্টিং। বিশেষ করে মঞ্চের অভিনয়শিল্পীদের দিকে নজর দেন। আর যারা নাটক বা চলচ্চিত্রে বড় চরিত্রে কাজ করতে পারেন না, তাদের নিয়ে উদ্যোগ নেন।

তবে কাস্টিংয়ে সমস্যায় পড়েন বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে। রাফি বলেন, 'ওইটুকুন মেয়েকে কীভাবে একটা ধর্ষণ ঘটনার ব্রিফ দেব? অনেক খুঁজে, এই চরিত্রের জন্য আরিত্রাকে পাই। আগে ওর মাকে বলি। তারপর মেয়েটাকে বুঝিয়ে দিই। সে আগে থেকেই অভিনয় জানত। এ কারণে একটা সুবিধা হয়েছে।'

টানা দু-তিন সপ্তাহ রিহার্সাল করেছেন শিল্পীরা। সেটাও রাফির আফতাবনগরের অফিসে। রিহার্সাল বেশি করার কারণ, অনেক দৃশ্য এক শটে নিতে চেয়েছেন নির্মাতা। ওয়ান টেকে কাজ করার সুবিধা, দেখার সময় দর্শকেরা যেন অনুভব করেন, ঘটনা তার সামনেই ঘটছে।

'জানোয়ার'-এর শুটিং হয়েছে রাজধানীর উত্তরার এক বাড়িতে। শুটিংয়ের আগে পুরো বাড়ি রঙ করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলের মতো মতো সব ফার্নিচার কিনে সেভাবেই সাজানো হয়।

রাফি বলেন, 'পুরো বাড়ি লাইটিং করার পর আর্টিস্টরা ফ্রিডম পেয়ে যান। কিন্তু আমরা সেদিনই মেইন শুটিং করিনি। একটা নরমাল ক্যামেরায় শুটিং করি আগে। অনেকটা শেষ রিহার্সাল করার মতো করে। সেটা শেষ করে ভুল ত্রুটি দেখে পরদিন থেকে ফাইনাল শুটিং শুরু করি।'

তিনি আরও বলেন, 'আর্টিস্টদের প্রতি শর্ত ছিল, তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। টানা ১০ দিন ওই বাড়িতে থেকে তারপর শুটিং শেষ করেন তারা।'

'এই সিনেমায় চাইলেও আমি খরচের জায়গা পাইনি। কারণ সিনেমায় বড় বাজেটের আর্টিস্ট ছিল না। শুটিং হয়েছে নির্দিষ্ট একটা বাড়িতে। তবে আমি বিগ বাজেটে সিনেমা বানাই। কিন্তু এটার বাজেট অত বেশি ছিল না। এতটুকু বলতে পারি, সিনেমার যে খরচ হয়েছে তার তিন গুণ টাকা এরইমধ্যে আয় হয়েছে', বলেন রাফি।

এজন্য দর্শক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.