সুপ্ত দক্ষিণ নতুন সম্ভাবনায় উদ্দীপ্ত

বাংলাদেশ

27 June, 2022, 12:10 am
Last modified: 27 June, 2022, 09:23 am
উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম দিনের প্রথম আট ঘণ্টায় ৮২ লাখ টাকার বেশি টোল আদায় করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। এ সময় ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন সেতু পাড়ি দিয়েছে।

'পদ্মা সেতু দেশের চেহারাই পাল্টাইয়া দিব,' বলছিলেন খুলনার পিকআপ-ভ্যান চালক খলিলুর রহমান।

মাত্রই ঢাকা থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পার হয়ে খুলনায় ফিরছিলেন খলিলুর। চোখেমুখে আনন্দের ছটা। তিনি বলেন, 'আজকের মতো এমন আনন্দ আর কখনও পাইনি। মনে হয় গাড়ি চালানোর জীবনে এই প্রথমদিন সুখ পাইলাম। মনেই হয় নাই যে পদ্মা নদী পার হইলাম। এখন আর মালামাল আনা-নেওয়ার কোনো ঝামেলাই থাকল না।'

অনেক বছর ধরে এই পথে যাতায়াত করছেন খলিলুর। তবে আজকের ট্রিপটি অন্যরকম।

রাজধানীতে পৌঁছতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের আগে ১২-১৩ ঘণ্টা লেগে যেত। সেই দিন এখন অতীত।

যেমন ঢাকা থেকে এখন ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই সাতক্ষীরায় পৌঁছে যাওয়া যাবে। আগে রাজধানী থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ ফেরি ঘাটেই অপেক্ষা করতে হতো চার ঘণ্টা।

ফেরিতে করে প্রমত্তা পদ্মা নদী পেরোতে সময় লাগত গড়ে ২-৩ ঘণ্টা। কিন্তু এখন এই নদী পেরোতে সময় লাগে ১০ মিনিটেরও কম।

পদ্মা সেতু দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাওয়া পর্যন্ত মোটরযানে করে মাত্র ৭-৮ মিনিটে পদ্মা পার হওয়া যাচ্ছে।

শরীয়তপুর থেকে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসটি সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুর পৌঁছায় রোববার বেলা দুইটায়। ওই বাসের যাত্রী আনিছুর রহমান বলেন, 'অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।' 

'১২ টায় ঢাকায় বাসে উঠলাম, দুইটায় শরীয়তপুর আসলাম, যা জীবনে ভাবিনি। মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোরে শরীয়তপুর চলে এসেছি,' বলেন তিনি।

আনিছুর আরও বলেন, 'যখন ব্রিজ পার হচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এখন আর আমরা গরিব দেশে নাই। এত বড় সুন্দর ব্রিজ যা কল্পনাও করি নাই। ইচ্ছে করলে বাড়িতে সবার সাথে দেখা করে কাজ শেষে আজই ঢাকায় সেতুর ওপর দিয়ে চলে যেতে পারব—এটা আমাদের শরীয়তপুরের মানুষের ভাবতে অবাকই লাগছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য।'

এদিকে দক্ষিণের ব্যবসায়ীরা দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছেন, তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে।

অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে। অবশেষে চালু হয়েছে সেতু।

শনিবার উদ্বোধন করা হলেও পদ্মা সেতুকে ঘিরে উন্মাদনা এখনও একটুও ম্লান হয়নি। 

পদ্মা সেতু টোল প্লাজা। ছবি: মুমিত এম

সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে খোলার প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই যানবাহনের, বিশেষ করে মোটোরসাইকেলের দীর্ঘ সারি তৈরি হয় টোল বুথের সামনে।

তবে যাতায়াত তুলনামূলক দ্রুতগতিতে হওয়ায় যাত্রীরা খুব বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েনি।

ঢাকা ফেরত বাসযাত্রী আশিকুল ইসলাম টিবিএসকে জানান, আজ সকাল ৮টায় তিনি সায়েদাবাদ থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানযটে পড়ে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাকে। খুলনায় পৌঁছেন দুপুর একটার দিকে। 

আশিকুল ইসলাম বলেন, 'পথে পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়ে এসেছি, এটা খুবই ভালো লেগেছে।'

খুলনার ট্রাক চালক রহমত মিঞা। গত পরশু খুলনা থেকে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ (২৬ জুন) সকালে খুলনা ফেরার জন্য রওনা দেন। তারপর ৬ ঘণ্টায় পৌঁছে যান খুলনায়। অথচ আগে সময় লাগত ১২ ঘণ্টার মতো। যাতায়াতের সময় প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত রহমত।

মাঝে যানজটের কারণে সেতুর টোল ঘরে ঘণ্টা দুয়েক দেরি হয়েছে; তা না হলে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টাতেই খুলনা পৌঁছে যেতে পারতেন বলে জানালেন তিনি।

রহমত মিঞা বলেন, 'সকালে ৬ টায় ঢাকা থেকে রওনা দিই। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে ৮ টার দিকে পদ্মা সেতুর টোল ঘরের কাছে আসি। সেখানে প্রচণ্ড যানজট ছিল। প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশি। আমরা ২ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করে টোল দিতে পেরেছি।'

এই ট্রাকচালক আরও জানালেন, 'আগে আমাদের খুলনা থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকাতে যেতে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগত। কারণ বেশিরভাগ পণ্য আমরা রাতে খুলনা থেকে ঢাকাতে নিয়ে যাই। রাতে আরিচা ঘাট পার হয়ে ঢাকায় যেতে হয়। মাওয়া ঘাটে রাতে ফেরি বন্ধ ছিল।'

পদ্মা সেতুর প্রথম প্রভাবের একটি টুকরো চিত্র দেখা গেল মাওয়ার শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে। রোববার সকালে দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই নৌ রুটকে দেখা গেল প্রায় জনমানবহীন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, 'সকাল থেকেই লঞ্চ-স্পিডবোট যথানিয়মে চলাচল করছে, তবে যাত্রীসংখ্যা অনেক কম।'

উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম দিনের প্রথম আট ঘণ্টায় ৮২.১৯ লাখ টাকা টোল আদায় করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। এ সময় ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন সেতু পাড়ি দিয়েছে।

উদ্দীপ্ত গোটা দক্ষিণ

দীর্ঘদিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা রাজধানী থেকে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিল।

২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়গুলোর একটিতে পরিবর্তন আনেন।

দক্ষিণাঞ্চল এখন থেকে শুধু সামনের দিকেই এগোবে। 

শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী। মিরাশার চাষি বাজার থেকে নিয়মিত কাঁচামাল কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। দক্ষিণাঞ্চলের আর সবার মতোই এই সবজি বিক্রেতাও প্রস্তুত পদ্মা সেতুর সুফল ঘরে তুলতে।

পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর আজ তিনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সবজি বিক্রি করতে। ইয়াকুব বলেন, 'এতদিন ফেরিতে করে মালামাল নিতাম। ঘাটে বাসে থাকতে থাকতে সবজির কালার নষ্ট হয়ে যেতে। কম দাম পেতাম। অনেক সময় লস হতো। এখন আর লস হবে না।'

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, পদ্মা সেতু খরচ ও সময় দুটোই কমিয়ে দেবে।

'আগে আমাদের গোয়ালন্দো দিয়ে ঘুরে যাতায়াত করতে হতো, ফলে ৭০-৮০ কিলোমিটার বাড়তি পথ পাড়ি দিতে হতো। এটা আর হবে না,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সেতুটির ফলে মোংলা বন্দরেরও উন্নতি হবে—এ থেকেও আমরাও উপকৃত হব। চট্টগ্রাম বন্দর এখন খুব ব্যস্ত, তাই মোংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়বে।'

পদ্মা সেতু বাগেরহাটের মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহন ত্বরান্বিত করবে, রপ্তানি বাণিজ্য সহজতর করবে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

খুলনা অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ টন চিংড়ি ঢাকায় পাঠানো হয় এবং মংলা বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পাট রপ্তানি হয়।

এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী এজাজ আহমেদ স্বপন বলেছিলেন, 'গার্মেন্ট আইটেম, নারকেলের ভুষি, পাটজাত পণ্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও বেঙ্গল গ্রুপের কিছু পণ্য ভোমরা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেছিলেন, 'পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে সেতু এবং একটি নতুন কাস্টমস হাউসের জন্য ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে।'

বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর থেকে বার্ষিক রাজস্ব আয় হয় ৮০০-১,০০০ কোটি টাকা। তবে সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনেই পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

রোববারই এই পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।

এদিন ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ৩৫টি পণ্যবাহী ট্রাক পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টায় রাজধানীতে প্রবেশ করে।

আগে আরিচা ফেরি ঘাট দিয়ে ঢাকায় আসতে ট্রাকগুলোর ৭-১০ ঘণ্টা লাগত। সেই সময় কমে আসায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান জানান, ভোমরা বন্দর থেকে সকাল থেকে বিভিন্ন সময়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো রাজধানীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

'এসব ট্রাকে রয়েছে ফল, শুকনা মরিচ, পাথর ও সিরামিক কসমেটিকসের কাঁচামাল। ভোমরা থেকে রওনা হয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় এসব ট্রাক রাজধানীতে পৌঁছে গেছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমাদের এতদিনের ভোগান্তি দূর হয়েছে,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি। 

মাকসুদ আলম আরও বলেন, 'আমাদের বন্দর দিয়ে গম, ভুষি, ভুট্টা যেসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয় সেগুলোর বেশিরভাগ পদ্মার এপারে বণ্টন হয়। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ এদিকে যায় বেশি। খুব কমসংখ্যক ট্রাক রাজধানীতে যায়। কারণ ভোমরা বন্দরে কাস্টমস হাউজ না থাকায় সকল পণ্য আমদানির সুযোগ নেই। ৫৭টি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও আমদানি হয় মাত্র ৩০-৩৫টি পণ্য।'

ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টমস হাউজ আগামী ডিসেম্বর মাসে চালু হওয়ার কথা আছে বলে জানান তিনি।

পদ্মা সেতু বাস্তবিক অর্থেই দক্ষিণাঞ্চলের সামনে অসংখ্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের তথ্যমতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কার্যনির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, 'বরগুনা এমন একটি এলাকা যেখানে মাছকে ঘিরে শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে। কিন্তু সেসব মাছ ঢাকায় আসতে অনেক সময় নেয়। এখন আর এত সময় লাগবে না। এছাড়া এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প চালুর বিষয়েও আলোচনা চলছে।

পদ্মা সেতু টোল প্লাজা। ছবি: মুমিত এম

'দক্ষিণের এলাকাগুলো কেবলমাত্র সঠিক যোগাযোগ চ্যানেলের অভাবের কারণে শিল্পায়িত হয়নি। এখন এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।'

পদ্মা সেতু কেবল মৎস্য শিল্পকেই শক্তিশালী করবে না, কৃষিসহ অন্যান্য খাতকে শক্তিশালী করতেও অবদান রাখবে। 

তবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বাদ দিলেও পদ্মা সেতু বিজয়ের সমার্থক। 

জনতার বিজয়

কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন মোহাম্মাদ বাবুল শেখ (৪২)। আবেগের ঘোর তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'আমি একটা মাছের কার্গো ঢাকা নিয়ে যাচ্ছি। কয়েকদিন আগেও ঢাকা যেতে অন্তত ১১ ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু এখন আর তা লাগছে না। আমি আসলে আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।'

অন্যদিকে শরীয়তপুরের আংগারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রেবেকা বেগমের কাছে মনে হচ্ছিল তিনি স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, 'অপেক্ষায় ছিলাম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের। সেতুর ওপর দিয়ে সবার আগে শরীয়তপুর থেকে বাসে করে ঢাকায় যাব, তাই টিকিট কিনেছি তিন দিন আগেই। সকাল সাড়ে আটটায় প্রথম বাসে যাত্রী হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পার হয়ে মাওয়ায় চলে এসেছি। কী যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। 

'যখন সেতুর ওপর ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মধ্যে আছি। পার হতেই মনে হলো স্বপ্ন নয়, এটাই সত্যি। এত দ্রুত চলে এসেছি যে ভাবতেই পারছিলাম না। মনে হচ্ছে আবার ঘুরে বাড়ি চলে যাই। এক সপ্তাহ বোনের বাসায় বেড়িয়ে আবার সেতুর ওপর দিয়েই আসব, সেটাই এখন মাথার মধ্যে ঘুরছে। কবে আবার ফিরব। আবার দেখব স্বপ্নের সেতু। তবে নেমে সেতু স্পর্শ করতে পারিনি, তাই আফসোস লাগছে।'

শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্র পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু প্রথম দিনই সেতুতে করে ঢাকায় এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার দুপুরের মধ্যেই শরীয়তপুর ফিরে গেছেন। 

তিনি বলেন, 'সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম বাসে করে ঢাকায় গিয়ে নাস্তা করেছি। স্যানিটারির কিছু মালামাল কিনে আবার সেই বাসেই সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুর আসলাম।'

শরীয়তপুর থেকে আজ ঢাকার পথে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসটি সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুর পৌঁছায় বেলা দুইটায়।

'গাড়ি থেকে নেমে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম আমি ঠিক আছি কি না। আসলে সেতু দিয়ে পার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় বুঝাতে পারব না,' বলেন তিনি।

অনেকেই তাদের অনুভূতি ঠিকমতো প্রকাশ করতে না পারলেও একটা জিনিস স্পষ্ট: পদ্মা সেতু লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে যাচ্ছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে আমাদের শরীয়তপুর ও খুলনা প্রতিনিধি তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন]

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.