বন্যায় সিলেটে চিড়া, মুড়ির দাম বেড়ে দ্বিগুণ

বাংলাদেশ

25 June, 2022, 10:00 am
Last modified: 25 June, 2022, 12:08 pm
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনা, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট এবং বন্যায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যমূল্য বেড়েছে।

বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য শুক্রবার (২৪ জুন) সকালে সিলেটের পাইকারী বাজার কালিঘাটে চিড়া, মুড়ি ও গুড় কিনতে গিয়েছিলেন নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আহমদ।

তিনি বলেন, "বাজারে এসে দেখি সব পণ্যের দাম দিগুণ হয়ে গেছে। আমরা ৫০০ মানুষের জন্য শুকনো খাবার কিনতে এসেছিলাম। তবে জিনিসপত্রের যে দাম দেখছি তাতে ৩০০ জনের জন্যও কিনতে পারবো না।"

"মানুষ এখন বিপদে আছে। আমরা বিপদগ্রস্থ মানুষের সহায়তার জন্য এগুলো কিনছি। ব্যবসায়ীদের আমাদের সহযোগিতার কথা ছিলে। কিন্তু বন্যার সুযোগে তারা দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে," যোগ করেন সাজিদ।

সাজিদের কথার প্রমাণ পাওয়া যায় শুক্রবার বিকেলে কালিঘাটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিড়া ৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও ছিলো ৪০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুড়ির দাম এখন হয়ে গেছে ১২০ টাকা। এছাড়া, গুড় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০টাকায়, যা আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনা, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট এবং বন্যায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যমূল্য বেড়েছে।

কালিঘাটের পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মা স্টোরের সত্ত্বাধিকারী অনল পাল বলেন, "ব্যাপক আকারে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সিলেটে চিড়া মুড়ি ও গুড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকায়ও সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ওখানকার ব্যবসায়ীরাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা বেশি দামে কিনে আনছি। তাছাড়া, বন্যার কারণে পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।"

"বাড়তি দামে আমরা বিক্রি করতে চাই না। কিন্তু আমরা পণ্য না রাখলে বন্যা কবলিত মানুষ আরও সমস্যায় পড়বে। তারা শুকনো খাবারও পাবে না। এজন্য আমরা বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছি," যোগ করেন তিনি। 

সিলেটে গুড়ের সংকট দেখা দিয়েছে জানিয়ে কালিঘাটের লতিফিয়া স্টোরের সত্ত্বাধিকারী বেলাল আহমদ বলেন, "সিলেটের আশপাশেও গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। ভৈরবসহ বিভিন্ন আড়ত থেকে আমাদের বেশি দাম দিয়ে গুড় আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচও বেশি লাগছে।" 

প্রতিকেজি গুড় পাইকারি ১০০ টাকা ও খুচরা ১১০ থেকে ১২০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বন্যায় সিলেটে শুকনো খাবারের সংকট দেখা দেওয়া ও দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আনেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

মঙ্গলবার সকালে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটে এসে সার্কিট হাউসে তিনি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বন্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।  

এসময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, "সামর্থ থাকলেও আমরা সিলেটে শুকনো খাবার পাচ্ছি না। আমরা শ্রীমঙ্গল থেকে খাবার আনার চেষ্টা করছি, তাও খুবই অল্প সংখ্যক। ঢাকা থেকে যদি খাবার না যায়, তবে এখানে শিশু খাদ্যের অভাব দেখা দেবে।"

তিনি বলেন, "এখনে কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী অহেতুক চিড়া, মুড়ি, গুড়ের দাম বৃদ্ধি করে ফেলেছন। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে এসব আনা গেলে খুবই ভালো হয়।"

এ ব‌্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, "হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চিড়া, মুড়ি, গুড়ের একটি অস্থায়ী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সিলেটের বাইরে থেকে পচুর পরিমাণে এসব পণ্য আসছে। ফলে সংকট কেটে যাবে।"

"এই সুযোগে কেউ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো," যোগ করেন তিনি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.