আরও একটি ধাক্কার মুখোমুখি দেশের শিক্ষাখাত

বাংলাদেশ

23 June, 2022, 10:00 am
Last modified: 23 June, 2022, 11:20 am
ঈদের পর এসএসসি এবং সেপ্টেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা হতে পারে।

ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ এবং দেশজুড়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে দেশের শিক্ষা খাত আবারও নতুন এক ধাক্কার মুখোমুখি হতে চলেছে।

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা ঈদের পর শুরু হবে, আর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই মাস পর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, সিলেট অঞ্চলের আকস্মিক বন্যাও এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে।

"স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে আমরা সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছি। কোনো শিক্ষার্থীকে মাস্ক না পরে স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না," বলেন তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ করার প্রয়োজন হলে সে সম্পর্কিত প্রস্তুতির ব্যাপারে তিনি বলেন, আগের মতোই অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট চলবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে পরীক্ষা নেবে।

তিনি বলেন, "সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশনা দিলে আমরা যেকোনো উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত আছি।"

২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই ঝরে পড়েছে।

ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবে এবং ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে না পারায় অনেকেই মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবার পরীক্ষা না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকেই অটোপাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, মহামারির কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে সরকার দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে; এমনকি এ সম্পর্কিত বিশেষ বাজেটও বরাদ্দ রাখা হয়নি। 

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, শিক্ষা খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান টিবিএসকে বলেন, বন্যা আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে। 

"শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত শিক্ষাবিদদের সঙ্গে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করা এবং অবিলম্বে এ বিষয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেওয়া," যোগ করেন তিনি।

বন্যায় এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা বিলম্বিত

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯ জুন ও ২২ আগস্ট থেকে। কিন্তু সিলেট ও সুনামগঞ্জের আকস্মিক বন্যায় সব প্রস্তুতি ব্যাহত হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমনকি এখনও, মন্ত্রণালয় পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার টিবিএসকে বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

"আসলে, বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে কেউ জানে না এবং পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগে আমরা কোনো নতুন তারিখ ঘোষণা করতে পারি না," যোগ করেন তিনি। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাস। অর্থাৎ, তাদের আরও প্রায় ছয় মাস হারাতে হবে, কারণ সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়।

উদ্বিগ্ন এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী রেফায়েত ইসলাম টিবিএসকে জানায়, ১৯ জুন থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুত ছিল সে, কিন্তু মন্ত্রণালয় নতুন তারিখ ঘোষণা না করে তা স্থগিত করেছে।

রেফায়েতে ভাষায়, "আমরা আমাদের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পিছিয়ে আছি। তাই, মন্ত্রণালয়ের উচিত শীঘ্রই নতুন তারিখ ঘোষণা করা।"

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নুরে তাবাসসুম (তার আসল নাম নয়) টিবিএসকে জানায়, তারা ধরে নিয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছে সবাই।

বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রফেসর নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশের অর্থ হলো এটি মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে।

"প্রত্যেকের উচিত মাস্ক পরা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভিড় এড়িয়ে চলা। সংক্রমণের প্রবণতা বাড়তে থাকলে স্কুল খোলা রাখা কঠিন হবে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের একটি মিটিং দরকার। আশা করি, এটি শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে," যোগ করেন তিনি।

আগামী বছর নতুন পাঠ্যক্রম শুরু করা হবে নতুন চ্যালেঞ্জ

সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রস্তাবিত নতুন দক্ষতা-ভিত্তিক জাতীয় স্কুল পাঠ্যক্রমের পাইলটিং শুরু করেছে। তবে বন্যার কারণে সে কার্যক্রমও আংশিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এরসঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রমণও বাড়তে থাকলে কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.