পদ্মা সেতু: পরিবহন খাতে আসছে নতুন নতুন বিনিয়োগ  

বাংলাদেশ

19 June, 2022, 03:50 pm
Last modified: 19 June, 2022, 06:24 pm
দক্ষিণের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পরিবহন মালিকরা আনছেন বিলাসবহুল বাস।

পদ্মা সেতু সমস্ত দেশকে একটি রোড নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসছে। আর তাই পরিবহন খাতে সেবার মান বৃদ্ধিতে আসছে নতুন নতুন বিনিয়োগ। দক্ষিণের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পরিবহন মালিকরা আনছেন বিলাসবহুল বাস।

দেশের পরিবহন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রিন লাইন পরিবহন তাদের সার্ভিস পরিধি বাড়াতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার উপরে ব্যয় করে নতুন করে আমদানি করছে ডাবল ডেকারসহ ২০টি বিলাসবহুল বাস।

গ্রিন লাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোঃ আব্দুস সাত্তার বলেন, "পদ্মা ব্রিজটি আমাদের পরিবহন ব্যবসার জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ফেরির কারণে আগে যেখানে একটি ট্রিপ মারতে পারতাম এখন সেখানে দুই ট্রিপ মারা সম্ভব হবে। আমাদের সম্প্রসারণ ঘটবে।" 

"আমাদের ঢাকা-বরিশাল রুটটি করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার সেটা চালু করা হবে। এছাড়া ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল আমাদের অনেক পুরনো রুট। এই রুটগুলোতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে গাড়ি যেত, ২৬ তারিখের পর থেকে সেগুলো পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে। এছাড়া আমাদের রুটের পরিধি কিছু বাড়বে। আগে যেটা বরিশাল পর্যন্ত যেতো সেটা কুয়াকাটা পর্যন্ত যাবে। খুলনার বাস এখন সাতক্ষীরা পর্যন্ত যাবে।"

তিনি বলেন, "দক্ষিণের কয়েকটি জেলায় বর্তমানে আমাদের ২০টি বাস দিয়ে সেবা চলছে। পদ্মা সেতু চালুর পর আমরা এই সংখ্যা ৫০-এ উত্তীর্ণ করব। বর্তমানের ২০টির সাথে আরও ১০টি বাস যুক্ত হবে ২৬ তারিখ থেকেই। এছাড়া ডাবল ডেকারসহ ২০টি বাস আমরা আমদানি করছি যা অক্টোবর-নভেম্বরে বহরে যুক্ত হবে। এতে আমাদের নতুন বিনিয়োগ হবে ৩০ কোটির ওপরে।"

আব্দুস সাত্তার আরও বলেন, "ফেরির কারণে আগে দক্ষিণের রুটগুলোতে খুব ভাল মানের লাক্সারি বাস দেয়া হত না। এখন এই রুটগুলোতে অন্যান্য রুটের মত সর্বোচ্চ লাক্সারি বাসের পাশাপাশি ডাবল ডেকার গাড়ি যুক্ত করা হবে।"

বাংলাদেশের সব থেকে বড় পরিবহন কোম্পানি হানিফ এন্টারপ্রাইজও নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, "দক্ষিণের ২১ জেলার সাথেই আমাদের সেবা চালু আছে। এই রুটগুলোতে এখন প্রায় ৬০টি বাস চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি রুটে বিলাসবহুল বাসও আছে। আমাদের নতুন করে কোন বাসের দরকার ছিল না। কিন্তু যেহেতু অনেক কোম্পানি তাদের বহরে নতুন বাস যুক্ত করছে তাই আমরাও এই সব রুটের জন্য ২০টি বাস ক্রয় করছি। এর মধ্যে ৪টি থাকবে দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাস যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা করে। তবে আমরা কতগুলো বাস এখানে চালাতে পারব তা নির্ভর করবে যাত্রীদের ওপর।"

দেশের আরেকটি লাক্সারি বাস সার্ভিস প্রোভাইডার সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফারুক তালুকদার বলেন, "দক্ষিণে আমাদের সার্ভিস ছিল যশোর, বেনাপোল, খুলনা ও সাতক্ষীরায়। এই রুটগুলোতে এখন প্রায় ৪০টির মত বাস দিয়ে সেবা দিচ্ছি। আপাতত আমাদের পরিধি বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নাই। আমরা কিছুদিন যাত্রীদের সাড়া কেমন, দেখব। যদি পজিটিভ মনে হয় তখন বাস সংখ্যা বাড়ানো হবে।" 

"তবে আমাদের বাসগুলো এখন পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পার হয়ে যায়, ২৬ তারিখের পর সেগুলো পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। এতে আমাদের সময় ও এনার্জি অনেক সাশ্রয় হবে", তিনি যোগ করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, "পদ্মা সেতু সমগ্র দেশের সাথে রোড কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে যা পরিবহন সেক্টরের জন্য একটি অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। পরিবহন কোম্পানিগুলো এখন থেকেই ইনভেস্টমেন্ট শুরু করেছে। সামনে আরও বড় ইনভেস্টমেন্ট আসবে।"

পরিবহন খাতে বড় বিনিয়োগে শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা

পদ্মা সেতু চালুতে নতুন করে পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন পদ্মাপাড়ের জেলা শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বাস চলাচলের জন্য অন্তত দুইশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তারা। নির্মাণ হচ্ছে অন্তত ২৫০টি বিলাসবহুল বাস। যার একেকটিতে খরচ হচ্ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত।

উদ্বোধনের দিন থেকেই নতুন বাস দিয়ে যাত্রী পারাপার করতে চান ব্যবসায়ীরা। আর তাই এখানকার কারখানাগুলোতে চলছে নতুন বাস তৈরির নির্মাণযজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে শরীয়তপুর ছাড়াও ব্যবসায়ীরা বাস নির্মাণ করছে সাভার ও ঢাকার কারখানায়।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানী নতুন ৪০টি বাস তৈরি করছেন। এছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন ঢাকার সাথে বাস সার্ভিস চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি কোম্পানিই নতুন বাস তৈরি করছেন।

বাসগুলো শরীয়তপুর জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে ঢাকার গুলিস্থান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জে চলাচল করবে।

ফেম প্রাইভেট লিমিটেড পরিবহনের মালিক আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, "শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসা একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। এখন মালিকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ২৫ তারিখকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন কারখানায় নতুন গাড়ি তৈরি করছি যাতে শরীয়তপুরের মানুষ আরামদায়ক বাসে চড়ে ঢাকায় যেতে পারে। শরীয়তপুর ছাড়াও অনেক মালিক ঢাকায়ও বাস তৈরি করছে।"

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সদস্য আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া জানান, "সরাসরি ঢাকা-শরীয়তপুর বাস চলাচল না থাকায় পরিবহন ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিলাসবহুল কোন পরিবহন তৈরি হয়নি। ভাঙাচোরা ছোট ছোট পরিবহন চালিয়ে যেমন আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তেমনি যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সেই দিনের পালা শেষ। এখন আরামদায়ক বাসেই ঢাকা যাবে যাত্রীরা আর আমরা ব্যবসার প্রত্যাশায় বসে আছি।"

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার জানান, "আমরা বাস মালিক সমিতির সদস্য এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরাও খুশি। শুধু অপেক্ষা কখন, কবে সেতু দিয়ে বাস নিয়ে ঢাকায় যাব। এসি এবং নন এসি মিলে অন্তত ২০০ বাস এই রুটে চলাচলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এতে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে পরিবহন খাতে।" 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.