বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নৌকার জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ
বাংলাদেশ
রাতে পানি কিছুটা কমলেও সিলেটে শনিবার (১৮ জুন) ভোর থেকে আবার বাড়ছে নদীর পানি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের ভেলাগঞ্জ উপজেলা কার্যত সবদিক থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জলমগ্ন এলাকাগুলোতে নৌকার জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। নৌকার অভাবে প্লাবিত এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। জলমগ্ন ঘরেই আটকে পড়েছেন তারা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা নিহাল আহমদ বলেন, "আমার পুরো পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। কিন্তু তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার মতো কোন নৌকা পাইনি। বাধ্য হয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। অন্য সময় এগুলো তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়।
এই সুযোগে নৌকাচালকরা ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কিলোভোল্টের গ্রিড সাবস্টেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আজ।
সিলেট পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্টেশনের সুইচ রুমে পানি ঢুকে পড়েছে। এ কারণে শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সাবস্টেশন বন্ধ করতে হয়েছে।"
তবে, বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আবারো চালু করার জন্য সাবস্টেশন থেকে দ্রুত পানি বের করার চেষ্টা চলছে বলে যোগ করেন তিনি।
এদিকে, নগরে পানি আরও বেড়েছে। নগরের অনেক বাসাবাড়ির ভেতরে কোমর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। শনিবারও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নামছে ঢলও।
নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় বাসিন্দা ছামির মাহমুদ বলেন, "আমার বাসার বিছানার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বাড়ছে। বাধ্য হয়ে তাই পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।"
এক মাসের মধ্যে বন্যায় দুইবার ঘরছাড়া হতে হয়েছে তাকে।
বন্যার কারণে সিলেট থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটও নেই।
এছাড়া কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বেশিরভাগ সড়কই তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে জেলার সবগুলো উপজেলা ও নগরের বেশিরভাগ এলাকায়।
ঢল না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ সহকারি প্রকৌশলী নিলয় পাশা। তিনি বলেন, "শুক্রবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার বাড়ছে পানি। আর কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।"
এদিকে, বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনী। এর আগে, শুক্রবার থেকে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
তবে পানিবন্দি অবস্থায় আটকে পড়া মানুষজনের অভিযোগ, প্রশাসনের কেউ তাদের খোঁজ নেয় নি। তারাও প্রশাসনের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, "সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের সড়কপথের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না।"
প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানিয়ে ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, "কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।"
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মজিবর রহমান জানান, পানিতে আটকে পড়া লোকেদের উদ্ধারে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওকে নৌকা কিনতে বলা হয়েছে। এজন্য তাদের টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার একটি গ্রামের সড়ক দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়েছে।
আজ ভোরে প্রবল বেগে আসা পানিতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় মনিয়ন্দ ইউনিয়নের কর্ণেল বাজার সংলগ্ন আড়িয়ল গ্রামের সড়কটি। এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামটি।
স্থানীয়রা জানান, গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি হাওড়া নদীতে এসে পড়ছে।
Comments
While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.