সিলেট-সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যা, পানিবন্দি ৬ লাখ মানুষ
টানা বৃষ্টি ও ঢলে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। পানিতে তলিয়ে গেছে দুই জেলার দশটি উপজেলার সহস্রাধিক গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ছয় লাখ মানুষ।
জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়ানঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার সবচেয়ে বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে সুনামগঞ্জে সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার ও ছাতক উপজেলার সবচেয়ে বেশি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব এলাকার সড়ক, বাসাবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানি উঠে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসেও।
সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন পানিবন্দি মানুষদের জন্য জেলায় ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিতদের সহায়তায় বুধবার ২৯৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত এপ্রিলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে অকাল বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যায় তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি সময় সিলেটে গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকাও। সড়ক, কৃষি, মৎস্য ও অবকাঠামোর শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়।
আগের দফার রেশ না কাটতেই সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। দফায় দফায় বন্যার কারণে দুর্ভোগে পরেছেন পানিবন্দি মানুষরা। বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এদিকে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ, সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিৎপসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে কুশিয়ারা এবং সারি নদীর পানিও। এছাড়া লোভা নদীর পানিও বাড়ছে।
বুধবারও সকাল থেকে টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এই দুই জেলায়। বৃষ্টিতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নদী উপচে পানি প্রবেশ করেছে নগরের কালিঘাট, মহাজনপ্টই, মাছিমপুর, ছড়ার পাড় এলাকায়।
বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই উপজেলার সদর, পূর্ব ও পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব ও পশ্চিম আলীর গাও, রুস্তমপুর, তোয়াকুল, লেংগুড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান জানান, উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম, চতুল, সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে কানাইঘাট পৌর শহরের পূর্ব বাজারে পানি প্রবেশ করায় অনেক দোকানপাট তলিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়া পাশাপাশি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, উপজেলা সদরের রাস্তায় পানি উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৬টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ, থানাসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের অধিকাংশ দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, গত কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া বন্যা পরিস্থিতির চেয়েও এখন পানি বেশি এসেছে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায়ই প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট এমনকি অফিস আদালতেও পানি উঠে গেছে।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ কমাতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে। উপজেলায় ৩৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যে সুনামগঞ্জে আরও দুই দিন বৃষ্টি হবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠানো ও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিক টন করে খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে সবাইকে।