সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না: সাবেক সিইসি, ইসি 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
13 June, 2022, 09:45 am
Last modified: 13 June, 2022, 09:57 am
‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন একেবারে দরকার নেই। কারণ, নির্বাচন পরিচালনায় তারা কোনো কাজে আসে না। নির্বাচনে এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনেরও প্রয়োজন নেই। ৭৫ শতাংশ টাকা খরচ হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে।' 

নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে সব দলের অংশগ্রহণে ইভিএমের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পরামর্শ দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ করেন তারা।

রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবদের সঙ্গে বর্তমান কমিশন একটি সংলাপ করে। সেখানেই এই পরামর্শ উঠে আসে।

সংলাপে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, সকলের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন। তবে এজন্য সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনকে যতোই স্বাধীন বলুন না কেন, কিছু কাজ সরকারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে কমিশনকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।'

এছাড়া নির্বাচনের সময় মাঠে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন একেবারে দরকার নেই। কারণ, নির্বাচন পরিচালনায় তারা কোনো কাজে আসে না। নির্বাচনে এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনেরও প্রয়োজন নেই। ৭৫ শতাংশ টাকা খরচ হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে।' 

ইভিএম-এ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, 'ইভিএম এমন একটা বিষয় যেখানে বাক্স ছিনতাই করা যায় না। একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে না। নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে ইভিএম চালু করা যায় না। এর যথেষ্ট সুবিধা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আইন কানুন যা আছে, তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব। সে দিয়েই আমরা তো সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ইসির কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার করবেন। আমি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব জায়গায় পারিনি।'

এদিকে এবারের নির্বাচনে সব দল না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা।

তিনি বলেছেন, 'এবারের নির্বাচনে সব দল না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা পালন করতে হবে।' 

'নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। কোনো পর্যায়ে সাবেক কমিশনারদের সহযোগিতা দরকার হলে কমিশনকে সহযোগিতা করা হবে', তিনি যোগ করেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, 'আগামী জাতীয় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য সবার আগে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার।'

মাহবুব তালুকদার বলেন, 'আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে গেলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে বর্তমানে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা ব্যাকুলতা মাত্র। নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব না।'

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, 'বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা আবশ্যক। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।'

'দুই এমপি--মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ার--কে প্রতিহত করতে হবে। অন্যদিকে, নির্বাচনী আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধিবিধান পরিপালনে শূন্য সহিষ্ণু নীতির কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী', তিনি বলেন।   

সাবেক কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, 'সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়ে ইসির সম্পৃক্ত হওয়া চলবে না। এটা সরকারি দলের কাছে ছেড়ে দিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আইন প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব। আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করলেও মানুষ মনে করেছে সুষ্ঠু হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।' 

সংলাপ শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এই কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা, ঐকমত্য যদি না থাকে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে খুব ভাল নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা, ঐকমত্য না থাকলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন করা কষ্টকর হবে।' 

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বেগম জেসমিন টুলী প্রমুখ। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.