“বাবা আমাকে কালেমা পড়ে দেন", শেষবারের মতো বলেছিলেন মমিনুল

বাংলাদেশ

05 June, 2022, 09:55 am
Last modified: 05 June, 2022, 05:49 pm
"দ্বিতীয়বার ফোন করে মমিনুল বলেছিল, বাবা আমার একটা পা উড়ে গেছে। আমাকে কালেমা পড়ে দেন। এটাই আমার সঙ্গে তার শেষ কথা।"
ছেলের ছবি হাতে নিহত মমিনুলের বাবা। ছবি: টিবিএস

চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ থেকে সদ্য অর্থনীতিতে অনার্স শেষ করে চাকরি শুরু করেছিলেন মমিনুল। পরিবারের অভাব দূর করতে এক বছর চাকরি করেই মাস্টার্স শেষ করার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে তার সেই স্বপ্ন ভস্মীভূত হয়ে গেছে। আশার প্রদীপ হারিয়ে যেন বোবা হয়ে গেছেন বাবা ফরিদুল ইসলাম। অন্যান্য স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠলেও, তার চোখে ছিল না অশ্রু।      

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকার একটি কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। হতাহতদের মধ্যে ডিপোর কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস কর্মী রয়েছেন। মমিনুল হক সেই নিহত শ্রমিকদের একজন।  

ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের বিষয়ে বাবা ফরিদুল বলেন, "ফোনেই ছেলের আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। সে চিৎকার করে বলছিল- 'বাবা এখানে কিছুক্ষণ পরে পরে ব্লাস্ট হচ্ছে।' দ্বিতীয়বার ফোন করে মমিনুল বলেছিল, 'বাবা আমার একটা পা উড়ে গেছে। আমাকে কালেমা পড়ে দেন।' এটাই আমার সঙ্গে তার শেষ কথা।"  

ফরিদুল জানান, মমিনুলের সঙ্গে কথা শেষে তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকা নিজের স্বজনদের ফোন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। পরে তার চাচা খোরশেদ আলম হাসপাতালে এসে ভাতিজার লাশ দেখতে পান। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মমিনুল মেজ।

নিহত মমিনুলের খালাতো ভাই তায়েব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তিন মাস আগে মহসিন কলেজ থেকে ইকোনমিক্সে অনার্স শেষ করে চাকরি শুরু করে মমিনুল। সে আমাকে বলেছিলো মানুষ তিন-চার বছর চাকরি করেও পড়ালেখা করে, আমি এক বছর চাকরি করে ঘরের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে চাই, এরপর মাস্টার্স পরীক্ষা দেবো। কিন্তু সেটা হলো না।" 

"মমিনুল রাত ৮টার দিকে ডিপোতে যান। ৯টার সময় ফোন দিয়ে শুধু বলেছে- 'ভাই আমাকে বাঁচা'। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাই আর নাই," বলেন তায়েব।

মমিনুলকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তার পরিবারের সদস্যরা। ছবি: টিবিএস

কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭০ জনের বেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে ৩০ জনের অবস্থা গুরুতর।

দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে দু'জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। চারজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজীব পালিত। অন্যজন মারা গেছেন বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে।

চমেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি ৫০ শতাংশ রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশ কয়েকজন রোগীকে অন্যান্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।"  

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেজিস্টার ডা. লিটন পালিত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের ১৭ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এসব রোগীর যেকোন সময় যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে।"  

এদিকে আট ঘণ্টার ওপরে জ্বলতে থাকা আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, 'আগুন নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ২৪টি ইউনিট কাজ করছে। কিছুক্ষণ আগে ফেনী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এসে কাজ শুরু করেছে।"   
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.