স্কয়ারের চালের মিল সিলগালা, আকিজের বস্তা জব্দ

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
02 June, 2022, 10:00 am
Last modified: 02 June, 2022, 10:31 am
চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম পাওয়া গেছে।

সক্ষমতার চেয়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন চালের মজুদ বেশি পাওয়ায় দিনাজপুরে স্কয়ার গ্রুপের একটি চালকলের গুদাম সিলগালা করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আকিজ গ্রুপের চাল প্যাকেজিংয়ে অনিয়ম পেয়ে তাদের প্যাকেজিং ব্যাগ জব্দ করার পাশাপাশি এই ব্র্যান্ড নামে কোনো চালের প্যাকেট বাজারজাত না করতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১ জুন) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্পোরেট কিছু প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এরমধ্যে স্কয়ার, আকিজ, সিটি, এসিআই, প্রাণ ও বসুন্ধরার নাম উঠে আসে।  

তবে স্কয়ার এবং আকিজ গ্রুপের কর্মকর্তারা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুরোধে সাড়া দেননি।

এদিকে বসুন্ধরার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কোনো ধরনের চালের ব্যবসা নেই।

খাদ্যমন্ত্রী সাধান চন্দ্র মজুমদার বলেন, "দিনাজপুরে স্কয়ারের একটি গুদামে অভিযান চালানো হয়, যেখানে তাদের মিলও আছে। নীতিমালা অনুযায়ী, মিলের গুদামে পাক্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার তিনগুণ মজুদ রাখা যায়; যার একটি অংশ বাজারে যাবে, একটি উৎপাদনে থাকবে ও একটি পুরোপুরি স্টকে থাকবে।" 

"গুদামে এর বাইরেও অতিরিক্ত ৫ হাজার মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত ছিল। ফলে এটি সিলগালা করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করা হয়েছে," যোগ করেন মন্ত্রী।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমরা মঙ্গলবার (৩১ মে) রাতে দিনাজপুরের কয়েকটি উপজেলার ২০ টি মিলে অভিযান চালিয়েছি। স্কয়ারের গোডাউনে ৫ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন চাল বাড়তি মজুদ রাখার কারণে তাদের গোডাউন সিলগালা করে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অন্য একটি মিলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।"

এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে একাদিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। 

আকিজের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, "মহাদেবপুরে আকিজ গ্রুপ দুটি মিল ভাড়া নিয়েছে। নিজের মিল আর ভাড়া করা মিল ভিন্ন কথা। ভাড়া যদি নিয়ে থাকে তাহলে যে নামে মিলটি রয়েছে, সেই নামেই কিন্তু চালের বস্তা করতে হবে। ওখানে আকিজ গ্রুপের যে বস্তা পাওয়া গেছে সেটা আমরা জব্দ করেছি।" 

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আকিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, "৬ টির মত কোম্পানি ব্যাগিং করে চাল বিক্রি করছে। যেটি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দাম, সেটিই প্যাকিং করে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছে। তারা আগাম টাকা মিলারদেরকে দিয়ে আসছে। তাদের ব্যাগও দিয়ে আসছে সেখানে; নওগা, দিনাজপুর এসব এলাকায়। জেলা প্রশাসককে দিয়ে আমরা সেগুলো বন্ধ করছি।"  

চালের বাজারে অস্থিরতার বিষয়ে তিনি জানান, কর্পোরেটরা যখন বেশি দাম দিয়ে ধান কিনতে গেছে, তখন প্রতিযোগিতা বেড়েছে এবং ধানের দামও বেশি হয়েছে।

তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

কর্পোরেট সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারি টিবিএসকে বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সবমিলে ৬ থেকে ৭ লাখ টন চাল প্যাকেট করে বাজারজাত করছে। যেখানে তাদের উৎপাদন প্রায় ৪ কোটি টন। এত কম পরিমাণ দিয়ে বাজারে প্রভাব ফেলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে প্রাণ আরএফএলের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, "দিনাজপুর প্রাণের মিলে অভিযানে গিয়ে কোনো সমস্যা পায়নি তদারকি দল। আমরা নিয়মের মধ্যেই রয়েছি।"  

খাদ্যমন্ত্রী জানান, "যারা শুধু প্যাকেট করে বাজারে চাল বিক্রি করবে তারা দেশের বাজার থেকে চাল কিনতে পারবে না- এই সার্কুলার দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি; একটি মিটিংও হয়েছে। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে বাইরে থেকে চাল আমদানি করে সেটি প্যাকেট করে বিক্রি করবে। আমরা সামারি তৈরি করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য।"

তিনি বলেন, "নিজস্ব মিল থাকলে তারা সেই মিলে প্যাকেট করবে, কিন্তু বাজার থেকে তুলে নিয়ে এসে প্যাকেট করতে দেবো না। যেখানে তারা এই প্যাকেট করে সেখানে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"

এদিকে সারাদেশে মজুদদারির বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, "কিছু অ-ব্যবসায়ী যারা কোনোদিন ধান-চালের ব্যবসাই করেনি বা ফুড গ্রেইন লাইসেন্সও নেই, তারা ধান বা চালের মজুদ করছে।" 

"ইটভাটাতে,স্কুল শিক্ষকের কাছেও ধানের মজুদ পাওয়া গেছে", যোগ করেন তিনি। 

মন্ত্রী আরও বলেন, "বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রসাশকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুর্যোগে ধানের ক্ষতির পরিমাণটা নিরূপণের। এটি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো। তখন করণীয় ঠিক করা হবে। যদি চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক তথ্য না থাকে তবে আমরা এটা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে পারবো না। আমরা আশা করছি ৭ দিনের মধ্যেই রিপোর্টটি পাবো।"

এতে যদি দেখা যায় চালের উৎপাদন কম হয়েছে, তখন আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে কর কমিয়ে চাল আমদানির কথা জানান তিনি।  

চাল মজুদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান

এদিকে, ঢাকাসহ সারাদেশে মজুদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু জায়গায় অনিয়মের চিত্র ধরা পড়েছে। ঢাকার মিরপুরে তাইয়্যেবা রাইস এজেন্সিতে একটি চালের আড়তে একই রশিদে দুই মূল্য থাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

ব্রাক্ষমবাড়িয়ার আনন্দবাজারের চালের দোকানগুলোতে অভিযানের সময় প্লাস্টিক বস্তায় চাল রাখার দায়ে আবুল খায়ের এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা এবং চাল এক মাসের বেশি সময় ধরে মজুত রাখায় শামীম এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

এছাড়া, বাড়তি দামে চাল বিক্রি করায় সিলেটে ৫ প্রতিষ্ঠান ও কুমিল্লায় ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

সারাদেশে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।   
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.