ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যয়ের অসমতা দূর করা জরুরি: পিএইচএম

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
21 May, 2022, 01:55 pm
Last modified: 21 May, 2022, 02:02 pm
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে রোগীর নিজস্ব অর্থ খরচ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানের দেশের মোট স্বাস্থ্যবায়ের মাত্র ২৩ শতাংশ বহন করে সরকার।

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ের সমন্বয় ও স্থানীয় চাহিদার আলোকে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরু করাসহ ২১টি দাবি জানিয়েছে জনগণের স্বাস্থ্য আন্দোলন-বাংলাদেশ (পিএইচএম)।

শুক্রবার রাজধানীর নাগরিক উদ্যোগ কনফারেন্স হলে আয়োজিত 'বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত: পরিপ্রেক্ষিত জাতীয় বাজেট' শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংলাপে বক্তারা এ দাবি জানান।

স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে আরো অধিক সমতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলেন তারা। এছাড়া, জনগণের ক্রয় ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নয়, বরং তাদের চাহিদা সমূহের ওপর ভিত্তি করে তাদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

সকল স্বাস্থ্য ও সামাজিক নীতিতে কর্মসূচী প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নে জনগণ ও তাদের সংগঠন সমূহের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পাশাপাশি ঔষধপত্র ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদি উৎপাদন ও বন্টন সমতার ভিত্তিতে করার কথা বলেন বক্তারা। সকল অর্থনৈতিক নীতিতে স্বাস্থ্য সমতা, জেন্ডার এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে তৈরি করার কথাও উল্লেখ করা হয় এই কনফারেন্সে।

তারা আরও বলেন, স্বাস্থখাতে সকল শূণ্যপদ অনতিবিলম্বে পূরণ করা উচিত। এছাড়া, ব্যক্তি পর্যায়ে ও সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যয়ের অসমতা দূর করা জরুরি বলেও মত দেন বক্তারা।

সংলাপে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন বলেন, "এবারের বাজেটে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে হবে। সবথেকে ভাববার বিষয় হচ্ছে যেভাবে ঔষধের দাম আর চিকিৎসার ব্যয় বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যাবে। সাথে সাথে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা তো আরও ভোগাচ্ছে।"

"এক্ষেত্রে আমাদের কমিউনিটি বেইজড ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি সরকারের উচিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা," বলেন তিনি।

ছবি- টিবিএস

সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রতিটি হাসপাতালে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা চালু করতে হবে বলে যোগ করেন আতাউর রহমান।

জনগণের স্বাস্থ্য আন্দোলন-বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, "দেশের ওষুধ শিল্পের মান ও মূল্য উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সাথে সাথে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লোকজ জ্ঞান ও চিকিৎসকদের মূল্যায়ন ও উৎকর্ষ সাধনে যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দে সবার জন্য স্বাস্থ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকার হিসেবে বলা হলেও এই খাতে প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়টি আমাদের জাতিয় বাজেটে খুব একটা প্রধান্য পায় না।"

সংগঠনটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে রোগীর নিজস্ব অর্থ খরচ সবচেয়ে বেশি এবং এই খরচ ক্রমেই বাড়ছে।

বর্তমানের দেশের মোট স্বাস্থ্যবায়ের মাত্র ২৩ শতাংশ বহন করে সরকার, ১৯৯৭ সালে সরকারের বহনকৃত অংশ ছিল ৩৭ শতাংশ। বেসরকারি এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ শতাংশ এবং দাতা সংস্থাগুলো ৭ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বহন করে থাকে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় (সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত) সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, যা মাত্র ২৭ ডলার। যেখানে ভারতে ৬১ ডলার এবং মালয়েশিয়া ৪১০ ডলার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে জন্য এই খাতে সরকারের ব্যয় হওয়া আবশ্যক ৪০ ডলার।

দেশের ২০০৯-১০ সালে যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল তাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৬.২ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৯০শতাংশ। আর সেখানে সর্বশেষ ২০২১-২২ বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে মোট বাজেটের ৫.৪৭ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৯ শতাংশ।

প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ টাকার অঙ্কে বাড়লেও মোট বাজেট ও জিডিপির অনুপাতে সেই পরিমাণ হতাশাব্যাঞ্জক।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.