পুলিশের মাঠ নিয়ে এত অনড় হওয়ার তো কিছু নেই: সৈয়দা রত্না

বাংলাদেশ

27 April, 2022, 02:30 pm
Last modified: 27 April, 2022, 03:56 pm
না, লাইভ আমি বন্ধ করিনি। আমার হাত থেকে একজন ফোনটা কেড়ে নিয়েছিলেন। উনিই হয়তো লাইভটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন...

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর আন্দোলন, আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তার কিশোর পুত্রকে পুলিশের আটক করা- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

আন্দোলনে নিজের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, চাওয়া-পাওয়া, ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সৈয়দা রত্না। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: আপনি কেমন আছেন?
সৈয়দা রত্না: হ্যাঁ, ভালো আছি।

টিবিএস: রোববার সকালের ঘটনা নিশ্চয়ই আপনাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে? ঠিক কী ঘটেছিল?
সৈয়দা রত্না: রোববার আমি বেরিয়ে দেখি ওখানে অনেক কাজটাজ হচ্ছে। আমি ফেইসবুকে লাইভে গেলাম। তখন উনারা (পুলিশ) আমাকে বাধা দিয়ে নিয়ে গেছেন থানায়।

টিবিএস: আপনার ছেলে কি তখন সঙ্গে ছিল?
সৈয়দা রত্না: না, ছেলে বাসায় ঘুমাচ্ছিল। যেহেতু এটা একদম পাড়ায়, পাড়ার মানুষেরা তো দেখছে মাঠে এখন কাজ হচ্ছে, মাঠ নিয়ে একটা আন্দোলন হচ্ছে। কেউ একজন আমার ছেলেকে ফোন করেছে যে তোমার আম্মুকে পুলিশ নিয়ে গেছে। তখন ও বাসা থেকে বের হয়।

টিবিএস: রোববার কি অন্যদিনের চেয়ে মাঠে বেশি কাজ হচ্ছিল?
সৈয়দা রত্না: হ্যাঁ, অনেক পুলিশ ছিল। মনে হচ্ছিল শ'খানেকের মতো পুলিশ অবস্থান করছিল।

টিবিএস: মাঠ নিয়ে এ আন্দোলন তো অনেক দিন থেকে, আপনি কবে থেকে যুক্ত হয়েছিলেন?
সৈয়দা রত্না: ২০২০-এ থানা স্থাপন বিষয়ে আদালতের অনুমতি বিষয়ক একটা বিজ্ঞপ্তি দেয়ালে লাগানো হয়। আমরা অনেক আগে থেকেই কানাঘুষা শুনছিলাম, তো এবার একটা প্রত্যক্ষ ব্যাপার দেখলাম যে আসলেই এখানে থানা তৈরি করার কাজ হচ্ছে। তখন আমি একদিন একটা ভিডিও করে ফেইসবুকে দিই যে এটা তো আসলে আমাদের খেলার মাঠ। এখানে একটিই খেলার মাঠ, এটা আমাদের মাঠ, বাইরে থেকে কেউ এসে কেন এখানে থানা বানাবে?

ওই ভিডিওতে আমি আরও বলেছিলাম যে আমি আমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে, মেয়রের কাছে নিবেদন করছি তারা যেন আমাদের এ মাঠটিকে সুরক্ষা দেন। কিন্তু উনাদের পর্যন্ত তো আমাদের দাবি পৌঁছায় না। তারপরে আমাদের পাড়ার এক ছোট ভাই জামিল বললো, 'আপা, চলুন আমরা কিছু করি।' আমাদের সামনে মাঠটা চলে যাবে। ও তখন কেঁদে ফেলেছিল।

তখন আমরা ফেইসবুকে একটা পেইজ খুললাম: 'তেঁতুলতলা মাঠ আমাদের প্রাণের দাবী'। ওখানে আমরা লেখালেখি শুরু করলাম। মানববন্ধন হলো। এরপর আমরা মেয়রের অফিসে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিই৷ এখানকার ওয়ার্ড-এমপি আছেন, তার সাথেও আমরা দেখা করেছিলাম। উনি বলেছিলেন যে আমি মাঠের পক্ষে আছি, আমি চাই মাঠ থাকুক।

আমরা দেখলাম আমাদের মেয়র সাহেব বলছেন প্রত্যেক এলাকায় মাঠ থাকবে, না থাকলে উনি বরাদ্দ করবেন। খবরে দেখছিলাম তিনি দখলদারদের কাছ থেকে মাঠ মুক্ত করছেন। তখন আমাদের ভেতরে একটা ভরসা তৈরি হয়। এখানকার এক নারী-কমিশনারকে মাঠে থানা হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছিলেন না, মাঠের জায়গায় মাঠ থাকবে। কারণ আমাদের মাননীয় মেয়র মাঠ চান। আমাদের মনে হলো, তাহলে তো আমাদের আর ভয়ের কোনো বিষয় নেই।

টিবিএস: রোববার সকালে আপনার লাইভে দেখা যায় কিছু বেসামরিক পোশাকের মানুষের সঙ্গে আপনার তর্ক হচ্ছে একটু পরে কিছু পুলিশ সদস্য এসেও যোগ দিয়ে লাইভ বন্ধ করতে বলেন। এরপর কি আপনি লাইভ বন্ধ করে দেন...
সৈয়দা রত্না: না, লাইভ আমি বন্ধ করিনি। আমার হাত থেকে একজন ফোনটা কেড়ে নিয়েছিলেন। উনিই হয়তো লাইভটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

টিবিএস: এরপরেই কি আপনাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ?
সৈয়দা রত্না: হ্যাঁ, মহিলা কনস্টেবল ছিলেন, তারা আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যান।

টিবিএস: এরপর কেউ একজন আপনার ছেলেকে জানায় ঘটনার বিষয়ে?
সৈয়দা রত্না: হ্যাঁ, কেউ একজন আমার ছেলেকে জানালে ও বাসা থেকে বের হয়ে মাঠের সামনে মসজিদের কাছে যায়। ছেলে তখন ফোনে কথা বলছিল, পুলিশ তাকে ডাকে। ডাকে সাড়া না দিয়ে ছেলে বাসার দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওরা তখন এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। ওই সময়ই তার ফোনে তার বোন কল করে। ও তখন পুলিশের হাত থেকে ফোন নিয়ে বোনকে সবকিছু জানায়।

তখন পুলিশ আবার ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে যায়। এরপর তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে দেখি আমার ছেলেকেও নিয়ে আসা হয়েছে।

টিবিএস: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থানার জন্য অন্য জায়গা খোঁজার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওখানে এখনো কাজ চলছে। কাজ বন্ধ হয়নি। পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মাঠটিতে থানা স্থাপনের জন্য তাদের বৈধতা আছে। 

সৈয়দা রত্না: ঠিক আছে, উনারা অনুমতি নিয়ে কাজ করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেছেন উনারা অন্য একটা জায়গা পেলে থানা সেখানে করবেন। তাহলে তো হয়েই গেল। উনাদের থানা করাটা জরুরি, ওই জায়গাতেই করতে হবে সেটাতো জরুরি নয়। এর মধ্যে যদি জায়গা পেয়ে যান, তাহলে নিশ্চয় উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অন্য জায়গা থানা স্থানান্তরিত করতেই পারবেন। এ জায়গাটাতেই করতে হবে, এমনতো বিষয় না।

টিবিএস: আপনাকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেতে হয়েছে… 
সৈয়দা রত্না: এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না।

টিবিএস: আপনার ও ছেলের জন্য এই থানা হাজত ব্যাপারটা মানসিকভাবে খুবই বিপর্যকর হওয়ার কথা।
সৈয়দা রত্না: হ্যাঁ, এটা আসলে ব্যাখা করা যায় না যে কতটা যন্ত্রণার একটা দিন গেছে। এটা একটা ভিন্ন ধরনের ট্রমা ছিল আমাদের জন্য, বলে বোঝানো যাবে না। তবে এখন আমি স্বস্তিবোধ করছি এজন্য যে পুরো বাংলাদেশের মানুষ এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছেন। আমাদের কষ্ট হলেও চূড়ান্তভাবে আন্দোলনটা প্রতিটা মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।

আমি সবাইকে বলেছি। মাঠটা পেয়ে গেলে আমার কোনো দুঃখ থাকবে না।

আন্দোলনে হয়তো আমারও কিছু ভুল থাকতে পারে। যেমন উনারা থানায় আমাকে বলেছেন যে আমি উনাদেরকে অনেক অপ্রীতিকর কথা বলেছি। ভূমিদস্যুটস্যু বলেছি তো (একটু হেসে)। একটা আন্দোলনে কিন্তু কেউ একদম বেছে বেছে একেবারে প্রমিত ভাষায় প্রতিবাদ জানায় না। আন্দোলন কিন্তু ওরকম করেই হয়। আর আমি একজন একেবারেই ছাপোষা একটা মানুষ, তা-ই না?

এখন আমি আর ওটা নিয়ে ভাবছি না। তবে উনারা (পুলিশ) নিশ্চয়ই আমার সাথে এটা অন্যায় করেছেন। আমার ছেলের সাথে অন্যায় করেছেন। কিন্তু তারপরও আমি এটা নিয়ে ভাবছি না। আমি ভাবছি যে আমাদের মাঠটা বেঁচে যাক। উনারাওতো একটু স্যাক্রিফাইস করতেই পারেন, উনারাও তো ভাবতে পারেন যে আসলেই তো এলাকাবাসী এটা চাইছে বা মাঠটা থাকুক বাচ্চাদের জন্য। আমরা তো নাগরিক, আমাদের সাথে তো উনাদের একটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হতেই পারে। উনাদের এত অনড় হওয়ার তো কিছু নেই, ইচ্ছা করলেই করতে পারেন।

টিবিএস: মাঠে পুলিশ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। আপনারা এখন কী করবেন?
সৈয়দা রত্না: এতদিন আন্দোলনটা আমি করেছি, এখন কিন্তু এটা অন্য পর্যায়ে চলে গেছে। এখন দেশের অনেক মানুষ এর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গেছেন। উনারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, উনারাই আন্দোলনটাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এখন তারাই দেখবেন তারা কীভাবে আন্দোলনটা করবেন।

টিবিএস: আপনি কোনো নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বোধ করছেন?
সৈয়দা রত্না: না। আমি নিরাপত্তাজনিত কোনো ভয় করছি না।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.