ঝুঁকিপূর্ণ ফুট ওভারব্রিজ বন্ধ, তবু ঝুঁকিতে পথচারীরা   

বাংলাদেশ

21 April, 2022, 02:15 pm
Last modified: 21 April, 2022, 02:16 pm
ব্রিজ পারাপারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলেও সিঁড়িগুলোর মুখে হকাররা দোকান বসাচ্ছে আাবার ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে।

কয়েক মাস ধরে ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট-গাউছিয়া মার্কেট সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়ার পরেও ঝুঁকিতে রয়েছে পথচারীরা। ফুট ওভারব্রিজটির নিচে এবং চারটি সিঁড়ির প্রবেশমুখেই বসছে অন্তত অর্ধশতাধিক ভাসমান দোকান ফলে যেমন পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে তেমনি এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের নিচে বসে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা।

আসন্ন ঈদের কেনাকাটা করতে নিউমার্কেট এলাকায় দিনজুড়েই থাকছে ক্রেতাদের উপস্থিতি। ফলে এ ব্রিজটির কারণে ঝুঁকির মধ্যেই থাকছেন পথচারী, ক্রেতারা।

নিউমার্কেটের ৪ নং গেট সংলগ্ন কংক্রিটের তৈরী ফুট ওভারব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় গত ৪ এপ্রিল এটি বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সাথে সাথে এর উপরে দোকান নিয়ে বসা হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজে যাতায়াত বন্ধ করে দিলে তখন হকাররা প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে "ফুট ওভারব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ; সর্বসাধারণের ফুট ওভারব্রিজের ওপরে ওঠা নিষেধ" লেখা সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও এসব তোয়াক্কা না করেই হকাররা দোকান নিয়ে বসতেন ব্রিজটির উপর সাথে সাথে ক্রেতা, পথচারী সবাই-ই নির্দেশনাটির তোয়াক্কা না করে ব্রিজটি ব্যবহার করতেন।

এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা বলছেন ব্রিজটি বন্ধ করে রাখলেই সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। ব্রিজ পারাপারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলেও সিঁড়িগুলোর মুখে হকাররা দোকান বসাচ্ছে আাবার ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে। তাদের দাবি ব্রিজটি দ্রুত ভেঙ্গে নতুন একটি ব্রিজ বানানো হোক। হকাররা বলছেন, পেটের দায়েই ঝুঁকি নিয়ে এ ব্রিজটির নিচে দোকান বসিয়েছেন। যখন উচ্ছেদের অভিযান চালানো হয় তখন তারা স্থান ছেড়ে দেন।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, ওভারব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি ভেঙ্গে অত্যাধুনিক ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে। ডিজাইনের কাজ শেষ হলেই বাকী কাজ শুরু হবে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজটির সিঁড়িগুলোর মুখে লোহার বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলেও তা উপেক্ষা করে অনেকেই ব্রিজটি ব্যবহার করছেন। ব্রিজটির চারটি সিঁড়ির মুখে ও নিচে মেয়েদের কাপড় এবং জুতার অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। এছাড়া সিঁড়ির নিচে স্থায়ী একটি খাবারের দোকান রয়েছে।

প্রাচীন এ ফুট ওভারব্রিজটি অনেকটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে যাওয়াসহ কোনো কোনো অংশের রডও বেরিয়ে পড়েছে। আর ক্ষয়ে গেছে ওঠানামার সিঁড়ির অংশে লাগানো লোহার পাত। কোনো কোনো অংশে ভেঙে পড়েছে সিঁড়ির পাত।

আবির হোসেন নামে এক ক্রেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ এলাকায় হেঁটে চলাও দুরূহ। এতো মানুষের ভিড়ের মধ্যে এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ রেখে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যদি সাময়িকভাবে ইটের চারপাশে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে দিতো তাহলেও কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত থাকা যেত।'

দুই বছরের বাচ্চাসহ ফুট ওভারব্রিজটির সিঁড়ির মুখের লোহার বেড়া ডিঙ্গিয়ে পার হচ্ছিলেন সাহেরা বেগম। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ হলে ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলুক কিন্তু আমাদের ভোগান্তি দিচ্ছে কেন? অন্য ফুট ওভারব্রিজটি দূরে থাকায় এবং সেখানে মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঝুঁকি নিয়েই বেড়ার ফাঁকা দিয়ে প্রবেশ করে পার হচ্ছি।'

ঝুঁকিপূর্ণ ফুট ওভারব্রিজটির সিঁড়ির মুখে জুতা বিক্রি করেন হকার নূর উদ্দিন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এখানে এই আছি, এই নাই। পুলিশ এসে উঠে যেতে বললেই উঠে যেতে হয়।' সামনে ঈদ তাই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে হকারি করেন তিনি।

আরেক হকার জয়নাল টিবিএসকে বলেন, 'আমরা আমাগো পেটের দায়ে ঝুঁকি সত্ত্বেও দোকান নিয়ে বসেছি। পেট কি আর ঝুঁকিটুকি মানে? আমাদের বসার তো কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই, যখন পুলিশ এসে উঠিয়ে দেয় তখন আবার চলে যাই।'

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙে অত্যাধুনিক ফুট ওভারব্রিজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের এসকেলেটর সম্বলিত ফুটওভার ব্রিজের ডিজাইন করা হচ্ছে। বাকী কার্যক্রম শেষ করে ব্রিজটি ভেঙ্গে কাজ শুরু করতে আরও ছয় মাসের মতো সময় লাগবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা ব্রিজটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে এখানকার দোকানগুলোকে উচ্ছেদ করে দেই কিন্তু আমরা চলে আসার পরেই হকাররা ব্রিজের নিচে ও এর আশেপাশে দোকান বসায়। এখানে ঐ মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা আমাদের সহযোগিতা না করলে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এমনকি ঐ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় হকাররা দোকান বাসায়। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি কিন্তু তারা আইন ভঙ্গ করেই আবার বসে পড়ে। কিন্তু কোনো সমস্যা হলেই সেটা সিটি কর্পোরেশনের উপর এসে পড়ছে।'  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.