ব্রেইন ড্রেইন বাড়ছে কেন

বাংলাদেশ

15 April, 2022, 11:45 pm
Last modified: 16 April, 2022, 03:00 pm
সফল অভিবাসীরা প্রায়ই নিজ দেশে বিনিয়োগ করেন, জ্ঞান প্রয়োগ করেন, রেমিট্যান্সও পাঠান। তবু দরিদ্র দেশগুলো থেকে ‘ব্রেইন ড্রেন’ বা মেধা পাচার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বৃত্তিসহ লোভনীয় সব সুবিধা দেয়ার কারণে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠেছে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর গন্তব্য।

২০২১ ওপেন ডোর রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে, একক গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশিকে স্টাডি পারমিট দিয়েছে। এই হার ২০০৯ সালের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি। ফরেইন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেশনস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফএসিডি-ক্যাব) বলছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বৃত্তি পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য শীর্ষ গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান। এসব দেশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টানার জন্য প্রচুর বৃত্তি ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে থাকে।

কিন্তু অভিবাসী হওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশই পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসে না। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন। অভিবাসী হওয়া দেশগুলোতে চাকরির সুযোগ, বসবাসের অনুমতি ও উচ্চমানের জীবনযাত্রা পাওয়ার কারণে তারা দেশে ফেরেন না।

পশ্চিমের অনেক দেশেই জন্মহার কমে গেছে। কমতে শুরু করেছে ওসব দেশের জনসংখ্যাও। এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলো শিক্ষা অভিবাসনের মাধ্যমে শ্রমঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বিশাল বেকারত্বের কারণে তরুণরা শিক্ষা অভিবাসনের ক্রমবর্ধমান সুযোগ গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছেন।

সফল অভিবাসীরা প্রায়ই নিজ দেশে বিনিয়োগ করেন, জ্ঞান প্রয়োগ করেন, রেমিট্যান্সও পাঠান। তবু দরিদ্র দেশগুলো থেকে 'ব্রেইন ড্রেন' বা মেধা পাচার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একটি উন্নয়নশীল দেশে যখন ব্যাপক হারে শিক্ষা অভিবাসন চলতে থাকে, তার ফলে যে নেতিবাচক অভিঘাত সৃষ্টি হবে, তার প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে।

মেধাবীদের দেশত্যাগের ফলে অর্থনীতিতে আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মানুষ দেশে না থেকে বিদেশে চলে যেতে চাইবে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও শিক্ষায় দেশের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবাও।

বাড়ছে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী বিদেশে যায়। ২০২০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা চারগুণ হয়েছে।

ইউনেসকোর তথ্য বলছে, ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমায়।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যায়। তাদের খুব কমসংখ্যকই দেশে ফিরে আসে।

পিএসি এশিয়া, বাংলাদেশের চিফ কনসালট্যান্ট প্রদীপ রায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, মহামারিপূর্ব সময়ের তুলনায় এ বছর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ আবেদন জমা পড়েছে তার প্রতিষ্ঠানে।

তিনি বলেন, 'আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আরও বেশি বেশি স্কলারশিপ দিয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আগেও স্কলারশিপ দিত, তবে আজকাল সেই প্রবণতা বাড়ছে।'

দেশের শীর্ষস্থানীয় মেধাবীদের জন্য ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবু তাদের অনেকেই দেশে চাকরি পাওয়ার পরেও কেবল চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিল আফরোজা বেগম। 

তিনি টিবিএসকে, 'আমার মেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল। সে-ও যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল, তাতে খুশি না হওয়ায় দেশ ছেড়েছে।'

'অন্যদিকে দেশের চাকরির বাজারে ব্যাপক প্রতিযোগিতা থাকায় মাঝারি মেধার শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়তে যেতে উৎসাহিত হচ্ছে। কারণ পড়া শেষ হলে সেখানে সহজে চাকরি পাওয়া যায়,' যোগ করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আফরোজা বেগম।

এফএসিডি-ক্যাবের কর্মকর্তারা টিবিএসকে জানিয়েছেন, প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য পরামর্শ নিয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজী ফরিদুল হোক বলেন, 'সব শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পায় না। আসলে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই নিজের টাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। এ খরচ বহন করে তাদের পরিবার। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আংশিক টিউশন ফি মওকুফ পায়।'

পড়াশোনা, বসবাসের অনুমতির লোভনীয় অফার

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য যুক্তরাজ্য। দেশটি প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে কিছু স্কলারশিপ হলো শেভেনিং, কমওয়েলথ, হর্নবি ও গ্রেট স্কলারশিপ।

স্থানীয় পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান স্টাডি সলিউশন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে শিক্ষার্থী পাঠিয়ে থাকে।

গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থী পাঠানোর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি দেশটিতে শিক্ষার্থী পাঠিয়েছে যথাক্রমে ১৭, ৫৬ ও ২৫০ জন। অভিবাসন আইনজীবী ও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ব্যারিস্টার এরশাদ আহমেদ টিবিএসকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, 'ইউকে হোম অফিসের সঙ্গে এক বৈঠকে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, গত বছর ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।'

বিগত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্য শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা বাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দেশটি এক বছর পড়াশোনার পর দুই বছর পূর্ণকালীন কাজের সুবিধার পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট-এর (পিএসডব্লিউ) ভিসা দিচ্ছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিবাহিত দম্পতিদের অভিসানও চালু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির অফার দিয়ে থাকে। তবে দেশটি সুবিধা আরও বাড়াতে পারে।

সম্প্রতি ব্লুমবার্গে প্রকাশিত টাইলার কোয়েনের 'শিক্ষা অভিবাসন কি পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে?' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'চিন্তা করে দেখুন, আমেরিকার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় দরিদ্র দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত আরও ১০টি টিউশন-ফিমুক্ত স্কলারশিপ দিচ্ছে। আমেরিকার প্রায় ৫ হাজার উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অভিবাসীদের জন্য আরও হাজার হাজার স্লট তৈরি হতে পারে।'

সম্প্রতি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ২০২৩-২৩ শিক্ষাবর্ষের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ স্টুডেন্টের জন্য আবেদন চেয়েছে। এই প্রোগ্রামে তরুণ কর্মজীবীদের মাস্টার্স করার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

এফএসিডি-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট কাজী ফরিদুল হক টিবিএসকে বলেন, 'কোভিডজনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন আটকে ছিল। তবে এখন চাপ এত বেড়েছে যে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা ইস্যু করার জন্য তারিখ দিতে পারছে না। অনেক শিক্ষার্থীকেই আগামী বছর সময় দেওয়া হবে।'

৪ বছরে কানাডায় পড়াশোনার জন্য আবেদন বেড়েছে ২৭০% 

ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা-র (আইআরসিসি) তথ্যানুসারে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কানাডায় পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন ২৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয়-স্তরে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশিদের আবেদন বেড়েছে ৩০০ শতাংশ।

২০১৬ সালে কানাডা ৮০০ বাংলাদেশি নাগরিককে স্টাডি পারমিট দেয়, যা বেড়ে ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮৫০, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৯০০ ও ২০১৯ সালে ৩ হাজার ১৬৫-তেএ দাঁড়ায়।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের দেয়া স্টাডি পারমিটের ৯৩ শতাংশের বেশি ইস্যু করা হয়েছে। ২০২০ সালে এই হার কমে মাত্র ৩১.৩ শতাংশে নেমে আসে (৫০০টি নতুন স্টাডি পারমিট দেয়া হয়)। মূলত ভ্রমণ বিধিনিষেধ ও মহামারিজনিত অনিশ্চয়তার কারণে স্টাডি পারমিট ইস্যু করার হার কমে আসে এ সময়।

এই পতন সত্ত্বেও কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষিণ এশিয়া থেকে শিক্ষার্থী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে।

বাংলাদেশ থেকে কানাডায় শিক্ষা অভিবাসন ২০২১ সালে আবার গতি পেতে শুরু করে। গত বছরের প্রথম চার মাসে ৮০০টিরও বেশি নতুন স্টাডি পারমিট ইস্যু করা হয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের।

কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উত্তর আমেরিকার দেশটিতে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করছেন।

১৯৬০-এর দশকে পেশাজীবীরা বাংলাদেশ থেকে প্রথম কানাডায় অভিবাসন শুরু করেন। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্য দেশটিতে যান এবং তারপর অভিবাসী হিসেবে সেখানেই স্থায়ী হন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পরের দশকগুলোতে অভিবাসন বেড়ে যায়। ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অভিবাসনের হার শীর্ষে পৌঁছে।

কানাডায় মূলত দুই ক্যাটাগরির বাংলাদেশিরা অভিবাসী হন—দক্ষ কর্মী ও পারিবার ক্যাটাগরিতে। 

এই স্রোত সামলানোর উপায় কী?

দিল আফরোজা বেগম বলেন, শিক্ষা অভিবাসনে লাগাম টানা সহজ নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা প্রধানত দুটি কারণে বিদেশে পাড়ি জমায়।

প্রথমত, এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমনকি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট। অন্য কারণটি হলো চাকরি বাজারের সমস্যা।

তিনি বলেন, 'দেশে প্রতি বছর ৪০ লাখের বেশি গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু তারা কাজ করবে কোথায়?' উন্নত দেশের শিক্ষার্থীরা স্নাতক পড়াশোনা শেষ করার পরপরই চাকরি পেয়ে যায়। ফলে তাদের একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের সুযোগ তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'তাহলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে এই শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করবে?

'এ-লেভেল এবং ও-লেভেল পাস করা বেশিরভাগই এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারে না। তাদের শেষ উপায় হচ্ছে বিদেশ চলে যাওয়া। যারা বিত্তশালী তারা কোটি টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের বাইরে পড়তে পাঠাচ্ছেন।'

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ কম থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েন। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি তো আছেই।

তার পরামর্শ, মেধাবী শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার জন্য সরকারের উচিত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা।

'মানসম্মত শিক্ষার অভাবে দেশে অদক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে। একইসাথে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই তারা বিদেশে পাড়ি জমানোকেই বেশি নিরাপদ মনে করে,' বলেন তিনি।

দেশে ফিরতে চান না সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে বিদেশে থেকে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।

শিক্ষকেরা বাইরে যান এমএস, পিএইচডি ইত্যাদি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। এই স্টাডি ব্রেকের সময় তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাঁচ বছর বেতন পেয়ে থাকেন। এরপর আরও এক বছর অর্ধেক বেতনে ও পরের এক বছর বিনাবেতনে বিদেশে অবস্থান করতে পারেন শিক্ষকেরা।

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষক অবৈধভাবে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন এবং তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় বছর বেতন পেয়েছেন। তারা বিনাবেতনে আরও এক বছর বিদেশে থাকার অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেননি। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩। 

২০২০ সালে বিনাবেতনে ১০৩ জন শিক্ষক বিদেশে ছিলেন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৫ জন।

অনুমতি ছাড়া দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করায় ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিন্ডিকেট সভায় ৫২ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

একই অভিযোগে ১৯৭২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১১৮ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ফিরে এসেছেন কেবল ৩৮ জন।

শিক্ষা অভিবাসনের অন্য দিক

আফ্রিকার মতো বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে প্রচুর প্রতিভা থাকলেও এসব অঞ্চলে প্রতিভাবানদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার এবং তাদের সম্ভাবনার পুরোটা কাজে লাগানোর মতো অবকাঠামো নেই।

ব্লুমবার্গে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুসারে, দরিদ্র দেশগুলো থেকে 'ব্রেইন ড্রেইন' উদ্বেগের বিষয় হলেও, এর ফলে ei দেশগুলোতে প্রতিভার ঘাটতি কমই হয়।

যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সফল ভারতীয় থাকায় এর সুফল পেয়েছে ভারতও। তাছাড়া, এরকম অভিবাসনের ফলে দরিদ্র দেশগুলোর শিক্ষার্থীরাও উন্নততর শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে। 

দেশের ভেতরেও শিক্ষা অভিবাসনের কিছু সমর্থক রয়েছে। মূলত বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় ও করপোরেশনও এরকম অভিবাসনের সমর্থক।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.