ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক মামলায় ব্যতিক্রমী দণ্ড
প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন আব্দুল্লাহ। প্ল্যাকার্ডে লেখা 'মাদক ব্যবসার জন্য আমি দুঃখিত, লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। মাদক দেশ ও দশের শত্রু। মাদক পরিহার করুন।' ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মূল ফটকের সামনে এ ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন বহু মানুষ।
ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা যায় মো: আব্দুল্লাহ (৫০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ভিন্নধর্মী দণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন আদালত। গতকাল রোববার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ গাজী দেলোয়ার হোসেন এ রায় প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানায়, মাদক মামলায় মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহকে আদালত প্রথমে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করেন। পরক্ষণেই আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. জাকির হোসেন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আব্দুল্লাহ একজন গরীব কৃষক এবং তার দুই মেয়ের একজন কুরআনের হেফজ সম্পন্ন করেছেন এবং অন্যজনের প্রায় শেষের দিকে।
পরে আদালত পূর্বের রায় পরিবর্তন করে আব্দুল্লাহকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে এক মাস অবধি আদালত চত্বরে "মাদক ব্যবসার জন্য আমি দু:খিত, লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী" ও "মাদক দেশ ও দেশের শত্রু, মাদক পরিহার করুন" এই লেখা সম্বলিত একটি ব্যানার প্রদর্শনের ভিন্নধর্মী আদেশ প্রদান করেন।
২০১৫ সাল থেকে মো: আব্দুল্লাহর মাদকের এ মামলাটি বিচারাধীন ছিল।
আসামী পক্ষের উকিল অ্যাড.জাকির হোসেন জানান, "আসামীর দুটি মেয়ে আছে। একজন কোরআন খতম দিয়েছে ও অপরজন দিবে। এর আগে তার নামে কোনো প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আসামী তার এই কাজে অনুতপ্ত এবং পরিবারে সে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দেন।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, "সভ্য জগতে শাস্তির মূল উদ্দেশ্য সংশোধন। এই ব্যক্তি এক মাস ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকে তাকে দেখে বিদ্রুপ করবে। আইনের ধারণা হলো এর ফলে লোকটি লজ্জিত হয়ে সংশোধিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ অনুযায়ী দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হলে কারাগারে না পাঠিয়ে আদালত অপরাধীকে ভর্ৎসনা করে ছেড়ে দিতে পারেন বা সমাজকল্যাণমূলক কোনো কাজের আদেশ দিতে পারেন। এ শাস্তির উদ্দেশ্য হলো কোনো ব্যক্তিকে সংস্কারের সুযোগ করে দেওয়া।"