জৈবসার উৎপাদনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির পরিকল্পনায় এসিআই

বাংলাদেশ

08 April, 2022, 12:00 pm
Last modified: 08 April, 2022, 02:19 pm
নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় ইকোডাইজেস্টার নামক প্রযুক্তি বাংলাদেশে আনতে কাজ করছে এসিআই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের এই একটি যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন ৫-১০ টন জৈবসার তৈরি করা সম্ভব।

পচনশীল যে কোন ধরনের বর্জ্য থেকে জৈবসার তৈরির প্রযুক্তি আনছে এসিআই ফার্টিলাইজার লিমিটেড। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্জ্য থেকে উৎপাদিত জৈবসার বাজারজাত করা হবে। 

এসিআই সূত্র বলছে, নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় এটি বাংলাদেশে আনতে কাজ করছে এসিআই। যন্ত্রটির নাম 'ইকোডাইজেস্টার'। এই যন্ত্রের মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে পচনশীল যেকোন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ময়লা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় জৈবসার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেডের এই একটি যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন ৫-১০ টন জৈবসার তৈরি করা সম্ভব। 

জানা গেছে, এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা মূলত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি একই সাথে পাওয়া যায় জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপাদান জৈব সার। নেদারল্যান্ডসেই এই প্রযুক্তিটির বহুল ব্যবহার রয়েছে।

এদিকে প্রযুক্তিটি দেশে আনতে এসিআই সরাসরি কাজ করলেও সার উৎপাদনের মডেলটি কিছুটা ভিন্ন। দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। সিটি কর্পোরেশন ময়লাগুলো দিয়ে জৈবসার বানাবে এবং এসিআই বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছাবে।

এসিআই ফার্টিলাইজারের বিজনেস ডিরেক্টর বশির আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ময়লা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অন্য একটি প্রজেক্ট পরিচালনা করছে, যেখানে তাদের অনেক বেশি পরিমাণে বর্জ্য দরকার। তাই তারা আগ্রহ দেখায়নি। তবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন আগ্রহ দেখিয়েছে, মিটিংও হয়েছে। ধরাবাহিকভাবে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনগুলোর সঙ্গেও কাজ করতে চাই আমরা।'

তিনি জানান, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আসবে। আসার পরই সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক হবে। এরপরই এটা নিয়ে কাজ শুরু হবে। এখানে নেদারল্যান্ডস প্রযুক্তিগত সহায়তা দিবে। 

উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) তার এলাকার বর্জ্য ব্যবহার করে ৪২.৫ মেগাওয়াটের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে। ঢাকার আমিনবাজারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিএমইসি। এ কারণে ডিএনসিসির প্রচুর বর্জ্য দরকার।

এসিআই সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক যে পরিকল্পনা তাতে এটি হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি মডেল। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করে সিটি কর্পোরেশন। এ কারণে তারা যদি বর্জ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে এই যন্ত্র দিয়ে সার তৈরি করা হবে এবং নির্দিষ্ট দামে কিনে নিয়ে এই সারগুলো বাজারজাত করবে এসিআই।

প্রতিদিন ১০ টন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত সক্ষমতার একটি যন্ত্র সেটআপ করা পর্যন্ত ৬ কোটি টাকা খরচ পড়বে। যেখানে ১০ টন বর্জ্য ব্যবহার করে ৩-৩.৫ টন জৈবসার তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া ছোট যন্ত্র কেনা হলে এর খরচ পড়বে ৩০-৩৫ লাখ টাকা। যা দিয়ে প্রতিদিন ৫০ কেজি বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব।

যন্ত্রটির সহায়তায় এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বর্জ্য পচিয়ে জৈবসার তৈরি করা হবে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ময়লা প্রক্রিয়াজাত করে জৈবসারে রূপান্তর করে এই ব্যাকটেরিয়া। যা কৃষকরা তাদের ফসলের মাঠে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে ময়লা থেকে জৈবসার তৈরি করা হলে সারাদেশে যেসব পচনশীল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আর সমস্যায় পড়তে হবে না। বর্জ্যগুলো ল্যান্ডফিলে নেওয়ার দরকারও পড়বে না। বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এনে যেসব জায়গায় রাখা হবে সেখানেই তৈরি করা যাবে জৈবসার।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭০-৮০ হাজার টন জৈবসার ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সারগুলো মূলত কারখানায় গরু ও মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে। এর বাজার হচ্ছে ১০৫-১২০ কোটি টাকার। প্রতি বছর ৩০ শতাংশ করে জৈব সারের বাজার বড় হচ্ছে।

জৈব সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এসিআই, কাজী, নাজিম, অন্নপূর্ণা উল্লেখযোগ্য। তবে সারাদেশ বিভিন্ন এনজিও এর সহযোগিতায় অনেক কৃষক বাড়িতেই বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে জৈব সার তৈরি করেন।

এসিআই বলছে, এই মেশিনের মাধ্যমে যে কোন ধরনের পচনশীল বর্জ্য যেমন, খাবার, সবজি থেকে উৎপন্ন ময়লা, মাছ-মাংসের ময়লা, ধান কাটার পর জমিতে থাকা খড়, হাস-মুরগির বিষ্ঠা সহ সবকিছুতেই এটি কাজ করবে। যেমন- ধান কাটার পর জমিতে যে অবশিষ্ট খড়ের অংশ থাকে তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ছিটানো হলে সেটা পচে গিয়ে সারে রূপান্তরিত হবে। 

এসিআই এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারি টিবিএসকে বলেন, 'এই প্রযুক্তিটা আমরা কাজে লাগাতে পারলে দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি মাটির উর্বরতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই প্রযুক্তি। কম খরচে জৈব সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।'

কোন কারণে সিটি কর্পোরেশন এই চুক্তিতে কাজ না করলে এসিআই কিভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তখন ছোট ছোট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যেমন সেটা হতে পারে কোন আবাসিক এলাকার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন অফিসের সঙ্গে কাজ করবো।'

এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ এই বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৪৭ হাজার টন হবে। ১৯৯৫ সালে মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদন হার ছিল ০.৪৯ কেজি যা ২০২৫ সালে দাঁড়াবে ০.৬৯ কেজিতে।  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.