শ্রম অধিকার রোডম্যাপ বাস্তবায়ন নিয়ে ইইউ’র উদ্বেগ প্রকাশ
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশন হতাশা প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সঙ্গে বৈঠকে এ প্রতিক্রিয়া জানায় প্রতিনিধি দলটি।
তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও কারখানা সংস্কারের ব্যর্থতা চিহ্নিত করেছে ইইউ।
এছাড়াও, অকার্যকর রেমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে প্রতিনিধি দল। ভবন সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা, অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্নকৃত ভবনগুলোর সংস্কারের ফলোআপ, ভবন/কারখানা মালিকদের সংস্কার কার্যক্রমে টেকনিক্যাল ও প্রয়োগিক সহায়তা, স্ট্রাকচারাল, ফায়ার এবং ইলেকট্রিক্যাল সেইফটি নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংস্কার কাজে আর্থিক সহায়তাসহ সামগ্রিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এই সেল গঠন করা হয়েছিল।
আজ বুধবার সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইইউ মিশনের বৈঠকেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়ন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ মানবাধিকার রক্ষা ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গত ১৩ মার্চ বাংলাদেশে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) মিশন।
ইইউর ডিরেক্টরেট-জেনারেল ফর এমপ্লয়মেন্ট, সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইনক্লুশন (ডিজিইএমপিএল) এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক জর্ডি কুরেল গোটর এবং ইইউ ডিরেক্টরেট-জেনারেল ফর ট্রেড অ্যান্ড ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের চারজন কর্মকর্তাও এতে অংশ নেন।
বিকেএমইএ'এ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামিম এহসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা আমাদের অগ্রগতির চিত্র প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেছি। যে সব জায়গায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি, তা তুলে ধরার পাশাপাাশি কেন হয়নি, তাও ব্যাখ্যা করেছি।"
কোভিড-১৯ এর কারণে অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়ে প্রতিনিধিদল একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিকেএমইএ'র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, মহামারি তাদের কাজ থামাতে বাধ্য করেছে।
"আমরা আশা করি এ বছরের মধ্যেই শ্রম আইন তৈরির কাজ শেষ হবে, আইনের সংশোধনীও শিগগিরই শুরু হবে। পাশাপাশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল সম্পর্কির আইন সংশোধনীর কাজ চলছে,"
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে অস্ত্রবাদে সকল পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ইইউ ঘোষিত চলমান জিএসপি স্কিমের মেয়াদ ২০২৩ সালেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের প্রথম দিন থেকে নতুন জিএসপি স্কিম চালু হতে যাচ্ছে।
একই দিনে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সঙ্গেও দেখা করেন প্রতিনিধিদল। বৈঠকে শ্রমিক নেতারা জানান, কারখানাভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে অনেকগুলোই ছিল হলুদ ট্রেড ইউনিয়ন ছিল। অর্থাৎ এসব ইউনিয়ন শ্রমিকদের পরিবর্তে কারখানার মালিকরা পরিচালনা করেন।
তৈরি পোশাক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানান শ্রমিক প্রতিনিধিরা।