২০২২ সালের মধ্যে বিদেশে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

টিবিএস ডেস্ক
03 March, 2022, 08:15 pm
Last modified: 03 March, 2022, 08:45 pm
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান, নীতি ও গবেষণা শাখার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ায় এখন ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রম রপ্তানির কথা ভাবছে বাংলাদেশ।

২০২২ সালের মধ্যে বিদেশে ১০ লাখ কর্মী পাঠানো এবং শ্রম অভিবাসন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতা আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে বাংলাদেশ। শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে আরব নিউজ। দেশজুড়ে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রসারের ফলে দ্রুতই টার্গেট পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

এই মুহূর্তে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। এদের বেশিরভাগেরই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। পোশাক শিল্পের পর অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়, শুধুমাত্র ২০২১ সালেই দেশে ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন অভিবাসীরা।

গেল সপ্তাহে আরব নিউজকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান, নীতি ও গবেষণা শাখার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, "বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও ১০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এই খাতে কি কি সুযোগ সহজলভ্য আছে তা খুঁটিয়ে দেখছি আমরা।"

গত বছর কোভিড-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ থাকায় খুব বেশি শ্রমিক রপ্তানি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চাইতে দ্বিগুণ।

দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পন্ন করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

কাদের বলেন, "এই মুহূর্তে বিশ্বের কোনো দেশই দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া ছাড়া কোনো অভিবাসী প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যেহেতু আমরা টিকাদানের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাইলফলক স্পর্শ করেছি, তাই এটি অবশ্যই বিশ্ববাজারে অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের দরজা খুলে দিবে।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকাদানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ২১ কোটি ডোজ কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। গত মাসে এই টিকাদান কর্মসূচির গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এপ্রিলের প্রথম দিকেই দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ পূর্ণ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পন্ন করবে।

কাদের আরও জানান, টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ায় এখন ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রম রপ্তানির কথা ভাবছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, "ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে আমরা অভিবাসী শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে গ্রিসের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যা আমাদের মানবসম্পদ রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই মুহূর্তে আমরা ইউরোপের অন্যান্য দেশেও সুযোগ তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা করছি।"

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবে কর্মরত আছেন প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি। গত বছর আরব অঞ্চলের এই দেশটি জানায়, তাদের মোট অভিবাসী শ্রমিকের ৭৫ শতাংশই বাংলাদেশি। কিন্তু বর্তমানে অন্যান্য দেশ থেকেও শ্রমিকেরা সৌদি আরবে আসতে থাকায় দেশটির শ্রমবাজার ক্রমেই বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। এর পরপরই অভিবাসীদের জন্য নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুইটিং এজেন্সিস-এর সাবেক মহাসচিব আলি হায়দার বলেন, "আমাদের প্রচুর মানবসম্পদ রয়েছে যা অন্য অনেক দেশের নেই। এখান থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে চাইলে আমাদের আরও বেশি দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের দেশভেদে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।"

দেশের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাক এর মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও সেবাদানকারীর পদগুলোতে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। তাই সরকারের উচিত এই সকল খাতে মনোযোগ দেওয়া।

তিনি বলেন, "কোভিড টিকাদানের দিক থেকে আমরা এখন অনেক এগিয়ে গেছি এবং বিশ্ববাজারে আমাদের শ্রমের চাহিদা রয়েছে। তাই আমাদের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।"

সূত্র: আরব নিউজ 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.