এবার শাবি-র এক সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি, নতুন ৪ জন নিয়োগ

বাংলাদেশ

সিলেট প্রতিনিধি
16 February, 2022, 05:30 pm
Last modified: 16 February, 2022, 05:31 pm
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত আলাদা অফিস আদেশে সহকারী প্রক্টর পদে নতুন নিয়োগ ও একজনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় বুধবার।

প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন আনার পর এবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সহকারী প্রক্টর পদে নতুন আরও ৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত আলাদা অফিস আদেশে সহকারী প্রক্টর পদে নতুন নিয়োগ ও একজনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় বুধবার।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন বলে অফিস আদেশে বলা হয়েছে।

অফিস আদেশে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনিয়া মিজান চৌধুরীকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অব্যাহতি প্রদান প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বুধবার বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রুটিন ওয়ার্ক। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে আরও  ৪ জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নতুন চারজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়ায় বর্তমানে শাবির প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সংখ্যা ১২ জন।

সহকারী প্রক্টর পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাভেদ কায়সার ইবনে রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহেলী পারভীন।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রক্টরিয়াল বডিসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার অপসারণ দাবি করে আসছেন শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাবি প্রক্টর ড আলমগীর কবিরকে সরিয়ে নেয়া হয়। এর আগে সরানো হয় ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে। তবে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ইস্যুটি এখনও সুরাহা হয়নি।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিতের পর মঙ্গলবার থেকে শাবিতে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে হল।

এছাড়া আজ থেকে শুরু হয়েছে স্নাতক প্রথম বষের্র পঞ্চম ধাপের ভর্তি কার্যক্রম।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল খুলে দেওয়া হয়। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু হতে পারে।

গত ১৬ জানুয়ারি জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও পরদিন দুপুর থেকে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেন উপাচার্য। ওই দিন থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। হল ছাড়ার নির্দেশনা অমান্য করে হলেই অবস্থান করেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সর্বশেষ অফিস করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন। ১৬ জানুয়ারি বিকেল কার্যলয় থেকে বের হওয়ার পর আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওইদিন শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে উপচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। ওই রাত থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারি থেকে সেখানে অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এরপর উপাচার্যের বাসার সামনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে ভেতরে লোকজনের প্রবেশ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। একদিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন তারা। তালা ঝুলিয়ে দেন উপাচার্যের কার্যালয়েও।

২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। ওইদিনই উপাচার্যের বাসার সামনের ব্যারিকেড তুলে নেন তারা। তবে এরপরও বাসায়ই ছিলেম উপাচার্য।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি ক্যাম্পাসে এলে ওইদিন ২৬ দিন পর বাসা থেকে বের হয়ে কার্যালয়ে এসে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য।  বৈঠকে উপাচার্যকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী।

এদিকে, শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানে উপাচার্যের বিষয়ে তাদের আপত্তির বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করার আশ্বাস দেন দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রীর এই আশ্বাসের পর শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শনিবার দুপুরে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন উপাচার্য।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.