বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী 'বউ মেলা', যেখানে পুরুষদের আসা বারণ
প্রায় তিন দশক ধরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বউ মেলা। এই মেলায় বিভিন্ন বয়সী নারীরা ঘুরতে আসেন, করেন পছন্দসই কেনাকাটা। শুধু তাই নয়, মেলার অনেক বিক্রেতাও নারী। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে দিনব্যাপী এ মেলায় প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনেন নারীরা। ৩০ বছর ধরে শুধু নারীদের জন্য এমন ভিন্নধর্মী মেলা হয়ে আসছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়।
বউ মেলার নিজস্ব ইতিহাসও রয়েছে। প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। একসময় সে জায়গায় আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে জায়গাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসীপূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। সমাগত হয় দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। এই মেলায় নারীরা স্বতফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারত না বলেই বউ মেলার প্রচলন শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতি নদীর তীরে মেলার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই আশপাশের গ্রামের নারীরা হরেক রকম জিনিস কিনতে মেলায় আসতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, গাবতলী উপজেলা ছাড়াও পুরো বগুড়ার নারীরা মেলায় কেনাকটা করতে আসেন। অধিকাংশ নারীই নিজেদের ব্যবহারের জন্য কসমেটিক্স ও ইমিটেশনের গয়না কেনেন।
এছাড়া মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের নারীরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাও মুখরিত হয়ে ওঠে। মেলা ঘিরে পুরো উপজেলাজুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নারীদের প্রসাধনী সামগ্রী ছাড়াও মেলায় রয়েছে ছোটদের খেলনা আর গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের স্টল। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকান।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামগুলোর বাড়ি বাড়ি শুরু হয় উৎসব। প্রতিটি বাড়িতে বউ-জামাই বেড়াতে আসেন। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজনকেও নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে আনা হয়।
শ্রাবণী আক্তার নামে এক গৃহবধূ মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, "আমার বিয়ে হওয়ার পর থেকে প্রতিবার এ মেলাতে এসেছি। এটা শুধু মেলা নয়, উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে আনা হয়।"
তিনি জানান, ইমিটেশনের গয়নাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে মেলায় এসেছেন।
মেলায় বান্ধবীদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছেন সুমাইয়া নামে এক কিশোরী। তিনি বলেন, "বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে চুরি ও ইমিটেশনের গয়না কেনার জন্য মেলায় এসেছি। আমরা সবাই মিলে অনেক মজা করছি।"
বউ মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জানান, "এবার মেলায় ২০০টি স্টল (দোকান) বসেছে। এগুলো নারীদের প্রসাধনী, ছোটদের খেলনা ও ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। এবারের বউ মেলা ৩০ তম। মেলায় কোনো পুরুষ আসতে পারেন না। এটা শুধু নারীদেরই মেলা। আগের দিন হয়ে যাওয়া পোড়াদহ মেলায় নারীরা সাধারণত আসতে পারেন না। একারণে তাদের কথা চিন্তা করেই বউ মেলার আয়োজন করা হয়। পুরুষবিহীন মেলাতে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দমতো সামগ্রী কিনছেন। সন্ধ্যায় মেলা শেষ হবে।"
তিনি আরও জানান, "প্রতিবছর মেলায় পাঁচ লাখ টাকার মতো বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে।" এবারও সমপরিমাণ টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।