বগুড়ায় শিয়ালের আক্রমণে আহত ৩০, গ্রামবাসীর পাহারা 

বাংলাদেশ

বগুড়া প্রতিনিধি
08 February, 2022, 09:55 pm
Last modified: 09 February, 2022, 02:15 pm
গ্রামের ঝোঁপঝাড়ে ও জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা শিয়ালগুলো হঠাৎ করেই মানুষ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এলাকাবাসী ইতোমধ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ৪টি শিয়াল মেরে ফেলেছে বলেও জানা গেছে।
লাঠিহাতে গ্রামবাসী/ ছবি- টিবিএস

বগুড়ার শাজাহানপুরের দুই গ্রামে শিয়ালের আক্রমণে অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে এখন লাঠি নিয়ে গ্রামবাসীরা পাহারা দিচ্ছেন এলাকা।

গত চারদিন ধরে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউপির ক্ষুদ্র ফুলকোর্ট ও রামপুর গ্রামে শিয়ালের আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের ঝোঁপঝাড়ে ও জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা শিয়ালগুলো হঠাৎ করেই মানুষ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অনেকজনকে ইতোমধ্যেই কামড়ে দিয়েছে শিয়ালগুলো। এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ৪টি শিয়াল মেরে ফেলেছে বলেও জানা গেছে।

উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট ও রামপুরে গত চার দিন ধরে এমন অবস্থা চলছে।

গ্রামবাসীরা জানায়, সোমবার ভোরে ফুলকোর্ট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনজন। পথে হঠাৎ কয়েকটি শিয়াল ছুটে এসে তাদেরকে আক্রমণ করে। এ সময়  তিনজনই শিয়ালের কামড়ে আহত হন।

আহত ওই তিনজন হলেন- সাইদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, আব্দুর রহমান।

একই রাতে ফুলকোর্ট গ্রামের চা স্টলে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। সেখানেও একইভাবে কয়েকটি শিয়াল ছুটে এসে তিনজনকে কামড়ে দেয়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিয়ালগুলো পালিয়ে যায়।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় এশার নামাজের পর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত বাড়ি ফেরার সময় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়।

সিফাত জানায়, "আমি একা বাড়ি ফিরছিলাম। এমন সময় একটি শিয়াল এসে লাফিয়ে আমার পেটের ডানপাশে কামড় দেয়। পরে চিৎকার দিলে শিয়ালটি পালিয়ে যায়।" তিনি ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন বলে জানান। 

দিনের আলো নিভে গেলেই যেকোনো প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কেউ একা বের হতে পারছেন না। কয়েকজন একত্র হয়ে বের হতে হচ্ছে। তাও লাঠি হাতে নিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতিসহ বাইরে বের হচ্ছেন তারা। গ্রামবাসীর চোখে-মুখ আতঙ্কের ছাপ। তাদের ওপর যেকোনো সময় হতে পারে আক্রমণ।

গ্রামবাসীদেরকে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম নয়ন।

ফুলকোর্ট গ্রামের বাসিন্দা আব্দুন নূর মুন বলেন, "চারদিন ধরে ফুলকোর্ট ও রামপুর গ্রামে শিয়াল আক্রমণ করছে। দিনের আলো নিভে গেলেই তারা প্রবেশ করে লোকালয়ে। যখন যাকে সামনে পায় কামড়ে দেয়। তাদের মোকাবেলা করতে গ্রামের সবাই এখন হাতে লাঠি নিয়ে বের হয়।"

শিয়ালের কামড়ে আহত ব্যক্তি/ ছবি- টিবিএস

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম নয়ন জানান, শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এছাড়াও অনেকে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, "গ্রামবাসীকে হাতে লাঠি রাখার কথা বলে দেয়া হয়েছে। তারা সন্ধ্যার পর ও ভোরে বাড়ি থেকে বের হলে হাতে লাঠি নিয়েই বের হন। এছাড়া বর্তমানে আমাদের আর কোনো উপায় নেই।"

তিনি আরও জানান, গ্রাম দুটির অনেক ঝোঁপঝাড় ও জঙ্গল কেটে বাড়ি-ঘর বানানো হচ্ছে। ফলে খাদ্য-বাসস্থান সংকট থেকেও শিয়াল আক্রমণ করতে পারে। এছাড়াও শিয়ালগুলো জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়েছে বলেও ধারণা করছেন নজরুল ইসলাম।

হঠাৎ শিয়ালদের কেনো এই আক্রমণ? জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন মোছা. কানিস ফারজানা বলেন, "বাসস্থান ও খাদ্য সংকট থেকে শিয়ালরা মানুষের ওপর আক্রমণ করে। তবে ওই দুই গ্রামে কয়েকদিন ধরে মানুষ দেখলেই আক্রমণ করছে শিয়াল। এতে আমরা ধারণা করছি শিয়ালগুলো জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়েছে। খাদ্য-বাসস্থানের সংকট থেকে শিয়াল আক্রমণ করলেও সেটি কিছু সময়ের জন্য হয়ে থাকে, এভাবে দিনের পর দিন না।"

জানতে চাইলে বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ-উল-হক  বলেন, "যেসব প্রাণি র‌্যাবিস জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শিয়াল অন্যতম। শিয়ালের কামড়ে মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে। এই প্রাণী যেখানে কামড় দিবে সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুনাশক দিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে।'

তিনি আরও জানান, কমপক্ষে ১৫ মিনিট ক্ষতস্থানে সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে। পরবর্তীতে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে ক্ষতস্থান দেখাতে হবে।

ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হলে চিকিৎসক জানাবেন। আর যদি ভ্যাকসিনের প্রয়োজন না হয় তাহলে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করতে হবে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.