স্থাপনা নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন: ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

বাংলাদেশ

08 February, 2022, 11:15 am
Last modified: 08 February, 2022, 11:43 am
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও আবাসন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে নাগরিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দ্বিগুণ হবে।

রাজধানীতে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকেও অনুমোদন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। গত রোববার তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নগর পরিকল্পনাবিদ ও আবাসন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে নাগরিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। 

তারা বলেছেন, রাজউককে আরও জনবান্ধব করতে হবে। সেটি না হলে এই সংস্থাকে বিলুপ্ত করে সিটি কর্পোরেশনের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। একই বিষয়ে রাজউকের কাছে থেকে অনুমোদন নিয়ে আবার সিটি কর্পোরেশনের কাছে অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও একধাপ ভোগান্তি বাড়াবে।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর  সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রাজউক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। যার কাজ জনগণকে সেবা দেওয়া। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটি সেবা না দিয়ে নানানভাবে রাজধানী ও পাশ্ববর্তী এলাকার অনেক মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে শত শত অভিযোগ আছে।"

তিনি বলেন, "একটি বাড়ি বা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে যে পরিমান ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং ঘুষ দিতে হয়, তা কেউ প্রকাশ করে না। এসব ভোগান্তি শেষ করে আবার যদি সিটি কর্পোরেশনের কাছে একই কাজের জন্য যেতে হয়, তাহলে এই ভোগান্তি দ্বিগুণ হবে।" 

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরও বলেন, স্থাপনা নির্মাণে অনুমোদন দিতে এখন সরল প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন করা দরকার। সেটি না করে যদি আরও জটিল করা হয়, তাহলে ব্যাপারটি উল্টো হয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, রাজউক নিয়ে যদি সরকারের কোনো অনীহা থাকে, তাহলে সেটিকে বিলুপ্ত করা যেতে পারে। অথবা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নেওয়া যেতে পারে।

"মন্ত্রীর এই প্রস্তাব দ্বৈত করারোপের মতো অহেতুক জনগণকে অতিরিক্ত ভোগান্তির মধ্যে ফেলবে। যখন সরকার জনগণের ভোগান্তি কমাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ব্যবসায় বিনিয়োগবান্ধবতা তৈরির জন্য বদ্ধপরিকর, তখন মন্ত্রীর এরকম বক্তব্য সাংঘর্ষিক ও অবাঞ্ছিত", তিনি আরও বলেন। 

রাজধানীতে একটি আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য এখন রাজউক, ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা ওয়াসা'র মতো ১৩টি সরকারি সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র নিতে হয়। আর একটি আবাসিক প্রকল্পের জন্য ছাড়পত্রের এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭তে। 

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সভাপতি টিবিএসকে বলেন, অতিরিক্ত অনুমোদনের পদক্ষেপ সরকারের ব্যবসাবান্ধব মনোভাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, "দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে আমরা ১৩টি সংস্থা থেকে কমিয়ে ৪টি সংস্থা পেয়েছি স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত অনুমোদন ও মনিটরিংয়ের জন্য। এখন আবার নতুন করে একটি সংস্থাকে যুক্ত করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট আপত্তি আছে।"

তিনি আরও বলেন, "৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজউক কাজ করছে। তাদের যে অভিজ্ঞতা আর লোকবল রয়েছে, সে ধরনের অভিজ্ঞতা, লোকবল কোনোটিই সিটি কর্পোরেশনের নেই।" 

এ কারণে রাজউককেই কীভাবে আরও জনবান্ধব ও সেবাবান্ধব করা যায়, সে বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড (এইচএএল)-এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং  রিহ্যাবের পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন, ঢাকার নতুন ড্যাপ (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান) পরিকল্পনা নিয়ে আবাসন ব্যাবসায়ীরা ইতোমধ্যেই জটিলতার মধ্যে আছে। 

তিনি বলেন, "এরমাঝে আবার স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী অবকাঠামো নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকেও অনুমোদন নেওয়া সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজধানীর সাধারণ বাসিন্দা ও আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' ছাড়া আর কিছুই নয়।" 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.