মেট্রোরেল কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে আবাসন ও বিজনেস হাব

বাংলাদেশ

28 January, 2022, 04:15 pm
Last modified: 29 January, 2022, 01:51 pm
মেট্রোরেল চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নাগরিকদের খরচ ও সময় অনেকাংশে কমে আসবে। আবার একে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মস্থলও তৈরি হবে।

রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল-৬ চালু হলে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে। সেইসাথে নাগরিক সুবিধাও বাড়বে বহুলাংশে।  

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাজধানীতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় সংখ্যায় নাগরিকদের খরচ ও সময় অনেকাংশে কমে আসবে।

এছাড়াও উড়ালপথে ট্রেনযোগে এই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর উত্তরা ১২, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর সেক্টর, মিরপুর ১১, মিরপুর ১২ ও পল্লবী এলাকায় গড়ে উঠছে আবাসন হাব, বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ নাগরিক জীবনের নানা প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান।

এসব কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মস্থলও তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, যোগাযোগের জন্য কম খরচ ও কম সময় নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

রেল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী, মিরপুর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে ট্রেন। ২০২৪ সালে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ নামের এই প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, এমআরটির প্রথম লাইনের কাজ শেষ হলে মোট দেশজ উৎপাদন প্রায় এক শতাংশ বাড়বে। একই সাথে বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে প্রকল্প এলাকায়।

তিনি বলেন, এমআরটির কাজ শুরু করার সময় দিয়াবাড়ি এলাকা খুবই নিচু, ডাম্পিং এরিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে জনবসতিও ছিল খুবই কম। এখন এই এলাকা ঘিরে আবাসন হাব গড়ে উঠছে, সেই সাথে নানা ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রেল প্রকল্পের কাজের গতির সাথে সাথে নতুন এসব আবাসন প্রকল্প, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। 

এছাড়াও রেল রুটের ১৬টি স্টেশনকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ছোট-খাটো অনেক ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়াও চলছে চোখে পড়ার মতো।

নতুন আবাসন হাব

মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে মিরপুর ১১, ১২, পল্লবী, দিয়াবাড়ি (উত্তরা ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর সেক্টর), পঞ্চবটি, উত্তরা ওয়েস্ট এভিনিউ এবং বিরুলিয়া এলাকায় শতাধিক নতুন আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং প্রতিষ্ঠান। আবাসন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন এসব আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর নতুন করে লক্ষাধিক লোক বসবাসের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এসব প্রকল্পে।

দিয়াবাড়ি এলাকায় উল্লেখযোগ্য আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে রূপায়ন-উত্তরা সিটি প্রকল্প। প্রায় ৩ একর জমির ওপর এই প্রকল্পের কাজ চলছে। যেখানে ছোট-বড় ১০০টি এপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে।

রূপায়নের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবীব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন অবস্থায় বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সবগুলো অ্যাপার্টমেন্ট ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে নেওয়া এই প্রকল্পের ফ্ল্যাট নির্মাণের আগেই বিক্রয় শুরু হয়। তখন ৭ হাজার টাকা দরে পার স্কয়ারফুট বিক্রয় শুরু হলেও গত বছর প্রায় ৯৫০০ টাকা পার স্কয়ার ফুট দামে বিক্রয় হয়েছে। শতাধিক অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে গত বছরই বিক্রয় হয়েছে ৪০টি। বাকি ৬০টি বিক্রি হয়েছে আগের দুই বছর।

দিয়াবাড়ি এলাকায় আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে গ্রীন প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, এ.কে. হাউজিং লিমিটেড, অ্যাডোর ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, জমজম প্রপার্টিজ লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন হোল্ডিংস লিমিটেড সহ প্রায় ৩০ আবাসন প্রকল্প।

দিয়াবাড়ির পশ্চিমপাশে উত্তরা ওয়েস্ট এভিনিউ এলাকায় নতুন প্রায় ১০টি আবাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উইনার প্রপার্টিজ লিমিটেডের দুইটি প্রকল্প, বিবেক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রকল্প, ভেনচুরা প্রপার্টিজ লিমিটেডের দুইটি প্রকল্প। এই দশটি প্রকল্পে প্রায় ২০০ এর বেশি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। 

পল্লবী, মিরপুর-১১ ও ১২ এলাকায় প্রায় ৩০টি নতুন প্রকল্প চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও বিরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড ও ঢাকা বেটা ক্লাব এলাকার পূর্বপাশে আরও ২০টি আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান।

মিরপুর-১১ এর মাটিকাটা এলাকায় চার একর জমির ওপর আরবান ডুয়েলিং লিমিটেডের পিস কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি।

আরবান ডুয়েলিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে এজন্য রাজধানীর কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বসবাসের লক্ষ্যে মেট্রোরেলের রুট কেন্দ্র করে আবাসন চাহিদা তৈরি হয়েছে। 

তিনি বলেন, পল্লবী, মিরপুর-১১, ১২, মাটিকাটা ও কালশি এলাকায় প্রায় ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কোম্পানীগুলো ব্যবসাও ভালো করছে।

উত্তরা-দিয়াবাড়ি এলাকায় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সাবেক জেলা জজ নুরুল হক বলেন, "রাজধানীর ধানমন্ডিতে ভাড়া বাসা থেকে উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া বেশ কষ্টকর ব্যাপার। মিরপুর ১১ নম্বরে রূপায়নের একটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ বছরের জুন মাসে ফ্ল্যাটে উঠবো।"

"দিয়াবাড়ি এলাকায় বিশ্বদ্যিালয়ের মূল ক্যাম্পাসে মেট্রোরেলে মিরপুর থেকে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। তাই এই এলাকায় বসবাসের ব্যবস্থা করেছি। আশা করি ঝক্কি-ঝামেলামুক্তভাবে চলাচল করতে পারবো", যোগ করেন সাবেক এই জেলা জজ।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন, শুধু কোলাহলমুক্ত আবাস নয়, এসব আবাসন কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে এইসব এলাকায়। কারণ বাড়িগুলোর ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীর দরকার। এসব কাজের জন্য কমপক্ষে ১০ হাজার লোক প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, শুধু মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা ও দিয়াবাড়ি এলাকায় নয়, মেট্রোরেল রুটের স্টেশনগুলো কেন্দ্র করেও অনেক নতুন আবাসন প্রকল্প হচ্ছে। সব মিলিয়ে এসব এলাকায় ১ লাখ লোকের আবাসনের সংস্থান হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের ১ নম্বর স্টেশনের পাশে ইতোমধ্যে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির মূল ক্যাম্পাস করা হয়েছে যেগুলোতে এখন নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম চলছে।

বিরুলিয়া এলকায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) একটি ক্যম্পাস, পল্লবী এলাকায় সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির (এসইউ) ক্যাম্পাস, উত্তরা ওয়েস্ট এভিনিউ এলাকায় প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাস, বিরুলিয়া এলাকায় লিডিং ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি এবং ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বড় একাডেমিক ভবন করা হচ্ছে।

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিক উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, মেট্রোরেল চালু হলে এসব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজধানীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীদের এসে ক্লাস করতে সুবিধা হবে। শিক্ষকরাও সেই সুবিধা পাবেন। এছাড়াও ১০-১৫ বছর আগে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই এলাকাগুলোতে জমি কেনায় এখনকার অনেক কম বাজারদরে জমি কেনার সুযোগ পেয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসগুলোর পরিসরও বেশ বড়।  

তিনি বলেন, এখন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেগুলোতে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু হলে সেগুলোতে আরও প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। 

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এসব এলাকায় নামিদামী অনেক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানের স্কুল-কলেজ করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে উত্তরা ওয়েস্ট এভিনিউ এলাকায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের একটি শাখা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১৫ নম্বর সেক্টরে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শাখা করা হচ্ছে। এছাড়াও আরো ৮টি স্কুল ও কলেজ করা হচ্ছে দিয়াবাড়ি এলাকাকে কেন্দ্র করে।

দ্রুত ও সাশ্রয়ী যাতায়াত

মেট্রোরেল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের প্রথম এই রেল ব্যবস্থায় প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ২৪ সেট ট্রেন চলবে। যাতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ যাত্রী যাওয়া-আসা করবে। প্রতিটি স্টেশনে আড়াই থেকে তিন মিনিট পরপর ট্রেন থাকবে। দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়া বা আসার জন্য ৩৮ মিনিট সময় লাগবে। এখন মোটরযানে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় ব্যয় হয়।

প্রতি এক কিলোমিটার পরপর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একটি করে স্টেশন হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়াবাড়ি এলাকায় তিনটি স্টেশন হচ্ছে। দিয়াবাড়ি স্টেশনগুলো দিয়ে উত্তরা এলাকার প্রায় ২ লাখ যাত্রী যাওয়া-আসা করবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রেল ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালু হলে রাজধানীর নাগরিকদের বিশেষ করে উত্তরা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাঁচবে এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।

এমএএন সিদ্দিক বলেন, দিয়াবাড়ি থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত মতিঝিল পৌঁছানো যাবে মাত্র ৩৮ মিনিটে। যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনায় দিয়াবাড়ি এলাকায় জনবসতি বাড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যবসা ও কারখানা

মিরপুর ১১, ১২, পল্লবী এলাকা এবং দিয়াবাড়ির পাশ্ববর্তী পঞ্চবটি, উত্তরা ওয়েস্ট এভিনিউ ও বিরুলিয়া এলাকায় অনেক নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস কারখানা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খাবার প্রস্তুতকারীসহ নানা প্রতিষ্ঠান।

দিয়াবাড়ি সীমানার পশ্চিম পাশে বিরুলিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান সুজন টিবিএসকে বলেন, রাজধানী ও গাজীপুর এলাকায় গার্মেন্টসসহ নানা প্রতিষ্ঠান বেশি। কারণ, সহজ যোগাযোগ এবং শ্রমিকের সহজলভ্যতা।

মেট্রোরেলে যোগাযোগ সহজ হবে। এই কারণে দিয়াবাড়ি সংলগ্ন বিরুলিয়া ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এই এলাকায় জমির দামও এখন অনেক বেড়েছে।

দিয়াবাড়ি উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে মিরপুর রোড সংলগ্ন এহসান ফ্যাশনের একটি পোশাক কারখানার কাজ চলছে। এহসান ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিউল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমির ওপর আট তলা ভবন হচ্ছে। গাজীপুরে এই প্রতিষ্ঠানের একটি ছোট কারখানা আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে এবং শ্রমিকও পাওয়া যাবে, সেই চিন্তা থেকেই এখানে একটি বড় কারখানা করা হচ্ছে। আগমী বছরের শুরুতেই এই কারখানা উৎপাদনে যাবে। যেখানে প্রায় এক হাজার পোশাক শ্রমিকের কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।

একই এলাকায় নিউ হাসান নামের একটি জুতা কোম্পানীর কারখানা গত বছরের জুন নাগাদ চালু হয়েছে। যেখানে কাজ করে প্রায় ৬০ জন শ্রমিক।

উত্তরা ৩য় আবাসন প্রকল্পের অ্যাপার্টমেন্ট মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি হামিদুর রহমান বলেন, এই এলাকায় আবাসন, ব্যবসা ও কারখানায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মস্থল তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও এই এলাকাকে কেন্দ্র করে ৫টি বড় বেসরকারি হাসপাতালও হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতাল করা হয়েছে দিয়াবাড়ি উত্তর এলাকায়। গ্যালাক্সি গ্রুপের একটি বড় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হচ্ছে দিয়াবাড়ি সংলগ্ন বিরুলিয়া এলাকায়। 

অপরিকল্পিত নগরায়ন নয়

পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, "রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটাতে মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পটি বেশ ভালো ভূমিকা পালন করবে। তবে এই রেল লাইনকে কেন্দ্র করে যেভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।"

তিনি বলেন, "উন্নয়ন হবে। তবে সেই উন্নয়নকে টেকসই করতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, আবাসনসহ সকল স্থাপনা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা জরুরি। এছাড়াও রেলের ১৬টি স্টেশনকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের ছোট ব্যবসা গড়ে উঠবে। সেগুলোর কারণে যেন ওইসব এলাকা বিচরণ ও বসবাসের অনুপযোগী যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।"

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "এই উন্নয়ন অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। তবে কী পরিমাণ ভূমিকা রাখবে এখনই তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।" 

"তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, অনেক মানুষের বসবাসের এলাকা তৈরি হবে; লক্ষাধিক বা তার বেশি মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে", যোগ করেন তিনি। 
 
 
 
 
 
 
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.