ছয় বছরে রাজধানীবাসী বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ করেছেন মাত্র ৩৮ দিন: গবেষণা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
28 January, 2022, 09:25 am
Last modified: 28 January, 2022, 09:30 am
ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বাতাসের মান খারাপ হতে শুরু করে, যা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে।

রাজধানী ঢাকার মানুষ গত ছয় বছরের মধ্যে মাত্র ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করতে পেরেছে। বাকি দিনগুলোর মধ্যে ৫১০ দিন চলনসই মানের বায়ু, ৫৭৭ দিন সংবেদনশীল, ৪৪৩ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৩৮৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩৭ দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় তথ্যগুলো উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত 'বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ' দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা)  আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।

কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা ঢাকার বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালে অর্থাৎ গত ৬ বছরের জানুয়ারি মাসের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯.৫২ তে এসে দাঁড়িয়েছে; যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।

জানুয়ারি মাসে ঢাকার মানুষ একদিনের জন্যও ভালো বাতাস পান নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাতাসের মান বেশিরভাগ সময় 'অস্বাস্থ্যকর' থেকে 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' অবস্থায় ছিল এবং গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বাতাস পেয়েছে।

ক্যাপসের গবেষণার তথ্যমতে, ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বাতাসের মান খারাপ হতে শুরু করে, যা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। গত ছয় বছরে বাতাসের মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১টায় বায়ুমান সূচক থাকে ১৬২; যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ। রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে, যার কারণে এইসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয়।

ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের গবেষণার তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের পরিচালক জানান, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম)। এর পরের অবস্থানে ছিল শাহবাগ (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)।

গবেষণার তথ্যমতে, ২০২১ সালে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর গড় পরিমাণ ছিল যাথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১,৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম; যা নির্ধারিত মান মাত্রার প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি।

ক্যাপসের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী— অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ (৩০%) থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয়। এরপরেই আছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানা (২৯%), যানবাহনের কালো ধোঁয়া (১৫%), আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণ (১০%), গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক (৯%) এবং বর্জ্য পোড়ানোর (৭%) কারণে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে।

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা নগরের বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার পরও এ ব্যাপারে নাগরিকদের অবগত না করায়, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা আছে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ঢাকা শহরের বায়ু সম্পর্কে যথাযথ তথ্য যথাসময়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বায়ু দূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার, অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়ানো, ঢাকার আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করা, নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করাসহ ১৫টি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ তুলে ধরা হয়।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.