অপরিকল্পিত ইউ-টার্ন বাড়াচ্ছে যানজট

বাংলাদেশ

19 January, 2022, 03:15 pm
Last modified: 19 January, 2022, 03:16 pm
ট্রাফিক ডিভিশনের কর্মকর্তাদের দাবি, ইউ-টার্নগুলো নির্মাণের আগে ডিএনসিসি তাদের পরামর্শ নেয়নি।

যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই রাজধানীর তেজগাঁও থেকে উত্তরা রোড পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্টে নির্মিত ইউ-টার্ন যানজট বৃদ্ধি করছে। ফলে ইউ-আকৃতির গাড়ি টার্নের উপযোগী সংযোগগুলোর কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও তা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। 

রবিবার সকাল ১১ টা ১০ মিনিটের দিকে দেখা যায়, মহাখালী ফ্লাইওভার এবং আমতলী ছেড়ে আসা গাড়িগুলো চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় পৌঁছে শম্বুকগতিতে চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই গাড়ির লম্বা লাইন ফ্লাইওভারের অধিকাংশ অঞ্চল এবং আমতলী ইন্টারসেকশনেও ছড়িয়ে পড়ে। 

ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন (ডিএনসিসি) ইউ-টার্ন তৈরি করায় চার লেনের এ সড়কটি এখানে এসে আড়াই লেনের সমান হয়েছে। এতে একদিকে টার্ন করতে সুবিধা হলেও অন্যদিকে ভোগান্তি বেড়েছে। 

রাস্তার অপর পাশে মহাখালীমুখী পরিবহনগুলোকেও একই ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে দেখা গেছে। 

"এই রুটে অধিকাংশ সময়ই গাড়ির চাপ থাকে, এর ফলে এভাবে থেমে থেমে যেতে হয়। এছাড়া কেউ ভুল করে ডান লেনে চলে আসলে টান নেয়া গাড়িসহ অন্য গাড়িগুলোকে থেমে যেতে হয়," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান এখানে কর্মরত একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।
 
"এই ইউ-টার্ন তৈরির আগে গাড়িগুলো তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর পর ছাড়তে হতো। কিন্ত এখন কোন সিগনাল ছাড়াই চলছে," তিনি যোগ করেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান ট্রাফিক ডিভিশনের এসি (মহাখালী জোন) আশফাক আহমেদ জানান, "এই রুটে কখন কেমন চাপ থাকে বা ইউ-টার্নের নকশা কেমন করলে সেটা যথাযথ হবে এসব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে ডিএনসিসি কোনো আলোচনা করেনি। তারা তাদের মতো করে নকশায় সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে মূল সড়ক সংকুচিত করে ফেলেছে।"

তিনি আরো বলেন, ডিএনসিসি নকশা অনুযায়ী লকডাউনের সময় আমতলী ক্রসিং বন্ধ ছিলো। গুলশান-১ এর রুটে যেতে চেয়ারম্যানবাড়ী থেকে ঘুরে আসতে হতো।

"কিন্ত লকডাউনের পর পরিবহনের চাপ বাড়লে চেয়ারম্যানবাড়ীর ইউ-টার্ন ঘুরে আসতে ব্যাপক জট লেগে যেতো। এরপর আমতলী ক্রসিং খুলে দেয়া হয়," তিনি জানান। 

এছাড়া নাবিস্কো ও মহাখালী বাস টার্মিনালের পাশেও একই নকশার ইউ-টার্ন তৈরি করেছে ডিএনসিসি। মহাখালী বাস টামিনালের অধিকাংশ বাস নাবিস্কো এলাকার ইউ-টার্ন থেকে ঘুরে যায়। তুলনামূলক সরু এই সড়কে ইউ-টার্ন নির্মাণের পর দুপাশের লেনের জায়গা অনেকটা কমে গেছে। এজন্য এই ইউ-টার্নও সরু করে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বড় পরিবহনগুলোর টার্ন করতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ইসলাম পরিবহনের একটি বাসের চালক কবির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এই ইউ-টার্ন ছোট গাড়ির জন্য ঠিক আছে। তবে আমাদের বড় গাড়ি ঘোরাতে অসুবিধা হয়। রাস্তা বড় না করে এটা তৈরি করা ঠিক হয়নি।"

একই নকশায় রাজধানীর তেজগাঁও থেকে উত্তরা পযন্ত ইউটান নির্মান করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী ও নাবিস্কো মোড় ছাড়াও রয়েছে উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, উত্তরার র‌্যাব-১ অফিস, ফ্লাইং ক্লাব কাওলা, বনানী ওভারপাস, বনানী আর্মি স্টেডিয়াম, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সাতরাস্তার বিজি প্রেস এলাকায়।

ডিএনসিরি এই ইউ-লুপ প্রকল্প ২০১৬-এর ডিসেম্বরে শুরু হয়। একবার সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যায় বেড়ে হয় ৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এরপর প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। শুরুতেই বিজি প্রেস ও নাবিস্কোর সামনের ইউ-লুপ খুলে দেয়া হয়েছিলো। 

তখন আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় ডিএনসিসি জানিয়েছিল সব কয়টি ইউ-লুপ চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এরপর উত্তরা এলাকার কয়েকটিতে রাস্তা বড় থাকায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেলেও ইউ-টার্নে কমবেশি সমস্যার কথা জানাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ ও সাধারণ চলাচলকারীরা।

এ বিষয়ে ইউ-টার্ন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক, ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে ডিএনসিসি অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ডিভিশনের এডিসি (ট্রাফিক অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. শফিকুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "ইউ-টার্নের সমস্যার বিষয়ে ডিএনসিসির সাথে আমরা কথা বলেছি। কিন্ত তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না সে বিষয়েও আমাদেরকে এখনো কিছু জানায়নি।"

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, "রাজধানীর এই প্রধান সড়কে এ ধরণের ইউ-টার্ন উপযোগী না। এ সড়কের পরিবহনের চাপসহ বিভিন্ন বিষয় পযালোচনা না করে ইউটান তৈরি করায় এখন কিছু এলাকায় এর প্রভাবে পরিবহনের জট লেগে যাচ্ছে।"

তার মতে, সাধারণত এ ধরনের ইউ-টার্ন পূর্বাচলের মতো এলাকায় আদর্শ, যেখানে পরিবহনের চাপ কম থাকে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.