আইভী ম্যাজিক দেখাল নারায়ণগঞ্জ

বাংলাদেশ

16 January, 2022, 07:55 pm
Last modified: 17 January, 2022, 02:40 pm
তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় আইভী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে কাজ করবেন। এছাড়াও তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আঁধারে মোড়ানো দিনের পর রোববার সকালে নদীবন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জ জেগে ওঠে উজ্জ্বল দিনের বার্তা ও ভোট উৎসবের আবহ নিয়ে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লাল-সবুজ শাড়ি পরা সেলিনা হায়াৎ আইভী সকালে বলেছিলেন, ভোট সুষ্ঠু হলে তার জয় প্রায় নিশ্চিত। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা আসতেই ফলে গেল তার কথা। দেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের সব রেকর্ড ভেঙে টানা তৃতীয়বার জয়ী হয়েছেন আইভী।

মোট ১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে রোববার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৬৭টি কেন্দ্রের তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আইভী ১ লাখ ৩৯ হাজার ১২৮ ভোট পেয়েছেন, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩০০ ভোট।

তবে আইভীর পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে সন্ধ্যায়ই তার শিবির বিজয় উদযাপন শুরু করে। পরে পুনরায় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী।

একসময় প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে ভোটারসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ১৭ হাজার। নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার জানান, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশ। ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬২ শতাংশ এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ছিল ৭০ শতাংশ। আগের দুই নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইভী বলেন, অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে জনগণ আমাকে আবারও নির্বাচিত করেছে। এই বিজয় নারায়ণগঞ্জের মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে কাজ করব। আমি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তাছাড়া তৈমুর কাকা যেগুলো বলেছেন, সেটাও চিন্তাভাবনা করে তার সাথে কথা বলে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করব।'

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে। তিনি ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম মেশিন ও প্রশাসনের জালিয়াতিতে পরাজিত হয়েছেন বলে দাবি করেন। 

তিনি বলেন, "এই পরাজয়কে বড় কিছু মনে করি না। নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাশে থাকায় আমি গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।"  

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে আইভী যে ম্যাজিক দেখিয়েছেন তার পেছনে ছিল একাধিক কারণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যার মধ্যে অন্যতম হলো- পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে তার সুপরিচিতি, আওয়ামী লিগের স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের সন্দেহজনক ভূমিকা, এবং আইভীর নির্বাচনী রণকৌশলের সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন।

নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আলি আহমেদ চুনকার মেয়ে আইভী। তিনি ২০১১ ও ২০১৬ সালের এনসিসি নির্বাচনে যথাক্রমে ১ লাখ ও ৭৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। 

২০১১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা শামীম ওসমানকে নির্বাচনী যুদ্ধে হারান। আর ২০১৬ সালে তার কাছে পরাজয় বরণ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাখাওয়াত হোসেন খান।   

এবারের এনসিসি নির্বাচনে ব্যতিক্রম ছিল সপ্তাহের বেশি সময় আগে থেকে ভোটের দিনপর্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশের নির্বাচনী আবহ। উৎসাহী ভোটার ও তাদের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণের আমেজের সাথে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে সব মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই পার হয়েছে ভোটযুদ্ধের বৈতরণী। গত কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সাথে যা ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.