কোভিড-১৯ রোগী বাড়লেও হাসপাতালে চাপ কম

বাংলাদেশ

12 January, 2022, 10:00 am
Last modified: 12 January, 2022, 03:01 pm
টিকা নেওয়ার কারণে সংক্রমণের হার উচ্চ হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। চার মাস পর গতকাল মঙ্গলবার দেশে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ২ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণের হার ৯ শতাংশের কাছাকাছি। তবে, আক্রান্তের হার বাড়লেও হাসপাতালে রোগীর চাপ কম।

চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেটেড হওয়ায় এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ হাল্কা হওয়ায় বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকেই সেবা নিচ্ছেন। তাই হাসপাতালের ওপর চাপ কম পড়ছে। তবে সংক্রমণ দ্রুত বাড়লে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হবে; তাই হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেনসহ প্রস্তুত রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সারাদেশে কোভিড রোগীদের জন্য ১৩ হাজার ৪২৬টি সাধারণ বেড রয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রোগী ভর্তি ছিলেন ৯২০ জন। আর ১ হাজার ২১৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৫৭ জন।

বর্তমানে কোভিড রোগীদের ৮০ শতাংশ ঢাকা শহরের। ঢাকার কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ১৫টি সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ১৪৯টি সাধারণ বেডে বর্তমানে কোভিড রোগী ভর্তি আছেন ৩৭১ জন। এছাড়া, ঢাকার ৩১টি প্রাইভেট হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১ হাজার ৪৯৭ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ১৫৩ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সংক্রমণের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার সেই তুলনায় কম। ডেল্টা বা অন্য ভ্যারিয়েন্টের সময় রোগী সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির হার যত বেশি ছিলে এখন তেমন নেই। রোগী বাড়ছেনা তা নয়, তবে কম হারে বাড়ছে।"

ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাসান আরও বলেন, "টিকা নেওয়ার কারণে সিভিয়ারিটি কম তাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে কম। এছাড়া এই সিজনে অনেক মানুষের ঠান্ডা, জ্বর হচ্ছে কিন্তু টেস্ট করছেনা। তবে অ্যাসিমটোমেটিক (লক্ষণ ছাড়া) রোগী বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়ছে। সে কারণে জনবল সংকট হতে পারে।"

মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজার ৩৯৯টি নমুনা পরীক্ষার পর দেশে আরও দু'জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৯৭ শতাংশে, যা এক দিন আগেও ছিল ৮.৫৩ শতাংশ। 

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ১০৭-এ পৌঁছেছে এবং মোট সংক্রমণের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯-এ পৌঁছেছে।

ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডাঃ এম মুশতাক হোসেন টিবিএস-কে বলেন, "ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। সংক্রমণ অনেক বাড়লে গুরুতর রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। কারণ আমাদের দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ টিকা নেয়নি। তাই দ্রুত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকার আওতায় আনতে হবে। এছাড়া, কোভিড পজিটিভ রোগীদের কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন ঠিকমত করতে হবে, যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।"

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ আহমেদুল কবির টিবিএস-কে বলেন, "আমরা হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন প্রস্তুত করছি। দুটি ফিল্ড হাসপাতালও রেডি আছে। ১৩ তারিখ থেকে বিধিনিষেধ কঠোর করা হলে সংক্রমণের গতি কমানো যাবে, এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে।" 

এছাড়া, সবাইকে টিকা নেওয়া ও মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.