৫০ বছরের যাত্রা: দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে পারেনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭২ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি)। তবে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরেও এটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বলেই পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মত।
গত এক দশকে দেশের অভ্যন্তরে পর্যটনের প্রসার ঘটলেও বাংলাদেশ এখনও বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে গণ্য নয় বলে অভিমত তাদের।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা), বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান শহীদ হামিদ টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, পাকিস্তান পর্যটন কর্পোরেশনের (পিটিসি) অধীনে জাতীয় পর্যটন সংস্থা হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিল। অথচ ৫০ বছরে পর্যটন শিল্পের বিকাশে তারা কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে পারেনি।"
৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন 'পথ চলার ৫০' শিরোনামে উদযাপন করছে।
এ উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা অনুষ্ঠান, লোগো উন্মোচন, কেক কাটা, র্যালি সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এই আয়োজনের স্টেকহোল্ডাররা দেশে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বিপিসির ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (তোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, "দেশে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি পর্যটক না আসলেও অভ্যন্তরীণ পর্যটনে আমরা খুবই ভাল করেছি। এক্ষেত্রে বিপিসি'র ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।"
"সারাদেশে বিপিসির অনেকগুলো হোটেল-মোটেল রয়েছে। তারা তুলনামূলক স্বল্প মূল্যে সেবা দিয়ে থাকে, যার ফলে বেসরকারি খাতের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বেশি মূল্য বাড়াতে পারে না," যোগ করেন তিনি।
বিপিসির তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশ থেকে এক কোটির বেশি পর্যটক বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে যান।
বিপরীতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আসে মাত্র ৩ লাখ বিদেশি দর্শক।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন হলো বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।
এর নিয়ন্ত্রণাধীনে ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এনএইচটিটিআই), ডিউটি ফ্রি অপারেশনস (ডিএফও) সহ হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্তোরাঁ, পিকনিক স্পট, রেন্ট-এ-কার ও ভ্রমণ ইউনিট সারাদেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সেবা প্রদান করে আসছে।
বিপিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে বিপিসিকে একটি উন্নত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সুবিধাদি প্রণয়নে নিয়ন্ত্রিত/সহজতর করবে; আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন ও অন্যান্য সুবিধাদি গড়ে তোলা এবং তা রক্ষা করা; সহজ গমনাগমনের জন্য বাস্তব অবকাঠামো তৈরীতে সরকারকে সম্পৃক্ত করা এবং বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা; পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; কার্যকর কমিউনিটি অংশগ্রহণের মাধ্যম দারিদ্রবান্ধব পর্যটন উৎসাহিত করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, "স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যে ক্ষেত্রগুলোর উপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন, তার মধ্যে পর্যটন ছিল অন্যতম। প্রকৃতি ও মনুষ্যসৃষ্ট সকল নান্দনিক সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন'- যা এদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান।"
প্রতিমন্ত্রী বলেন, "পেরিয়ে আসা দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাসমূহে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিউটি ফ্রি অপারেশনস, রিসোর্ট, প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ইত্যাদি নির্মাণ করে পর্যটকদের মানসম্মত খাবার, আবাসন এবং নানাবিধ পর্যটন-সেবা প্রদান করে আসছে। দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকাসমূহকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতেও বিগত বছরগুলোতে যথেষ্ট অবদান রেখেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন।"
তিনি আরও বলেন, "দেশের প্রথম পর্যটন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ন্যাশনাল হোটেল ও ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউটটিও পরিচালনা করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিবছর প্রায় ১৬০০ জন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় ৬০,০০০ এর অধিক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করেছে, যারা দেশে-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে।"
সম্প্রতি কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, সেটিকে 'নিন্দনীয়' উল্লেখ করে মাহবুব আলী বলেছেন, এই ঘটনা পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিগত ১২ বছরে প্রায় ২৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পর্যটন কর্পোরেশন।
এছাড়াও দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ৩৩৫ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।